ডিসেম্বরেই ক্ষমতাকে বিয়ে করতে চায় আলাদিন

২৩৫ পঠিত ... ১৮:১৪, মে ২৯, ২০২৫

18

ক্ষমতা কুলসুমকে বিয়ে করার জন্য পনেরো বছর ধরে ঘুরছে মজনু আলাদীন। ক্ষমতাকে ভালোবেসে কতনা অশ্রুজলে ভেসেছে। ক্ষমতার মা ভীষণ নিষ্ঠুর এক মহিলা । সে কোটাল পুত্র পাঠিয়ে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে এলাকা ছাড়া করেছিল আলাদিনকে। ভাগ্য ভালো ক্ষমতার পাশের মহল্লার মেসো মশাই উদ্ধার করে রৌদ্র করোজ্জ্বল এক গৃহে থাকার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল। কতদিন ক্ষমতাকে ফোন করেছে মেসেজ পাঠিয়েছে আলাদিন, কিন্তু এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কী আছে! সে শুধু বলতো, মায়ের কথার বাইরে আমি যেতে পারব না!

মেসো মশাই এক লাভগুরু পাঠিয়ে ক্ষমতাকে ভালোবাসার ১০১টি উপায় শিক্ষা দিয়েছে আলাদিনকে। সেই থেকে আলাদিন চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদারের মতো সেজে-গুজে সোফায় বসে থাকত বিরহী প্রেমিকের মুখ করে। এলাকা থেকে মেসো মশাইয়ের লোকেরা খবর নিয়ে আসত, ক্ষমতার মা ক্ষমতাকে নিজের কাছেই রেখে দিতে চায়। ফলে ক্ষমতা চিরকুমারী রয়ে যাবে এ প্রায় নিশ্চিত।

আলাদিনের বন্ধুবান্ধব ক্ষমতার কাছে আলাদিনের প্রেমপত্র পৌঁছে দিতে গিয়ে কোটাল পুত্রদের হাতে ধরা পড়ে নাস্তানাবুদ হয়।

আলাদিন খবর পায় ক্ষমতা ভীষণ সাংস্কৃতিক হয়ে উঠেছে। সে ছায়ানটে গান শেখে, উদীচীর গান শুনতে যায়, শাহবাগে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে যায়। আবার খবর পায় ক্ষমতা ভীষণ ধার্মিক, ওমরাহ ও হজ্জ্ব করতে যায়। একি অঙ্গে এত রুপ তার।

মেসো মশাইয়ের লাভগুরু আলাদিনকে উপদেশ দেয়, একটু নদীয়ার মতো টেনে টেনে বাংলা বলো দিকিনি, দুকলি রবীন্দ্র সংগীত গাও, তুমি যদি যথেষ্ট সংস্কৃতি না হয়ে ওঠো, ক্ষমতার সঙ্গে তোমার কমপ্যাটিবিলিটি হবে কী করে গো!

লাভগুরু এক সংস্কৃতি মামাকে এনে আলাদিনের গানের মাস্টার হিসেবে নিয়োগ করে, গানের মাস্টার চোখ বুঁজে গেয়ে ওঠে,

শুধু যাওয়া আসা, শুধু স্রোতে ভাসা,

শুধু আলো-আঁধারে কাঁদা-হাসা॥

শুধু দেখা পাওয়া, শুধু ছুঁয়ে যাওয়া,

শুধু দূরে যেতে যেতে কেঁদে চাওয়া,

শুধু নব দুরাশায় আগে চ'লে যায়--

পিছে ফেলে যায় মিছে আশা॥

এইভাবে কেটে যায় দশটি বছর। ওদিকে ক্ষমতার মায়ের খিটখিটে মেজাজ, কোটালপুত্রদের দিয়ে এলাকার লোকজনকে মারধর, উচ্ছেদ, আর বাড়ির চাকর-বাকর নিয়ে বসে পরচর্চা-পরনিন্দার রগড়ের আসর দেখে এলাকাবাসীর অতিষ্ট হয়ে যায়। এলাকাবাসী লাঠি সোটা নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে ক্ষমতাদের বাড়ির দিকে। ক্ষমতার ছোট খালু এসে ক্ষমতার মাকে উদ্ধার করে পাশের মহল্লার মেসো মশাই-এর বাসায় পাঠিয়ে দেয়। আর ক্ষমতার আশ্রয় হয় বড় চাচার বাসায়, যাকে ক্ষমতার মা উঠতে বসতে অপমান করেছে এতকাল।

ক্ষমতা তখন বড় চাচার বাসায়। ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে বড় চাচা তার জন্য ইংলিশ টিচার এনে দেয়। ক্ষমতার মার প্রতাপ শেষ হওয়ায় আলাদিন এলাকায় ফেরে আলী বাবার গাড়িতে চড়ে। আলী বাবা ক্ষমতার মায়ের গোমস্তা ছিল। সে আলাদীনকে অনুরোধ করে, আমার ব্যবসা বানিজ্য বাঁচাইতে এখন আপনার শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই গো।

ক্ষমতার জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় আলাদীন ক্ষ্যাপাটে হয়ে যায়, সর্বত্র বলে বেড়াতে থাকে ডিসেম্বরে ক্ষমতাকে বিয়ে করব, ডিসেম্বরেই।

ক্ষমতার বড় চাচা অনুরোধ করে, বিয়েটা জুনে করলে ক্ষতি কী, ক্ষমতাটা একটু শিক্ষিত হোক।

: বেশি শিক্ষিত হলে ক্ষমতা বিগড়ে যাবে; বিয়ের চেয়ে বড় শিক্ষা তো আর নাই।

ক্ষমতার ছোট খালু বলে, ক্ষমতার বিয়েটা ডিসেম্বরে হলে আমি একটু বিশ্রাম নিতে পারি। অনেকদিন বিয়ের দাওয়াত খাই না। ফুলস্টপ।

ছায়ানট, উদীচী গান ধরে, ডিসেম্বর ডিসেম্বর। নধর গোলগাল পুরোহিত বলে, চুরাশি বছর বয়েসী বৃদ্ধ চাচাকে কেন ক্ষমতার দেখভাল করতে হবে। আলাদীন উপযুক্ত ছেলে, ক্ষমতার সঙ্গে তার মধুরেণ সমাপয়েত হয়ে যাক। সেটাই প্রকৃতির নিয়ম।

ক্ষমতার বড় চাচা বিরক্ত হয়ে বলে, আমি তাহলে ক্ষমতার দায়িত্ব ছেড়ে দেব!

আলাদিন বলে, দরকার হলে ক্ষমতা তার পাপ্পু ফুপার বাসায় থাকবে বিয়ের আগে পর্যন্ত। চাচা দায়িত্ব ছাড়তে চাইলে বিকল্প আছে, খালু আছে-ফুপা আছে।

পাশের মহল্লার মেসো-মাসি-পিসি বলে, তবে তাই হোক শুভস্য শীঘ্রম। ক্ষমতা আলাদিনের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়লে আমরা বড্ড খুশি হব।

ক্ষমতার মা বলে, আলাদিনের সঙ্গে ক্ষমতার বিয়েটা হলে, আমিও এলাকায় ফিরতে পারব গো।

গাতকেরা গেয়ে ওঠে, চোখ ছল ছল করে ওগো মা! কি ব্যথা অন্তরে ওগো মা।

আলাদিন তখন হুঙ্কার দেয়, ক্ষমতার সঙ্গে ডিসেম্বরে আমার বিয়ে; ডিসেম্বরেই। ফুলস্টপ।

এলাকার হাট-বাজার, টেম্পু স্ট্যান্ড, বালু মহাল জল মহাল রামমহাল বাম মহাল এমনকি রহিম মহালে গায়ে হলুদের গান শুরু হয়,

ক্ষমতা বানুর দেশেরে বিয়ার বাদ্য আল্লা বাজেরে

আলাদীন মিয়ার দেশেরে বিয়ার বাদ্য আল্লা বাজেরে

ক্ষমতার বিয়ে হইব আলাদিন মিয়ার বিয়া হইব

ক্ষমতা বানুর সাথে রে।

 

২৩৫ পঠিত ... ১৮:১৪, মে ২৯, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top