আনিসুল হকের উপস্থাপনায় বাইশ বছর আগের অসাধারণ মিউজিকাল শো ‘জলসা’

৩৪৬০ পঠিত ... ০০:৪৮, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭

এখনকার সময়ে, কত প্রযুক্তি, বড় অংকের বাজেটের সব অনুষ্ঠান হয় টিভি চ্যানেলগুলোতে। টিভি চ্যানেলও এতগুলো যে গুনে শেষ করা যায় না, চ্যানেল বদলালেই তারকার মেলা! অথচ সেই বাইশ বছর আগে যখন আমাদের জাদুর বাক্স টেলিভিশনে ছিল একটিমাত্র চ্যানেল, তখনও নির্মিত হত দারুণ সব টিভি অনুষ্ঠান, দুর্দান্ত মিউজিকাল শো! ‘জলসা’ নামের এমনই এক শো বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল ১৯৯৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপকের নামটি এই প্রজন্মের কাছে চমকপ্রদ হতেই পারে, উপস্থাপনা এবং গ্রন্থনায় ছিলেন উত্তর ঢাকার সাবেক মেয়র সদ্য প্রয়াত আনিসুল হক! ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর লন্ডনের স্থানীয় সময় ৪টা ২৩ মিনিটে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ২৩ মিনিটে পরলোক গমন করেছেন এক সময়ের এই জনপ্রিয় উপস্থাপক এবং উত্তর ঢাকার মেয়র।

ক্লাসিকাল বনাম ব্যান্ড সঙ্গীত, চিরকালীন এই দ্বন্দ্ব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছিল এই অনুষ্ঠানে। এরপর ক্লাসিকাল শিল্পীদের দিয়ে ব্যান্ড গান, ব্যান্ড শিল্পীকে দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক গানের শিল্পীকে দিয়ে নজরুল সঙ্গীত এবং গানের সঙ্গে অর্থনৈতিক-সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাব সব কিছু নিয়ে প্রবীন ও নবীনদের এমন খোলামেলা আলোচনা টেলিভিশনে দেখতে পাবার সৌভাগ্যের কথা এই যুগে কল্পনাও করা যায় না।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছিলেন- কলিম শরাফী,  মুস্তাফা মনোয়ার, খান আতাউর রহমান, আবদুল্লাহ আবু সাইয়্যীদ, নীলুফার ইয়াসমীন, সুবীর নন্দী, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সাদিয়া আফরিন মল্লিক এবং শাকিলা জাফর। ছিল জনপ্রিয় ব্যান্ড সোলস, মাইলস, রেনেসা ও ফিডব্যাক। দেড় ঘন্টার এই অনুষ্ঠানে এক ছাদের নিচে জড় হয়েছিলেন বাংলা সঙ্গীতের এমন সব স্তম্ভ!

মজার ব্যাপার হল, এখানে কেউই তাদের নিজেদের গান করেন নি। শুরুতেই রেনেসা-র নকীব খান গাইলেন রবীন্দ্রসংগীত– ‘ভালোবেসে সখী নীভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনেরো মন্দিরে।’

উপস্থাপক আনিসুল হক ছিলেন সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামায় ফিটফাট! এককালে বিটিভির তুমুল জনপ্রিয় এই উপস্থাপকের বাচনভঙ্গী এবং উচ্চারণে ছিল চিরাচরিত মুন্সিয়ানার ছাপ।

দুটি গানের শেষে সঞ্চালক আনিসুল হক মাইলসের হামিন আহমেদকে করেন দারুণ এক প্রশ্ন। প্রশ্ন ছিল, আজম খান তার ব্যান্ডের নাম দিয়েছিলেন ‘উচ্চারণ’, অথচ এখন সব ব্যান্ডের নাম ইংরেজিতে কেন?  মাইলস না হয়ে “এক ক্রোশ” কেন নয়?’

আনিসুল হক যোগ করেন, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরো আছে। আপনারা তরুণদের উচ্ছৃঙ্খল করতে অনুপ্রেরণা যোগান, সাধনাবিহীন গান করেন, বিদেশী অনুকরণে গান করেন।’ মূলত এইসব অভিযোগ সম্পর্কে ব্যান্ডগুলোর মতামত জানাই ছিল প্রশ্নের উদ্দেশ্য।

এসব নিয়ে খানিকক্ষণ খোলামেলা আলোচনা হয়। আলোচনার পরে সোলস-এর পার্থ বড়ুয়া করেন শচীন দেব বর্মণের গান ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই, সে যে ডাকাতিয়া বাঁশি’! এরপর সোলস-এর ‘এই মুখরিত জীবনের চলার পথে’ গানটি করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

তবে একজন প্রবীণ শিল্পী ব্যান্ডগুলোর পক্ষে দৃঢ় কন্ঠে কথা বলেন। পার্থ বড়ুয়ার কন্ঠে গান শুনে খান আতাউর রহমান বলেন, ‘আমি অত্যন্ত প্রীত হয়েছি। কে বলে ব্যান্ডের ছেলেরা দেশি গান গাইতে পারে না!’

মেলায় যাইরে গান নিয়ে প্রশ্ন তুলে সঞ্চালক আনিসুল হক বলেন, ‘আপনি বলেছেন ললনারা বাসন্তী রঙ শাড়ি পড়ে মেলায় যায়। কিন্তু আমার গ্রামে আমি ললনাদের তেমন ভাবে মেলায় যেতে দেখি না।’ মাকসুদ জানান, ‘গানটা ঢাকার মেলা নিয়ে গাওয়া। বটতলার মেলা টাইপের জিনিসটাকে তারা ফোকাস করেছেন।’

এরপর আনিসুক হক হামিন আহমেদকে কিছু প্রশ্ন করেন। প্রশ্ন ছিল এমন- ‘মাইলস এর রিমঝিম বৃষ্টি গানে ‘ও বেব!’ কেন বলা হয়? এটা তো গ্রামের কোন তরুণ বলে না।’

তারপর কিছু অভিযোগ ও যুক্তি শেষে সুবির নন্দী করেন ফিডব্যাকের গান।

তবে সাধনাবিহীন গান করেন এই বক্তব্যকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে শাফিন আহমেদের স্ত্রী বলেন, ‘প্রতি শনিবার আমি শাফিনের দেখা পাইনা।’ আনিসুল হক তখন রসিকতা কিংবা উস্কানিমূলকভাবে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি নিশ্চিত যে উনি গান গাইতেই যান?!’

‘আপনারা বাণিজ্যিক প্রয়োজনে গান করছেন’ এমন বক্তব্যে মাকসুদ বলেন, ‘বাণিজ্য আজকালকার পৃথিবীতে কোন অশ্লীল শব্দ হতে পারে না।’

আরও একবার তরুণদের পক্ষ নিয়ে খান আতাউর রহমান কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তরুণরা উদ্দাম নাচানাচি করে গান গাওয়াতে অসুবিধাটা কোথায়?’ কুদ্দুস বয়াতীর নাচানাচি ঐতিহ্য হলে এই ছেলেটার নাচানাচি কেন ঐতিহ্যে পরিনত হবে না, এমন সম্ভাবনার কথাও তিনি বলেছিলেন। যা আজ সত্যিই বাস্তবে পরিণত হয়েছে।

কলিম শরাফী বলেন, ব্যান্ড সংগীত যারা করছে তারা একটা এক্সপেরিমেন্টের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। এজন্যই ব্যান্ড নিয়ে এত অভিযোগ। কিছুদিন পর এটা আমাদের কাছে সহজ হয়ে যাবে।

সব শেষে কলিম শরাফী করেন রেনেসার গান- ‘আজ যে শিশু পৃথিবীর আলোয় এসেছে আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই।’

একটু সময় করে দেখে নিতে পারেন আনিসুল হকের উপস্থাপনায় এই দারুণ অনুষ্ঠানটি

৩৪৬০ পঠিত ... ০০:৪৮, ডিসেম্বর ০১, ২০১৭

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top