পান্না খুশিতে কল কল করতে করতে আসেন, কার্জন আসেন সংবিধান দোলাতে দোলাতে। আমির হোসেন আমু জিজ্ঞেস করেন, কী নিয়া এতো খুশি তোমরা; আপা কি সীমান্ত দিয়া টুক কইরা ঢুইকা পড়ল নাকি!
পান্না বলেন, খুশির খবর দুইটা। কোনটা আগে শুনবেন আমু ভাই?
আমু একটা ড্রাই-কেকে কামড় দিয়ে বলেন, ব্রেকিং নিউজটা আগে দেও দেহি।
পান্না বলেন, আমাদের বীর যোদ্ধারা ব্রিটেনের পর এমেরিকায় ডিমযুদ্ধে জিতছে!
–দূরো মিয়া; আমরা হইলাম বন্দুক যোদ্ধা; আর তুমি আইছো ডিমযুদ্ধের গল্প নিয়া।
কার্জন বলেন, ব্রিটেন আর এমেরিকায় তো বাংলাদেশের মতো স্বাধীনতা নাই যে সেখানে বন্দুকযুদ্ধ করা যাবে। সেখানে ডিমযুদ্ধটাই লাউড। তাও থানা-পুলিশ হয় ডিমযুদ্ধের অপরাধে।
–তাইলে তো ঐখানে কোনো গণতন্ত্রই নাই; আন্ডা দিয়া কি কোনোকিছু ঠান্ডা করা যায় নাকি! ঠান্ডা করতে লাগে বরিশালের ডান্ডা। আইতে শাল যাইতেও শাল।
মেনন বলেন, আমরা জলখাবারে নিয়মিত ডিম খেতে পাই না; আর আমাদের সঙ্গীরা এভাবে ডিম ছুড়ে নষ্ট করছে।
ইনু বিরক্ত হয়ে বলেন, এইসব ডিমের কুসুম দিয়ে কুসুম-কুসুম যুদ্ধে কি কোনো কাজ হবে! বুলেট দিয়ে রক্ষা করা গেল না আমাদের চেতনার চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত; এখন ডিম ছুড়ে ঘোড়ার ডিম হবে। বুঝতে পেরেছি; বাকি জীবন জেলখানায় পচে মরতে হবে।
কর্নেল ফারুক বলেন, আমাদের ডামি কর্নেল অধ্যাপক আজ-কাল কেমন চুপচাপ হয়ে গেছেন যেন।
মোজাম্মেল বাবু চোখ টিপে বলেন, সুচরিতাসুর প্রেমে উনি নীরব কবি হয়ে গেলেন!
অধ্যাপক কর্নেল নীরবতা ভেঙে বলেন, আসলে কাজ করছে বীর ইউটিউবাররা। নয়ন সরসী, কাজলা দিদি ইউটিউবে ঘোষণা দিয়ে ডিমযুদ্ধে সাহস জোগাচ্ছে। আর ব্রিটেন ও এমেরিকায় লীগের সেরা ডিমযোদ্ধারা এদেশের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের। সেই নবাবী আমলে দাক্ষিণাত্য থেকে যে বর্গীরা এসেছিল হানা দিতে; তাদের একটি অংশ স্থায়ী হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। তাদের সাহসী বংশধরেরা লন্ডনে ডিমযুদ্ধ করতে গিয়ে পুলিশের ধাক্কা খেয়েছে, নিউইয়র্কে ডিমযুদ্ধ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছে। ফলে ব্রিটিশ ও এমেরিকান প্রশাসন এদের আন্ডা লীগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই ইমেজটা বীরের বলে মনে হয় না!
শ্যামল দত্ত বলেন, সুশীল কলিম ভাই আজ-কাল শুধু মন-ভাঙ্গা গান করেন। এখন দ্বিতীয় খুশির খবর শুনুন। ভারতের ‘এই সময়’ পত্রিকায় মির্জা ফখরুল খোলামেলাভাবে বলেছেন, উনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে চান।
অধ্যাপক কর্নেল বলেন, এর মাঝ দিয়ে মির্জা ফখরুল মহোদয় গান্ধীজী টু পয়েন্ট ও হয়ে উঠলেন। আবার যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকে ভারত বরাবরই বিএনপিকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে চেয়েছে; সেটা দূর করে উনি আস্থা জিতে নিতে চেষ্টা করেছেন।
এবার আমির হোসেন আমু, তৌফিক, ড রাজ্জাক ও বিচারপতি মানিকের চোখ খুশিতে চকচক করে ওঠে। তারা কোরাসে বলেন, মির্জা সাহেব প্রকৃত ভদ্রলোক। এই যে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাকে লাঞ্চিত করেছিল; বারবার পুলিশ লীগ তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে গেছে; উনি সব কিছু ক্ষমা করে দিয়ে আমাদের বুকে টেনে নিচ্ছেন। এইরকম লোকের নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার কথা। কিন্তু পেয়েছে ইউনূস, তাকে টুপ করে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে না দেওয়াই ভুল হয়েছে।
এমন সময় দরজার কাছ থেকে নুপুরের শব্দ শোনা যায়। সুচরিতাসুকে দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মতো উঠে যান অধ্যাপক কর্নেল।
দরবেশ বলেন, মায়ানগরীর এই মেয়েটির কারণে একটা সিরিয়াস মিটিং করার উপায় নাই। আর এই অধ্যাপক কর্নেলটাও একেবারে দারাশিকোর মতো হয়ে গেছেন। সুচরিতাসুকে দেখলেই উনি ছুটে যান।
দীঘল বারান্দার এক কোণে রেলিং-এ হেলান দিয়ে মায়াবতী সুচরিতাসু গভীর মায়ায় চোখ পাতে অধ্যাপক কর্নেলের মায়াময় চোখে। তারপর অঞ্জলি ভরা বকুল শিউলি ফুল অধ্যাপকের হাতের মুঠোয় ঢেলে দিয়ে গেয়ে ওঠে,
যত নাহি পাই দেবতা তোমায়, তত কাঁদি আর পুঁজি।
যতই লুকাও ধরা নাহি দাও, ততই তোমারে খুঁজি
কত সে রূপের রঙের মায়ায়, আড়াল করিয়া রাখ আপনায়
তবু তব পানে অশান্ত মন কেন ধায় নাহি বুঝি।।
পুনশ্চ: অতীতে সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার, ক্ষিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ের যুগে; টাক ছিল খানিকটা হাসাহাসির পাত্র। কিন্তু সমকালে পশ্চিমে হেয়ার ডু হিসেবে হেড শেভিং খুব স্টাইলিশ ফ্যাশন হিসেবে সমাদৃত। হলিউডের সুদর্শন অভিনেতা কেভিন কস্টনার থেকে জেসন স্ট্যাথাম, ভিন ডিজেল এই ফ্যাশানে নতুন মাত্রা এনেছেন। অনেক আগে টিভি সিরিজ কোজাকেও আমরা দেখেছি এই ফ্যাশনের শুরুটা। পশ্চিমা এই ফ্যাশন বাংলাদেশে প্রচলন করেছেন যারা, তাদের মধ্যে অধ্যাপক কর্নেল কলিমুল্লাহ অন্যতম। এটা তার অগ্রসর চিন্তার সূচক।
(চলবে)
পাঠকের মন্তব্য