টাকের কর্নেল (তৃতীয় পর্ব)

৩৩ পঠিত ... ১৭:৪৯, আগস্ট ১৩, ২০২৫

জেলখানার বাগানে বসে অধ্যাপক কর্নেল কলিমুল্লাহ। তিনি রোদ পোহাচ্ছিলেন। হঠাত কারাপ্রধান এসে দাঁড়ান, জিজ্ঞেস করেন, আপনার জন্য কি করতে পারি মহোদয়?

—জেলার মহোদয়, আপনি যদি একটু সরে দাঁড়ান; আমি তাহলে সূর্যরশ্মি থেকে ভিটামিন ডি আহরণ করতে পারি।

কারাপ্রধান একটু অপ্রস্তুত হলে অধ্যাপক কর্নেল বলেন, মহামতি আলেকজান্ডারকে এই একই কথা বলেছিলেন গ্রিক দার্শনিক ডায়াজিনিজ। এরে শানে নজুল হচ্ছে, বুদ্ধিজীবী কোন কিছু চায়না ক্ষমতা কাঠামোর কাছ থেকে।

—কিন্তু স্যার আপনার পরিবার বৃক্ষের সব বুদ্ধিজীবীই তো ক্ষমতা কাঠামোর কাছে কিছু চেয়েছেন।

অধ্যাপক কর্নেল মুচকি হেসে বলেন, আমি আজ একটি নৈশ ক্লাস নিতে চাই কারাবান্দীদের। আপনি যদি একটু শাহী এলান করার ব্যবস্থা করতে পারেন।

একটু দূরে ফুলের ঘ্রাণ নিতে নিতে গুন গুন করে রবীন্দ্র সংগীত গাইছিলেন রাশেদ খান মেনন। হাসানুল হক ইনু আবৃত্তি করছিলেন রবীন্দ্রনাথের নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ, ওরে চারিদিকে মোর একি কারাগার ঘোর, ভাঙ্গ ভাঙ্গ ভাঙ্গ কারা আঘাতে আঘাত কর, ওরে আজ কি গান গেয়েছে পাখি, এয়েছে রবির কর।

কারাপ্রধান নৈশ ক্লাসের ব্যবস্থা করতে চলে গেলে অধ্যাপক কর্নেল বলেন, এই তো আর চার পাঁচটা মাস ইনু মহোদয়; ইলেকশনে বিএনপি তার ম্যান্ডেট হস্তগত করলে বেয়াইতন্ত্র এক্টিভেটেড হবে। দরবেশ জামিন পাবেন প্রথমেই। সেই রেফারেন্স দেখিয়ে আপনারাও একে একে বেরিয়ে যাবেন। হাসিনা মহোদয়ার সময়ে আপনারা যে সম্পদ অর্জন করেছেন; তা এক একজন বিএনপি নেতার সঙ্গে সুষম বন্টন করে নিলে; আবার জমবে মেলা; গণতন্ত্রের বটতলা, চারুকলার বকুলতলা।

নৈশভোজে অধ্যাপক কর্নেলকে কাঁটাচামচ ও ন্যাপকিন এনে দেয়া হয়।  তিনি রুটি কেটে কেটে সুপের বাটিতে মশুরের ডালে ভিজিয়ে খান। ডেজার্ট হিসেবে একটু সুজির হালুয়া এনে দেয়া হয়। ওয়াইন গ্লাসে পরিবেশন করা হয় বিশুদ্ধ পানি।

পলক কাঁদতে কাঁদতে বলে, স্যার আপনি আপনার স্টাইলটা ঠিকই ধরে রেখেছেন।

—বড্ড কনফুসিয়াসের কথা মনে পড়ে পলক মহোদয়। উনি বলেছেন, বিশীর্ণ দারিদ্র্যের মাঝে সম্পদশালী হওয়া অপরাধ। আমি তাই সিম্পল লিভিল হাই থিংকিং প্র্যাকটিস করছি; উইদ আ পিঞ্চ অফ স্টাইল। আর আপনি এতো ফ্যাঁত ফ্যাঁত করে অশ্রু বিসর্জন করেন কেন! রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, জীবনটাকে কেঁদে ভাসিয়ে দেবার চেয়ে হেসে উড়িয়ে দেয়া শ্রেয়।

ব্যারিস্টার সুমন এসে বলে, চলুন স্যার যেতে হবে; আপনার ক্লাসের ছাত্ররা এসে গেছে।

অনেক ছাত্র অধ্যাপক কর্ণেলের নৈশ ক্লাসে। আজ তার বড্ড বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাতের ক্লাসের কথা মনে পড়ছে।

উনি বলেন, আপনারা যারা একে জেলখানা ভাবেন, তারা ভুল করেন, এটা আসলে সংস্কার বা সংশোধন কেন্দ্র। দস্যু নিজামকে নিজামউদ্দিন আউলিয়াতে রুপান্তরের প্রক্রিয়া এটি।

হঠাত গায়িকা মমতাজ গেয়ে ওঠেন, বুক ফাইটা যায়, আমার বুক ফাইটা যায়।

অধ্যাপক বলেন, এই সুরশ্রী সংগীত শিল্পী তারেক রহমানকে নিয়ে গান গেয়েছেন আবার শেখ হাসিনাকে নিয়ে গান গেয়েছেন। দ্বিদলীয় গণতন্ত্রের ভারসাম্যের গায়িকা তিনি। এই যে যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তার নেতার জন্য উনার বুক ফেটে যায়; এর মধ্যে স্পিরিচুয়ালিটি আছে। উনাকে গ্রেফতার না করে রিকনসিলিয়েশনের সুযোগ দিলে, এতো দিনে ইউনুসের জন্য উনার বুক ফেটে যেতো।

এক ছাত্রলীগের কারাবন্দী দাঁড়িয়ে বলে, স্যার আপনার টকশো দেইখা আপনারে জ্যোতিষী মনে হয়, আমার ভাগ্যটা একটু দেইখা দিবেন স্যার?

—আপনি গ্রেফতার হয়েছেন কেন?

—স্যার গত বছর জুলাই মাসে ছাত্রগো গুলি করতে গিয়া ছবি উইঠা গেছিলো; ছবি দেইখা ধইরা আনছে।

—ও নিয়ে ভাববেন না। দেশের বাইরে থেকে আওয়ামী লীগ, দেশের ভেতর থেকে বিশিষ্ট জনেরা জুলাই বিপ্লবকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে জঙ্গিদের ষড়যন্ত্র বলে রাঙ্গিয়ে দিয়েছে। এই ফর্মুলায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি মিলে প্রায় ৩২ বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে।  আর বিএনপি শাসন করেছে মাত্র ১৫ বছর। কারণ তাদের দলে সম্মুখ সমরের মুক্তিযোদ্ধা থাকলেও কলকাতায় গান ও আবৃত্তি শেখা মুক্তিযোদ্ধা নেই। ফলে তাদের চেতনার গান গাওয়ার লোক নেই। চেতনা টেতনা সব নাত্থিং বাট ফান, আসল হলো গান; এক হচ্ছে কালচারাল উইং-এর গান, আর এক হচ্ছে আপনার হাতের গান, যা নাচিয়ে আপনি চেতনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে গিয়েছিলেন। নিশ্চিন্তে থাকুন; ফুলের মালা গলায় নিয়ে বেরিয়ে চেতনা কোটায় চাকরি পেয়ে যাবেন।

পলক বলে, স্যার আপনি আমাদের আশার বাতিঘর। আপনি জেলখানা থুক্কু সংশোধন কেন্দ্রে আসার পর আমার কান্না কমে গেছে।

 অধ্যাপক কর্নেল বলেন, আর ভাবছেন কেন, ইউনুসকে ব্যর্থ তকমা দেয়া হয়ে গেছে। টকশোতে আগে দেখতেন না, হোস্ট আর দুজন আওয়ামী লীগের টকার মিলে একজন ভিন্নমতের লোককে নাস্তানাবুদ করার যে কৌশল ছিলো; ওটাই এখন সব টকশোতে চলছে। এখন একজন বিএনপির টকার আর একজন রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ টকার মিলে জুলাই বিপ্লবী ছেলেমেয়েদের চেপে ধরছে। অন্যদিকে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা বিবৃতি দিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের পনেরো বছরকে ইকুয়ালাইজ করে দিচ্ছে ইউনুসের এক বছরের সঙ্গে। সুতরাং ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে আমরা ফেব্রুয়ারীর একুশ তারিখে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে এসে প্রেসক্লাবে একসঙ্গে চা খেতে পারবো।

যুবলীগের কয়েকজন কারাবন্দী শ্লোগান দেয়, জয় বাংলা জয় কলিমুল্লাহ।

পুনশ্চঃ  অতীতে সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার, ক্ষিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ের যুগে; টাক ছিলো খানিকটা হাসাহাসির পাত্র। কিন্তু সমকালে পশ্চিমে হেয়ার ডু হিসেবে হেড শেভিং খুব স্টাইলিশ ফ্যাশান হিসেবে সমাদৃত। হলিউডের সুদর্শন অভিনেতা কেভিন কস্টনার থেকে জেসন স্ট্যাথাম, ভিন ডিজেল এই ফ্যাশানে নতুন মাত্রা এনেছেন। অনেক আগে টিভি সিরিজ কোজাকেও আমরা দেখেছি এই ফ্যাশানের শুরুটা। পশ্চিমা এই ফ্যাশান বাংলাদেশে প্রচলন করেছেন যারা, তাদের মধ্যে অধ্যাপক কর্নেল কলিমুল্লাহ অন্যতম। এটা তার অগ্রসর চিন্তার সূচক।

(চলবে)

 

চতুর্থ পর্বের লিংক 

দ্বিতীয় পর্বের লিংক 

৩৩ পঠিত ... ১৭:৪৯, আগস্ট ১৩, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top