টাকের কর্নেল
(পর্ব-৮)
জেলখানায় আজ নবীন বরণ অনুষ্ঠান। লতিফ সিদ্দিকি, কার্জন ও পান্নার মতো নতুন হাসিনা পুনর্বাসন মঞ্চের লোকেরা কারাগারে এসেছেন। নবীন বরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন শাহরিয়ার কবির। কারণ তার প্রিয় বিষয় হচ্ছে সেমিনার। সেমিনার করতে গিয়ে যারা গ্রেফতার হলেন; তাদের বরণ করা তিনি কর্তব্য মনে করছেন। তিনি বলেন, মঞ্চ ৭১-এর সেমিনার করতে গিয়ে আজ তারা যেভাবে গ্রেফতার হলেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সেমিনার করতে গিয়ে একইভাবে গ্রেফতার হয়েছিলাম আমি আর আমার বন্ধু মুনতাসির মামুন, সেই ২০০১-০৬ এর কালো অধ্যায়ে। সুতরাং এটা প্রমাণ হয়ে গেলো, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে না আনতে পারলে এদেশে আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা যাবে না।
পত্রিকায় শ্যামল দত্তের ব্যাপক দুর্নীতির খবর প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি অনুসন্ধানে এও বেরিয়ে এসেছে, তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জমিও দখল করেছেন। সেই তিনিও বড় গলা করে বলেন, দেশে এখন পাকিস্তান পুনরুদ্ধার প্রকল্প চলছে, শহীদ রুমীর কসম, আমরা বাংলাদেশ পুনরুদ্ধার করব।
মোজাম্মেল বাবু চেঁচিয়ে ওঠেন, জয় বাংলা জয় হিন্দ।
অধ্যাপক কর্নেল তার বক্তব্য শুরু করেন, আমরা সবাই গ্রেফতার হয়েছি কালচারাল ফ্যাসিস্ট হিসেবে। আমি অনেক ভেবে দেখলাম, ইউটিউবে টক শো না করলে, উত্তেজিত হয়ে আগ বাড়িয়ে হাসিনা পুনর্বাসনের দৃশ্যকল্প জ্যোতিষীর মতো বর্ণনা না করলে; আজও আমি জিল্লুর সাহেবের তৃতীয় মাত্রায় গিয়ে কলম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ডিপ স্টেটের গল্প বলতে পারতাম। পান্না ও কার্জন মহোদয়ের ভুলটা ঐখানে হয়েছে। ইউটিউবে আওয়ামী লীগ ফিরে আসার পরিকল্পনা করে পরদিন উনারা পৌঁছেছেন মঞ্চ ৭১-এর সেমিনারে। ফলে দুই-এ দুই-এ চার মিলিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের দায়ে গ্রেফতার হয়েছেন। শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবুর পরিণতি দেখে আমাদের আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল।
মেনন বলেন, চারপাশে অনেক সুসংবাদ আছে। প্রকাশ্যে ভারতীয় তাঁবেদারির অভিযোগে অভিযুক্ত জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে যাওয়া তরুণ নেতা নূরকে পিটিয়েছে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। বিএনপি জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশের গ্রামের হামলা হয়েছে; কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশের গ্রামের হামলা হয়েছে। ধানমন্ডিতে যুবলীগ মিছিল করেছে। এইবার এইবার খুকু চোখ খুলল।
অধ্যাপক কর্নেল এবার কলম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলতে থাকেন, এসবই ভারতীয় সরকার রাজেশ অগ্নিহোত্রীর বাঁশীর সুরে বাজতে থাকা অর্কেস্ট্রা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বাহাত্তরের সংবিধান রক্ষা করো, চারিদিকে মব, দেশটা পাকিস্তান হয়ে গেল এসবই অগ্নিহোত্রীর গানের স্বরলিপি। এই কথাগুলো বলে ‘আমাদের লোকেরা’ তাদের অবস্থান জানান দেয়। এগুলো কোড ওয়ার্ড। এগুলো ডিকোড করলেই বুঝতে পারবেন; আমরা গন্তব্যের খুব কাছে।
সাজাহান খান, দাঁত কেলিয়ে বলেন, ধুরো মিয়া থুক্কু স্যার, আপনি কথারে এতো কঠিন কইরা ফেলেন কেন! সহজ কইরা কন।
অধ্যাপক কর্নেল অভিমান করে উঠে যাবার প্রস্তুতি নেন, সাজাহান মহোদয় আমাকে মিয়া বললেন কেন? এভাবে কোন আলোচনা করা যায় না।
কার্জন একটা সংবিধান হাতে বলেন, সংবিধানের কসম, আপনি উঠে যাবেন না স্যার।
পান্না বলেন, মব করে আমাকে গ্রেফতার করে হাতকড়া পরানো হয়েছে; এই হাতকড়ার কসম আপনি কথা বলুন স্যার।
লতিফ সিদ্দিকি বলেন, আমার মাটি আমার মা পাকিস্তান হবে না। মাটির কসম অধ্যাপক কর্নেল সাহেব আপনি বলুন।
ইনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা করতে আপনি কথা বলুন ড. কলিম।
অধ্যাপক কর্নেল হেসে বলেন, আমি একটু আগে যা বললাম, আপনারা চারজন চারটি বাক্যে সেই আমাদের লোকের সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বললেন। এবার মিডিয়া ও বিভিন্ন ফোরামের দিকে তাকান। আমাদের লোকেরা আবার দখল নিয়েছে। এখন আপনারা সবাই বলতে থাকুন, জুলাই অভ্যুত্থান বলে কিছু নেই; ওটা জঙ্গি কার্যক্রম।
শ্যামল দত্ত বলেন, জুলাই-এ রাস্তায় গিজ গিজ করছিল দাড়ি-টুপিওয়ালারা। কাজেই জুলাই অভ্যুত্থান ছিল সাজানো-গোছানো দেশটাকে তছনছ করে দেওয়ার ইসলামি ষড়যন্ত্র।
অধ্যাপক কর্নেল বলেন, ১৯৭৫ সালের পর আমাদের ২১ বছর লেগেছিল এই ন্যারেটিভগুলো প্রতিষ্ঠা করতে। ২০০১ সালের পর পাঁচ বছর লেগেছিল আমাদের এই ন্যারেটিভগুলো প্রতিষ্ঠা করতে। আর এবার চব্বিশের ৫ অগাস্টের পর মাত্র একবছর লেগেছে এই ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করতে। তার মানে আওয়ামী লীগ ও বামপন্থীদের কালচারাল ফ্যাসিজমের শক্তিমত্তা অনেক বেড়েছে।
যুবলীগের পাপিয়া উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে সামান্য মিষ্টান্ন বিতরণ করেন। সুচরিতাসু এসে অধ্যাপক কর্নেলের পাশে দাঁড়ায়। তার হাতে একগাছা রজনীগন্ধা দিয়ে গান শুরু করে,
মেঘে মেঘে অন্ধ অসীম আকাশ।
আমারি মতো কাঁদে দিশাহারা
নয়ন পুতলি চাঁদে হারায়ে
হারায়ে তারি নয়ন তারা।।
আমার ভুবন আঁধারে ভরিয়া
নয়ন মণি মোর কে নিল হরিয়া
প্রিয় নাম ধরে তারে খুঁজি দিকে দিকে
শূন্য গগনে শুধু ঝরে বারি ধারা।।
হে আলোর রাজা বল বল মোরে
মোর আঁখি পুতলি কেন নিলে হ’রে
তব উৎসব সভা হতো না কি উজল
আমার আঁখির আলো ছাড়া।।
পুনশ্চ: অতীতে সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার, ক্ষিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ের যুগে; টাক ছিল খানিকটা হাসাহাসির পাত্র। কিন্তু সমকালে পশ্চিমে হেয়ার ডু হিসেবে হেড শেভিং খুব স্টাইলিশ ফ্যাশন হিসেবে সমাদৃত। হলিউডের সুদর্শন অভিনেতা কেভিন কস্টনার থেকে জেসন স্ট্যাথাম, ভিন ডিজেল এই ফ্যাশনে নতুন মাত্রা এনেছেন। অনেক আগে টিভি সিরিজ কোজাকেও আমরা দেখেছি এই ফ্যাশনের শুরুটা। পশ্চিমা এই ফ্যাশন বাংলাদেশে প্রচলন করেছেন যারা, তাদের মধ্যে অধ্যাপক কর্ণেল কলিমুল্লাহ অন্যতম। এটা তার অগ্রসর চিন্তার সূচক।
পাঠকের মন্তব্য