টাকের কর্নেল (পর্ব-৯)

৩৯ পঠিত ... ১৩ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে

ডাকসুতে ছাত্রশিবিরের ভূমিধস বিজয়ের পর জেলখানার ভেতরে কবরের নীরবতা বিরাজ করছে। ইনু বার বার নিজের চোখ দুটো হাত দিয়ে ঢেকে বলছেন, ঐ জঙ্গি এল জঙ্গি এল।

ডাক্তার তাকে দেখে নাড়ি টিপেটুপে বলেন, ওনার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছে। নবাগত আবু শহীদ সাবেক জাসদ কর্মী। তাই তিনি ইনুর পাশে বসে তাকে সাহস দেন, আমরা আছি তো ইনু ভাই। প্রতিরোধে প্রতিশোধ, জাসদ জাসদ। 

আবু শহীদকে মেনন বলেন, বামের প্রার্থী ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছে; সে সুখবরটা দিচ্ছেন না কেন!

আবু শহীদ বলেন, প্রথম আলো আর আমাদের লোকেরা বামের প্রার্থীদের এত মিডিয়া কাভারেজ দিল; তবু কাজ হলো না; পরিতাপের বিষয়।

আবু শহীদ ও মেননের ফ্যাসফেসে কন্ঠস্বর পুরো ঘরে এমন এক পরিবেশ তৈরি করে; ইনু তাতে আরও ভয় পেয়ে যান। তিনি এবার দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরেন।

পান্না ও কার্জন শ্লোগান দিতে দিতে আসে, একটা দুইটা শিবির ধরো, সকাল বিকাল নাস্তা করো।

জেলখানার ডাক্তার তাদের বলেন, প্লিজ এরকম শ্লোগান বাদ দিয়ে অন্য কিছু বলুন!

শ্যামল দত্ত মুচকি হেসে বলেন, ডাক্তার সাহেব কি জামায়াতি নাকি!

ডাক্তার উত্তর দেন, ডাক্তার হতে পড়ালেখা করতে হয় শ্যামল বাবু; পার্টি করার সময় কোথায়। এত সাংবাদিকতা না যে টেনেটুনে দুইটা পাশ দিয়ে লেগে পড়লাম পার্টির পত্রিকায় কলম ঘষতে।

অধ্যাপক কর্নেলকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে আবু শহীদ জিজ্ঞেস করেন, কী ব্যাপার ড. কলিম মহোদয় আপনি এমন চুপচাপ কেন?

অধ্যাপক কর্নেল ঘাড় চুলকে বলেন, বদরুদ্দীন উমর মহোদয়ের মৃত্যুতে মিডিয়ায় তাকে অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা জানাতে দেখে মনে হলো; আমিও অমন শ্রদ্ধার পাত্র হতে পারতাম। কিন্তু আমার ফোরটিন্থ জেনারেশনের পদ-পদবীর লোভ আমার ডিএনএ-তে থেকে যাওয়ায় প্রো-এস্টাবলিশমেন্ট হয়ে উঠেছিলাম। ফলাফল এই অশ্রদ্ধার জীবন।

মোজাম্মেল বাবু হেসে বলেন, কলিম ভাই একেই বরিশালের ভাষায় বলে লঞ্চও গেল পঞ্চও গেল।

সবাই হেসে ওঠে। কিন্তু অধ্যাপক কর্নেল বিমর্ষ হয়ে থাকেন।

একটা লাঠি হাতে শাহরিয়ার কবির আসেন, গম্ভীর মুখে বলেন, নেপালে একটা আশা জেগেছে। প্রথমে জেনজি অভ্যুত্থান ঘটালেও; সেনাপ্রধান ঠিকই খেলে দিয়েছে। জেনজির পছন্দের লোক বালেন্দ্র শাহকে বাদ দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে দায়িত্ব দিয়েছে। মোদি সামান্য ফাইন টিউনিং করে রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে পারলে; দক্ষিণ এশিয়াতে ভারত একটা জায়গা পাবে; নেক্সট স্টেপগুলো দেওবার।

আবু শহীদ বলেন, কিন্তু ভারতের অভ্যন্তরেও তো অস্থিরতা আছে! 

শাহরিয়ার কবির বলেন, ভারত আর পাকিস্তান; এই দুই জায়গায় জেনজি মুভমেন্ট হবে না। কারণ এই দুই জায়গায় বৃটিশ আমল থেকে প্রো-এস্টাবলিশমেন্ট মধ্যবিত্ত আছে। এরা নিজেরটুকু বাঁচিয়ে চলে। হয় সরকারি চাকরি কিংবা পশ্চিমে গিয়ে চাকরি করার স্বপ্ন দেখে। আর এই দুটো দেশে ধর্ম দিয়ে ক্ষমতা-কাঠামো মোহরমুখি সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখে। এগুলো হচ্ছে কোলাবরেটর তৈরির দেশ। বিপ্লব হবে কোত্থেকে!

অধ্যাপক কর্নেল মন্তব্য করেন, আর এই দুটো দেশের গোয়েন্দা সংস্থা সব সময় এস্টাবলিশমেন্টের  পারপাস সার্ভ করে। জনগণের কী হলো না হলো তাতে তাদের কিছু এসে যায় না। সেই তুলনায় শ্রীলংকা-বাংলাদেশ-নেপালের গোয়েন্দা সংস্থা আনপ্রেডিক্টেবল। এদের মধ্যে বয়সে কম যারা; তারা চট করে জনগণের পক্ষে চলে যায়।

শ্যামল দত্ত বলেন, ডাকসুতে শিবির জেতায় পাকিস্তানের জামায়াত তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে। লেঞ্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড।

অধ্যাপক কর্নেল বলেন, দিল্লিতে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিজেপির নেতারা যখন বৈঠক করেছিল; তখন অনেক বড় লেজ দেখা গিয়েছিল শ্যামল মহাশয়। ফলে আমরা যদি দুটো চোখ খুলে রাখি তাহলে জামায়াতের লেজও দেখতে পাব, আর নিজেদেরও একটা করে লেজ দেখতে পাব।

মোজাম্মেল বাবু হেসে বলেন, কলিম ভাই দেখছি সুশীল হয়ে পড়লেন!

আবু শহীদ বলেন, আমাদের আসলে অন্যের লেজ দেখার পাশাপাশি নিজের লেজটাও দেখতে হবে বাবু ভাই। লেজটা অনেক বড় নাহলে গত বছর জুলাই-অগাস্টে তরুণ প্রজন্ম দেখতে পেত না; আবার এবছর সেপ্টেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও দেখতে পেত না।

এমন সময় সুচরিতাসু এসে অধ্যাপক কর্নেলকে বলে, জেলারের কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে এসেছি, আপনি একটু বাইরে আসবেন স্যার; কথা আছে!

পুনশ্চ অতীতে সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার, ক্ষিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ের যুগে; টাক ছিল খানিকটা হাসাহাসির পাত্র। কিন্তু সমকালে পশ্চিমে হেয়ার ডু হিসেবে হেড শেভিং খুব স্টাইলিশ ফ্যাশন হিসেবে সমাদৃত। হলিউডের সুদর্শন অভিনেতা কেভিন কস্টনার থেকে জেসন স্ট্যাথাম, ভিন ডিজেল এই ফ্যাশনে নতুন মাত্রা এনেছেন। অনেক আগে টিভি সিরিজ কোজাকেও আমরা দেখেছি এই ফ্যাশনের শুরুটা। পশ্চিমা এই ফ্যাশন বাংলাদেশে প্রচলন করেছেন যারা, তাদের মধ্যে অধ্যাপক কর্নেল কলিমুল্লাহ অন্যতম। এটা তার অগ্রসর চিন্তার সূচক।

(চলবে)

অষ্টম পর্ব 

৩৯ পঠিত ... ১৩ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top