ওরা আমাদের বন্ধুদের তিলেতিলে মেরেছে!

২৬ পঠিত ... ৬ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে

আমরা বকুলদের সবসময় ঈর্ষা করতাম। করতাম কী, এখনও করি। কী সুন্দর ঘ্রাণ ওদের! আমারই পাগল পাগল লাগে, মনে হতো ছুটে ওর কাছে চলে যাই, ওর ফুল যদি আমার গায়েও কিছু পড়ে, আমার থেকেও সুঘ্রাণ আসবে। কিন্ত আমরা তো হাঁটতে পারি না। লম্বা হওয়ায় আমার সাথে বকুলদের দৈনিক আলাপ হতো। আমরা নানান বিষয়ে আলাপ করতাম, ফুল ছোড়াছুড়ি করতাম। কী ঘ্রাণ। এক সকালে দেখলাম ও চিৎকার করছে ব‌্যথায়। ওর সব ডালে কে যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। সে কী কান্না! ওর ঐ অবস্থা দেখে আমার প্রতিটা ডাল, পাতা, উপশিরা পর্যন্ত শিউরে উঠল।

কাঁদতে কাঁদতে বলছিল ও, ‘আমাকে নাকি আবর্জনার মতো লাগে! তাই আমার গায়ে আগুন দিয়েছে। আমি কি মরে যাব?’ 

ওকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন‌্য না, বিশ্বাস থেকেই বলেছিলাম ‘তোমার কিছু হবে না, আগুন নিভে যাবে দেখো।’

আগুন নিভে গিয়েছিল ঠিকই কিন্ত ওকে কেটে টুকরো টুকরো করে কিছু মানুষ নিয়ে গেল। ঐদিনই ওর পাশে ওরই ছোটবোনকে একদম উপড়ে ফেলে নিয়ে চলে গেল। ভয়ে আমি আমার বাচ্চাদের চোখ পাতা দিয়ে ঢেকে রেখেছি, কান ডাল দিয়ে চেপে রেখেছি যাতে ওদের চিৎকার শুনতে না পায়। পলাশ জানিয়েছে ওই সারির কয়েক বকুল বন্ধুর পেট বরারব কেটে ফেলেছে। গন্ধরাজ পানি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে আতঙ্কে, বকুলকে যদি আবর্জনার মতো লাগে আমাকে তো ভাগাড়ের মতো লাগবে। ওভাবে মরার চেয়ে আমি না খেয়েই মরে যাব।

ছোট্ট করবী সবার এই আতঙ্কের কারণ বুঝতে পারছে না, কেউ কিছু বলছেও না।

‍গো ধরে রাধা আন্টির গায়ে একদম হেলেই পড়ল। আহা ওঠ, ভেঙে যাবি তো!–রাধাচূড়ার এই অনুরোধ ওর জেদের কাছে টিকল না। আন্টি বলতে শুরু করলেন, তুই তো জানিস না, এটা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। একটু এগোলেই বেলতলী এলাকা, তোর বকুল আন্টিরা যেখানে অনেক দিন ধরে আছেন, তারা সেখানে থেকেছেন, বড় হয়েছেন, মানুষকে ফুল দিয়েছেন, ছায়া দিয়েছেন এতগুলো বছর। আজ ধুপ করে মানুষের মনে হয়েছে বকুল গাছ দিয়ে কিছু হয় না। তাই তোর আন্টিদের মেরে ফেলেছে।

:আমি বড় হলে কি আমাকেও মেরে ফেলবে?

:তুই ভয় পাসনে।

:মানুষ কি খুব ভয়ংকর?

:ভয়ংকর তো বটেই, তবে কিছু ভালো মানুষও আছে।

:ওরা আমাদের বাঁচতে দেবে তো আন্টি?

আন্টি উত্তর দিতে পারলেন না, উদাস হয়ে আকাশ পানে ডাল মেলে চেয়ে র‌ইলেন।

২৬ পঠিত ... ৬ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top