ঢাবির বাদামের নেশা আমার কাটে না

৪০ পঠিত ... ৯ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে

ঘুম থেকে ওঠার পরও হ্যাংওভার কাটছিল না আজ। গতকাল রাত্তিরে এক পেগ বাদাম খেয়েছিলাম। বন্ধু জোর করে খাওয়াল। বলল, বাংলা বাদাম। বিদেশিগুলার বিচি বড় আর বড়ই শক্ত, দাঁতে দাঁত পিষে ভাঙা মুশকিল। প্রসেনজিতের পক্ষেও সম্ভব নয়। কিন্তু দেশিগুলো নরম, টুপ করে ভাঙে এমনকি কখনও-সখনও মুখে দিলেই নাকি গলে যায়। যেন বাদাম নয়, মনে হয় মোম। 

বন্ধুর জোরাজুরিতে এক পেগ বাদাম খেয়েই আমার অবস্থা কাহিল। নিট বাদাম নয়, পানি মিশিয়েছিলাম ঢের। তবুও...বন্ধু পড়ে ঢাবিতে, তার রোজ রোজ বাদাম খেয়ে অভ্যাস আছে। আমার তো নেই। আমি এক পেগেই পাঁড় মাতাল তখন। চোখের সামনে দিন-দুনিয়া ভন ভন করে ঘুরছে। আমি কার্জন হলের দিকে আঙুল তুলে বজ্রকঠিন স্বরে চিৎকার করলাম, তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টা সাহেবের কথা..

বন্ধু আমাকে নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরল। যদিও বাদাম খেয়ে আমার রাজনৈতিক খোলস পড়ে গেছে। আমি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আওড়ে যাচ্ছি। কিন্তু মনে পড়ছে না, ভুট্টা সাহেবটা কে! যখন জগন্নাথ হল পার হচ্ছি, আমার মনে প্রশ্ন জাগল-ভুট্টা সাহেবের কি গোঁফ ছিল। নাকি তার ত্বক ছিল মসৃণ বাংলা বাদামের মতো। জানি না। জানতে বড়ো ইচ্ছা হলো আমার। মনে পড়ল পাওলো কোয়েলহোর বিখ্যাত উপন্যাস আলকেমিস্টের কথা। ওখানে লেখা ছিল–আগার তুম কিসি চিজ কো নিজের হৃদয় থেকে চাও, দ্যান দো হোল ওয়ার্ল্ড যেকোনো উপায়ে ওটা তোমাকে পাইয়ে দেবেই দেবে। 

কেন জানি না হঠাৎ পাওলো কোয়েলহোর কথা ভেবে আমার ডুকরে কান্না পেল। তারপর আমিনুল ইসলামের মতো আমি কিছুক্ষণ জগন্নাথ হলের একটা পিলার জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম। বন্ধু টেনেহিঁচড়ে আনার আগে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললাম, তুই হিন্দু তারপরও তোকে ভালোবাসি হে মালাউন.. 

আমি কিছুক্ষণ ক্যাম্পাসে নেচে বেড়ালাম তারপর। গোল চশমা পরা কে যেন একজন এসে নিষেধ করল, ক্যাম্পাসে নাচানাচি কচ্চেন, পরমিশান আছে আহ্পনার? আমি তখন একটু কোমর দুলিয়ে বললাম, মেঘের কোলে রোদ হেসেছে বাদল গেছে টুটি, বিট পে বুটি, বিট পে বুটি, বিট পে বুটি। গোল চশমা কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি তখন নাচ থামিয়ে মাথা নিচু করে বললাম, কন্নিচুয়া, হাজি নামাস্তে, মাতা আশতা...

জাপানিজ শিখছিলাম, গলায় এক পেগ বাদাম পড়তেই হুড়মুড় করে বের হয়ে গেল সব। গোল চশমা চলে গেল। আমি গেলাম না। কিছুক্ষণ পর পরই জগন্নাথ হলের পিলার জড়িয়ে ধরছিলাম। চিৎকার করছিলাম, তুই হিন্দু, তারপরও তোকে ভালোবাসি হে পাওলো..

আজ ঘুম থেকে উঠে শুনলাম, ডাকসু নাকি বাদামওয়ালাদের তুলে দিচ্ছে ক্যাম্পাস থেকে। ঠিকই করছে। গতকাল রাতে আরেক পেগ বাদাম খেলেই মুখ দিয়ে 'জয় বাংলা' বের হয়ে যেত। বাঁচা বেঁচেছি খুব। কিন্তু হ্যাংওভার কাটছে না এখনও। কোয়েল মল্লিকের কথা মনে পড়ছে বারবার। সে কেমন আছে কে জানে। হতে পারে সে হিন্দু, কিন্তু তাকে ভালোবেসে আমি কোনো কসুর করিনি।

৪০ পঠিত ... ৯ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top