টাকের কর্নেল (দ্বিতীয় পর্ব)

৭৪ পঠিত ... ১৭:৩৬, আগস্ট ১২, ২০২৫

জেলখানার ডাক্তার সাহেব অধ্যাপক কর্নেল কলিমুল্লাহর ব্লাড প্রেশার চেক করেন। ছোট টর্চ দিয়ে চোখের কর্নিয়ায় আলো ফেলেন; হা করিয়ে জিভ দেখেন; তারপর গম্ভীর মুখে বলেন, উনার টকশো উইথড্রল সিনড্রোম হয়েছে। দ্রুত টকশোর ব্যবস্থা না করলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না।

কারাগারের লাইব্রেরিতে রোগীকে বাঁচাতে টকশো আয়োজিত হয়। মোজাম্মেল বাবু আর শ্যামল দত্ত টকশোর আর দুজন অতিথি হন। ফারজানা রুপা উপস্থাপক নির্বাচিত হন। নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে শাকিল টকশো কো-অর্ডিনেট করেন।

দর্শক হিসেবে সামনের সারিতে মেনন, ইনু, দরবেশ, সাজাহান, পলক, দীপুমণি, তৌফিক, রাজ্জাক, মানিক, মমতাজ, সুমন প্রমুখ এসে বসেন।

কর্নেল কলিমুল্লাহ একটি বাহারি চাইনিজ শার্ট পরে এসে টকশো অতিথি হিসেবে বসেন।

ফারজানা রুপা বলেন, আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি সাড়ে চুয়াত্তর জার্নালে। আজ আমরা আলোচনা করবো হাসিনা চন্দ্রগুপ্তের যুগের গুপ্ত রাজনীতি নিয়ে। প্রথমেই শুরু করছি মোজাম্মেল বাবুকে দিয়ে। বাবু ভাই আপনার এ প্রসঙ্গে কী বলার আছে?

বাবু বলেন, আমি মনে করি আমাদের প্রণব মুখার্জি, সুজাতা সিং ও নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গুপ্ত সম্পর্ক ধরে না রেখে প্রথম থেকেই জয় বাংলা জয় হিন্দ শ্লোগান প্রচলন করা উচিত ছিলো। তাহলে ২৪-এর জুলাইয়ে দিল্লি সাউথ ব্লক আরো খুলে খেলতে পারত।

ফারজানা রুপা অধ্যাপক কর্নেলকে বলেন, এ প্রসঙ্গে কি আপনার কিছু বলার আছে?

—আমি মনে করি বাবু মহোদয় গুপ্ত রাজনীতির ট্রোজান হর্সের রেফারেন্সটি আমলে নেননি। মহিউদ্দীন খান আলমগীর মহাশয় দেখুন, কীভাবে একাত্তরে পাকিস্তান সরকার মহোদয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেন; সেসময় ট্রোজান হর্স হিসেবে তার গৃহে ছিলেন উনার আত্মীয় মুনতাসির মামুন মহাত্মন। মুক্তিযুদ্ধের সময় গুপ্ত থেকে যুদ্ধ বিজয়ের পরে আত্মপ্রকাশ করে তিনি বিজয়ের ইতিহাস লেখেন। জাতিকে বিজয়ী ও পরাজিত এই দুইভাগে বিভক্ত করেন। মখা মহোদয়ও থেমে থাকেননি; ঠিকই বাংলাদেশ প্রশাসনে মোতায়েন হয়েছেন; এরপর মাননীয় জেনারেল জিয়ার খালকাটা বিপ্লব নিয়ে অভিসন্দর্ভ প্রণয়ন করেছেন। এরশাদ প্রশাসনে গুপ্ত ছিলেন। তারপর খালেদা প্রশাসন থেকে বিদ্রোহ করে জনতার মঞ্চ করেছেন; মহাপরাক্রমশালী হাসিনা মহোদয়ার মন্ত্রীসভা আলো করেছেন। শেষ পর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে গণতন্ত্রের স্তম্ভ ধরে নড়াচড়া থামিয়েছেন। এরপর গুপ্তজীবন যাপন করে ফার্মার্স ব্যাংক স্থাপন করে নিজ পরিবার বৃক্ষের প্রতিটি শাখায় ফুল ফোটাতে গুপ্ত কৃষকতা করেছেন। কাজেই গুপ্ত ও উন্মুক্ত হওয়াই হচ্ছে রাজকর্মে সাফল্যের সোপান।

রুপা এবার শ্যামল দত্তকে জিজ্ঞেস করেন, গুপ্ত রাজনীতিকে আপনি কিভাবে দেখেন?

—১৯৭০ সালের নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি; তারা সবাই গুপ্ত শিবির; এরা অখণ্ড পাকিস্তানের স্বপ্ন লালন করে।

ইনু দর্শকের সারি থেকে চিৎকার করে বলেন, এদের নির্মূল না করে বাঁচিয়ে রাখাতেই আমরা একদলীয় বাংলাদেশ গড়তে পারিনি।

রুপা বলেন, ইনু ভাই আপনি আজ অতিথি নন। অতিথিকে কথা বলতে দিন।

শ্যামল দত্ত বলেন, ঐ যে যারা ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি; তারাই বাঙালি জাতীয়তাবাদের শত্রু। তারা মৌলবাদী ও জঙ্গী। তারা গুপ্ত থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যার সঙ্গে শত্রুতা করেছে।

কর্নেল অধ্যাপক কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, ব্যাপারটা খানিকটা ওরকম আবার খানিকটা অন্যরকম। মুক্তিযুদ্ধের পর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে চলে যান। ইনু মহোদয়, স্বর্গীয় মতিয়া মহোদয়া, কারারুদ্ধ সাজাহান খান তার প্রমাণ। এমনকি উনার হত্যাকারীরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শাহাদত বরণ করলে ট্যাংকের ওপর নেচেছেন ইনু মহাশয়।

ইনু চেঁচিয়ে ওঠেন, ওটা আমি নই। জঙ্গিরা ভ্রান্ত ছবি দিয়ে বলছে ওটা আমি।

—ঠিক আছে। মতিয়া চৌধুরী মহোশয়া বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ঢোল বাজাতে চেয়েছেন, সাজাহান খান বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাংচুর করেছেন। এই যে দেখুন, জাসদ, ছাত্র ইউনিয়নে গুপ্ত  থেকে তারা ঠিকই ১৯৯৬ থেকে আজ অবধি আওয়ামী লীগের সেবা করছেন।

মোজাম্মেল বাবু বলেন, আসলে সবার অন্তঃমিল অখণ্ড ভারতের স্বপ্নে। ইনুভাই তো হিন্দি বলতেও শিখেছেন; তাই তো আমি বলি জয় বাংলা জয় হিন্দ হোক আমাদের শ্লোগান।

শ্যামল দত্ত বলেন, আমি এ প্রসঙ্গে কিছু বলবো না। আমি কেবল অখণ্ড পাকিস্তানের স্বপ্ন নিয়ে বলবো; দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে খলনায়ক জিন্না দেশভাগ করেছেন। আমি তাকে কক্ষণো ক্ষমা করতে পারবো না।

ফারজানা রুপা বলেন, অধ্যাপক কর্নেল স্যার কি কিছু বলবেন!

—জিন্না মহোদয় অবশ্য বিলেতের লাইফ স্টাইলে গুপ্ত ছিলেন । কংগ্রেসে গুপ্ত থেকে নেহেরুর সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায়; যখন বুঝলেন পণ্ডিত নেহেরু ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেনই; তখন নিজে পাকিস্তানের গভর্নর হয়ে উঠলেন।  আমিও কিন্তু দীপুমণি মহোদয়ার ষড়যন্ত্রে উপাচার্য পদ হারানোর পর হাসিনা গুপ্তের বিরুদ্ধে কথা বলেছি। কিন্তু ৫ অগাস্টের পর গুপ্তশিল্পগুরু মহিউদ্দীন খান আলমগীরের মতো করে ইউনুস প্রশাসনে মোতায়েন হতে না পেরে দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া টকশোতে গিয়া রুদ্র রোষে পড়িয়া গেলাম।

দীপুমণি কিছু বলার জন্য হাত তোলেন।

রুপা বলেন, আপা আজকে আপনি অতিথি নন।

পুনশ্চঃ  অতীতে সফদার ডাক্তার মাথা ভরা টাক তার, ক্ষিদে পেলে পানি খায় চিবিয়ের যুগে; টাক ছিলো খানিকটা হাসাহাসির পাত্র। কিন্তু সমকালে পশ্চিমে হেয়ার ডু হিসেবে হেড শেভিং খুব স্টাইলিশ ফ্যাশান হিসেবে সমাদৃত। হলিউডের সুদর্শন অভিনেতা কেভিন কস্টনার থেকে জেসন স্ট্যাথাম, ভিন ডিজেল এই ফ্যাশানে নতুন মাত্রা এনেছেন। অনেক আগে টিভি সিরিজ কোজাকেও আমরা দেখেছি এই ফ্যাশানের শুরুটা। পশ্চিমা এই ফ্যাশান বাংলাদেশে প্রচলন করেছেন যারা, তাদের মধ্যে অধ্যাপক কর্নেল কলিমুল্লাহ অন্যতম। এটা তার অগ্রসর চিন্তার সূচক।

(চলবে)

 

তৃতীয় পর্বের লিংক 

প্রথম পর্বের লিংক 

৭৪ পঠিত ... ১৭:৩৬, আগস্ট ১২, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top