টাকের কর্নেল (পঞ্চম পর্ব)

৩৪ পঠিত ... ১২ ঘন্টা ০ মিনিট আগে

আজ নুপুরের শব্দে ঘুম ভাঙল অধ্যাপক কর্নেলের। তাকিয়ে দেখেন জানালার পাশে দাঁড়িয়ে এক রুপসী নারী। প্রথমে মনে হয় এটা স্বপ্ন, কিন্তু একটু পরেই বোঝেন এটা স্বপ্ন নয়। অধ্যাপক কর্নেল তাকে জিজ্ঞেস করেন, সুচরিতাসু, আপনি কি আমাকে কিছু বলবেন! ভেতরে আসুন। দরোজা ভেজানো আছে।

সুচরিতাসু এক গোছা বেলি ফুল অধ্যাপকের হাতে দিয়ে বলে, আমি আপনার টকশোর ভক্ত স্যার। আপনি যেভাবে কথা বলেন, মনে হয় যেন, একটা একটা করে শব্দের খই মুখে তুলে আলতো করে চিবিয়ে কথা বলছেন।

–আপনি কারাগারে কেন? এমন সুচরিতাসুকে জেলে আটকে রেখেছে কোন পাষণ্ড ইন্টেরিম!

–বিদেশী এক রাষ্ট্রদূত আমার প্রেমে পড়েছিলেন! আমি ফেসবুকে অভিযোগ করেছি, তিনি আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও বিয়ে করেনি। অমনি পুলিশ ধরে এনে জেলে ঢুকিয়েছে।

–এসপিওনাজে জড়িয়ে গেছেন আপনি। আপনি মহাশয়া কি হানিট্র্যাপ নামে কোন শব্দ বন্ধের সঙ্গে পরিচিত।

–সেটাই পুলিশ বলছে। কিন্তু আমি কেবল এক টুকরো কমলালেবুর মতো নিটোল প্রেম চেয়েছিলাম।

–আপনি কোনভাবে ইন্ডিয়ান এম্ব্যাসির দাওয়াত কবুল করেছিলেন?

–টিভিতে প্লাস্টিকের বালতির বিজ্ঞাপন করার পর থেকেই আমি চীন-রাশিয়া-এমেরিকা-ইন্ডিয়া-তুরস্ক সব এমব্যাসিতেই ইনভাইটেশন পেয়েছি।

–আপনি দেখছি জিও পলিটিক্সের মেজর সব প্লেয়ারকেই আপনার রুপের বালতিতে রাখতে সক্ষম হয়েছেন।

–ইউরোপের কিছু দেশের এমব্যাসিতেও ডেকেছে। ইউরোপের এক এমব্যাসির ডিনারে ব্যালকনিতে গিয়ে দেখি এক ডিপ্লোম্যাট জয়েন্ট ফুঁকছেন। আমি যেহেতু মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করতে গিয়ে অনেকবার জয়েন্ট ফুঁকেছি; অভিজ্ঞতা আছে; তাই ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জয়েন্ট শেয়ার করি। সেই থেকেই প্রেম।

–আপনি হয়তো ভুলে গেছেন, ওপেন রিলেশনশিপ বলে একটা ব্যাপার আছে; সেটাকেই প্রেম বলে ভেবেছেন কিনা!

–ওপেন রিলেশনশিপ থাকলে ইউরোপে আছে; কিন্তু বাংলাদেশে প্রেম করলে বিয়ে করতে বাধ্য; এটা তাদের জানা উচিত। আমি আদালতে এ কথা বলেছি। বিচারক মুখ টিপে হাসছিলেন। আমার দুঃখে উনার হাসি পায় কি করে, ইন্টেরিম জবাব চাই।

–তা আমি কি করতে পারি আপনার জন্য?

–স্যার আমরা জেলের নারী ওয়ার্ডে ইন্টেরিমের বিরুদ্ধে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করবো। আপনাকে সেখানে একটা নৈশ ক্লাস নিতে হবে।

–ওখানে গেলে দীপুমণি মহোদয়ার অনুসারীরা যদি হামলা করে।

–দীপু আপা ক্লাসে থাকবেন না বলেছেন। ঐটুকুই; আর কোনো অসুবিধা হবে না।

সুচরিতাসু চলে গেলে; ইলেকট্রিক রেজরে হেড শেভ করে, নক্সী পাঞ্জাবি পরে একটু পারফিউম স্প্রে করে প্রস্তুত হতে থাকেন অধ্যাপক কর্নেল।

একটু পরে এক নারী কারাপ্রহরী নিতে আসে তাকে, চলেন স্যার। আপারা সবাই অপেক্ষা করছে।

নারী ওয়ার্ডে ঢুকতেই সবাই সমবেত কণ্ঠে গেয়ে ওঠে,

জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা।

জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা।।

অধ্যাপক কর্নেল বলেন, আপনাদের মাঝে আসতে পেরে ভালো লাগছে। সুচরিতাসুকে ধন্যবাদ আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। এখানে এসে আপনাদের ফুলের মতো নিষ্পাপ চেহারা দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি জানি পিতা, ভ্রাতা, স্বামী ও প্রেমিকের হাজার কোটি টাকা সামলাতে গিয়ে আপনাদের কারাগারে আসতে হয়েছে। আসলে আপনাদের প্রত্যেকের মাঝে একজন শাবানা বসবাস করেন, যিনি সাদাকালো চলচ্চিত্রে পিতা-ভ্রাতা-স্বামী-প্রেমিকের জন্য জান কুরবান করতেন। পার্থক্য একটাই, শাবানা সেলাই মেশিন চালাতেন; আপনারা টাকার মেশিন চালিয়েছেন। আমি এই পুষ্পনারীদের মুক্তি চাই। ইন্টেরিমের কাছে জবাব চাই।

সুচরিতাসু এসে অধ্যাপকের হাতে মোমবাতি তুলে দেয়। টেবিলে রাখা দেয়াশলাই দিয়ে উনি মোমবাতিতে অগ্নি সংযোগ করলে; সবাই মোমবাতি প্রজ্জ্বলন শুরু করে। এসময় লাইট অফ করে দিলে মোমবাতির আলোয় স্বর্গ নেমে আসে কারাগারে।

অধ্যাপক কর্নেল বিনয়াবনত হয়ে বলেন, এখন আমায় যেতে হবে।

সুচরিতাসু গেয়ে ওঠে,

প্রিয় যাই যাই ব’লো না, না না না

আর ক’রো না ছলনা, না না না॥

আজো মুকুলিকা মোর হিয়া মাঝে

না-বলা কত কথা বাজে,

অভিমানে লাজে বলা যে হ’ল না॥

পুনশ্চঃ  অতীতে সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার, ক্ষিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ের যুগে; টাক ছিলো খানিকটা হাসাহাসির পাত্র। কিন্তু সমকালে পশ্চিমে হেয়ার ডু হিসেবে হেড শেভিং খুব স্টাইলিশ ফ্যাশান হিসেবে সমাদৃত। হলিউডের সুদর্শন অভিনেতা কেভিন কস্টনার থেকে জেসন স্ট্যাথাম, ভিন ডিজেল এই ফ্যাশানে নতুন মাত্রা এনেছেন। অনেক আগে টিভি সিরিজ কোজাকেও আমরা দেখেছি এই ফ্যাশানের শুরুটা। পশ্চিমা এই ফ্যাশান বাংলাদেশে প্রচলন করেছেন যারা, তাদের মধ্যে অধ্যাপক কর্ণেল কলিমুল্লাহ অন্যতম। এটা তার অগ্রসর চিন্তার সূচক।

(চলবে)

চতুর্থ পর্বের লিংক 

 

৩৪ পঠিত ... ১২ ঘন্টা ০ মিনিট আগে

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top