ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের আন্তরিক কথোপকথন

১২২ পঠিত ... ১৮:০০, এপ্রিল ২৩, ২০২৫

15

রাত তখন প্রায় তিনটা। প্রথমে একটা চাপা কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে, তারপর আরেকটা। এই আওয়াজ শুনতে পায় মফিজুল টি স্টল। ‘ঐ কে কান্দে?’ বলে হাঁক ছাড়ে সে। মফিজুল টি স্টল অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে, ওর কান ফাঁকি দিয়ে কেউ কাঁদবে এ হতেই পারে না।

ঐ কারা কান্দেন? কথা কন না ক্যান?

 আমি।

আমি কেডা?

আমি সিটি কলেজ।

হায় হায়, বড় ভাই! আপনের লগে আর কে কান্দে?

আর আমি কাঁদি, আমি ঢাকা কলেজ।

ওরে আমার বড় ভাইরা, আপনেরা জানেন আপনেরা কত সম্মানিত? আমার সাক্ষাত বড় ভাই-বেরাদার। এই আপনেগো লাইগা আমি জমজমাট থাহি। পোলাপান আমার ম‌ইধ্যে, সামনে, পাশে বেইন্নারাইত পর্যন্ত গিজগিজ করে।

বস, আপনেরা মাইনষের মত এমুন কানতাছেন ক্যা?

সিটি কলেজ: দেখো, তুমি তো অনেক বছর ধরেই এখানে আছ। আমার সাথে ঢাকা কলেজ ভাইয়ের সখ্যতার ব্যাপারে তোমরা অবগত আছ। ভাইয়ের এখনকার সময়ে যে বেইজ্জতি হচ্ছে আমি মেনে নিতে পারছি না। তার সারা দেয়ালে ক্ষতচিহ্ন, যে যেভাবে পারছে আঘাত করছে। ১৮৩ বছর বয়সে এই আঘাত সহ্য করার মতো বলো?

ঢাকা কলেজ: তুমি নিজের কথা ভুলে যাচ্ছ সিটি। তোমার‌ও বয়স বাড়ছে। তোমার বালু-সুড়কি, রং গরম হলেও যেই আঘাত তুমি পাচ্ছ সেই কষ্ট আমি মেনে নিতে পারছি না। কত গল্প করতাম বলো আমরা একসাথে, নিজেদের এক‌ই রং যদি হত, দক্ষিণের ভবন যদি হতো হালকা আকাশী, তোমার ক্যাম্পাস আর আর আমার ক্যাম্পাস যদি সব ফুলে ফুলে ভরে থাকত....

সিটি কলেজ: কেমনে থাকবে ভাই? ইট-পাটকেল, টিয়ারশেলে আমার সারা গা জ্বলছে ব্যথায়, অনেক জায়গায় ভেঙেও গেছে। সেসব তো আর ওভারনাইট মেরামত হবে না। ব্যথা নিয়ে পড়ে থাকতে হবে। আপনি কীভাবে সহ্য করবেন ভাই?

ঢাকা কলেজ: আরেহ, তা না হয় সহ্য করে নেব! কিন্তু ক্যাম্পাস ভর্তি প্রাণবন্ত ছেলে-মেয়েদের ব‌ই নিয়ে পড়তে আসার দৃশ্য যে অস্পৃশ্য হয়ে গেছে। গেইটে তৃষ্ণার ঠনঠন অনুভূতি টের পাই।

সিটি কলেজ: আস ব্রো,আস! মফিজুল, তোমারও তো টিনের চালা ভেঙে গেছে। ব্যথা পাচ্ছ না?

: আরেহ বড় ভাই, আপনগো ব্যথার কাছে আমারডা কিছুই না। পোলাপান আমার এইখানে বিড়ি সিগারেট খায়। টিন ভাঙলেও খায়। আমার ভাঙা টিন ল‌‌ইয়া ব্যাঁকা হ‌ওয়ার অভ্যাস আছে। এইটা একটা স্টাইলও পুষ্পার মতো।

সিটি কলেজ: দেয়াল শক্ত করেন বড় ভাই। আপনি মন খারাপ করলে আমরা বয়সে ছোটোদের পলেস্তারা আরো দুর্বল হয়ে যাবে, ঝুলে থাকা সাইনবোর্ডগুলোও খসে পড়বে।

ঢাকা কলেজ: ছেলেমেয়েগুলো কী চায় সিটি? আমাদের কথা একটুও ভাবে না। আমাদের সাইনবোর্ডে আঘাত করলে, খুলে ফেললে আমাদের লজ্জা করে এটা ওরা বুঝে না? অন্যান্য দেশে আমাদের বন্ধু কলেজগুলোর কী সম্মান! এভাবে কদিন পর পর‌ই আমরা মার খাই। বন্ধুদের আর গেইট দেখাতে পারব না রে।

সিটি কলেজ: যথার্থ বলেছেন বটে। আমার চেহারার যে অবস্থা করেছে তা আর নাই বা বললাম।

মফিজুল টি স্টল: বড় ভাইয়েরা, কালকের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়া রাখেন। দ্যাশ থেইকা আন্তরিকতা গেছে গা। কহন কি হয় ক‌ওয়া যায়না । আপনারা সম্মানী বিল্ডিং, কাইন্দা আর কী হ‌ইবে। আমার বন্ধ হ‌ওয়ার সময় হ‌ইছে, গেলাম।

১২২ পঠিত ... ১৮:০০, এপ্রিল ২৩, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top