পড়ালেখা শিখে নিজস্ব ক্ষেত্রে কাজ করে মোটামুটি ভদ্র ও শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করছেন। এটা সহ্য হচ্ছে না নিশ্চয়ই। ইচ্ছা করছে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতের মতো টিভি টকশোতে গিয়ে বাগাড়ম্বর করতে; সাবেক তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ পলকের মতো পেপসোডেন্ট হাসি দিয়ে সেলফি দিতে, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিপুর মতো পাঁচ তারা হোটেলে সামান্য ক'গাছা চুল কেটে টাক ঢেকে রাখতে, সাবেক বিসিবি প্রধান পাপনের মতো প্রেসিডেন্শিয়াল গ্যালারিতে বসে ক্রিকেট খেলা দেখতে; সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের মতো নেদারল্যান্ডসে সেকেন্ড হোম কিনতে, সাবেক ভিসি মীজানের মতো যুবদলের দায়িত্ব নিতে ইচ্ছা করছে; মোজাম্মেল বাবুর মতো সাড়ে চুয়াত্তর টিভির চেয়ারম্যান হতে ইচ্ছা করছে, আপনার স্ত্রী এয়ারপোর্টের ভিআইপি গেট দিয়ে সেকেন্ড হোমে যাতায়াত করবে, শ্যালিকারা বিদেশী গায়ক গায়িকার কনসার্টে সামনের সারিতে খলবল করবে, kI একটা ঘোড়ার ডিমের উপন্যাস বা কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন, তার জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেতে চান; মায়া সিটিতে দশ কাঠার একটা প্লট চাইছেন। এই যে সবার মতো অন্যতম জীবন যাপন করছেন, তাতে ভালো লাগছে না। আপনাকে ভিআইপি হতে হবে; প্রাডোতে চড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে হবে, ঐ দ্যাখো বেগুন বিক্রেতার নাতি-নাতনি আজ স্বপ্ন বিক্রি করতে এসেছে।
আপনাকে এখন যে কোনোভাবে তারেক রহমানের চোখে পড়তে হবে। জিয়া ফাউন্ডেশন ও কোকো ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে গিয়ে আপনাকে অপেরা সংগীত পরিবেশন করতে হবে। রাজকীয় রোমান পরিবারের লোকেরা যেমন গ্যালারিতে বসে গায়ক গায়িকার গান শুনে মুগ্ধতার এক টুকরো হাসি উপহার দিত; আপনার স্তব সংকীর্তন শুনে তারেক রহমান একটু মুচকি হাসলে বুঝবেন, আপনার হয়ে গেছে। আপনি শ্বশুর বাড়িতে পেস্ট্রি আইসক্রিম আম কিনে পাঠিয়ে সুখবরটা জানাতে পারেন।
বাংলার মধ্যে একটু ইংরেজি মিশিয়ে বলবেন বুঝলেন; তাহলে একটা রুলিং এলিটের ভাব ফুটে উঠবে। ফেসিয়াল, মেনি-পেডি এসব রুপচর্চায় নজর দিন। আর এমেরিকানদের মতো স্যুট টাই পরবেন, যেন আপনাকে হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তা মনে হয়।
ড।.ইউনূস লোকটা কত খারাপ; সেটা বর্ণনা করতে আপনার আওয়ামীলীগের অবসরপ্রাপ্ত শিকারি সাংবাদিক ও টকশো টকারের সাহায্য নিতে হবে; মাছের রাজা ইলিশ আর গুজবের রাজা আওয়ামিষ। আলী রীয়াজের প্রবন্ধে ইসলামোফোবিয়ার বিপক্ষে লিখে উনি কী করে প্রগতিশীলতার পৈতে হারালেন, তা জানতে কেতকীদির সাহায্য নিন। কেতকীদিদিরা সেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কাল থেকে প্রগতিশীলতার সনদ দিচ্ছেন, সুতরাং তাকে হাতে রাখুন।
আর্ট কালচারে তো ঘোড়ার ডিমের কোনো উন্নতি নাই; তাই আপনি আজ থেকে আওয়ামীলীগের প্লে বুক থেকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা শব্দ সংগ্রহ করে বলতে থাকুন। ছাপড়ি এশিয়াতে এলিট সাজার একটাই পথ, দাড়ি টুপি নিয়ে হাসাহাসি করা।
আপনার মাথায় যদি চকচকে টাক থাকে তাহলে জার্মান সেজে যান, রেনেসাঁর ম্যানেজার হতে ইউনূসকে মৌলবাদী বলে ডাকুন, আপনার আব্বার থুতনিতে গুম্ফহীন দাড়ি আছে তো কী হয়েছে; আপনি লিবেরেলিজমের পালোয়ান। আপনার সেন্স অফ হিউমার দুর্বল, আপনাকে তাই কুঁতে কুঁতে এমন রস করতে হবে, যাতে সিন্থিয়া-সুজানা-ললিতাদি হেসে হুটোপুটি খায়। আওয়ামীলীগের ঢাকা টু কলকাতা সিটিং সার্ভিসের কালচারাল উইংটাকে আপনাকে নিয়ে যেতে হবে ঢাকা টু বার্লিন ফ্লাইং সার্ভিসে। আপনি নিশ্চয়ই তাক লাগিয়ে দিতে পারবেন। বিএনপিকে হতে হবে ইংলিশ মিডিয়াম আওয়ামীলীগ। তাহলেই আপনাকে আর পায় কে! আপনি পালের গোদা হয়ে ঢাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে রেনেসাঁর আলো বিতরণ করতে পারবেন। এতে তারেক রহমান নিশ্চয়ই ইমপ্রেসড হবেন। আর হ্যাঁ ফেসবুকে সারাক্ষণ বাংলা লিখবেন না; চসারীয় ইংরেজিতে হলেও সুজানা সিন্থিয়াকে নিয়ে ইংলিশ ভিংলিশ সার্কেল গড়ে তুলবেন; যাতে শুধু বাংলাভাষী লোকেদের আপনারা বাঙ্গি, বুইঙ্গা বলে ডেকে রাজা পঞ্চম জর্জের ভাগ্নে ভাগ্নি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেন।
যদি পারেন, ইংরেজিতে জনতার জিয়া ও আপোষহীন খালেদাকে নিয়ে বই লিখুন; এতে আপনার মধ্যে একটা ডেইলি স্টার ডেইলি স্টার ভাব এসে যাবে।
প্রেস সচিব, প্রেস মিনিস্টার, বিশেষ সহকারী; এই পদগুলোকে টার্গেট করুন। অবশ্য আগে থেকেই যারা এইসব পদাকাংক্ষী, তারা আপনার দিকে গোবর ছুঁড়বে। তাতে কী! গোবরে মাখামাখি না হয়ে কে কবে ভিআইপি হয়েছে এই গোবরডাঙ্গায়।
মনে রাখবেন সৃষ্টিকর্তা জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন সফল পুরুষদের; আপনি শুধু বেছে নেবেন আপনি আরাফাত টু পয়েন্ট ও হবেন নাকি পলক টু পয়েন্ট হবেন।
এখন থেকে আপনার দায়িত্ব হবে পুরোনো বন্দোবস্তের মাধ্যমে গড়ে ওঠা অর্ধশতকের চাঁদাবাজি, দখল, লুণ্ঠন, ঘুষ-কমিশন, ভয় দেখিয়ে নতুন জমিদার হবার যে সমৃদ্ধ সংস্কৃতি; তাকে ইউনেস্কোর ইনট্যাঞ্জেবল হেরিটেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
আওয়ামীলীগকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বটিও এখন আপনার কাঁধে; কারণ রাম ছাড়া যেমন শ্যাম হয় না, যদু ছাড়া যেমন মধু হয় না ঠিক তেমনি বাচ্চু ছাড়া কাচ্চু হয় না, লালু ছাড়া কালু হয় না।
সময় নষ্ট না করে লেগে পড়ুন, এই স্বরলিপিতে সুর বসিয়ে গাইতে থাকুন,
নির্বাচন চাই নির্বাচন চাই
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাই
পতাকা ও গাড়িতে নির্বাচন চাই
চেয়ার ও তালুক পেতে নির্বাচন চাই
সংরক্ষিত আসনে অলংকার হতে নির্বাচন চাই
পাঁচ তারা হোটেলে স্যুট পরে ঘুরতে নির্বাচন চাই
ভীষণ ধমক দিতে নির্বাচন চাই
অপারেশন ক্লিন ইন্টেলেক্টে নির্বাচন চাই
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত পেতে নির্বাচন চাই
বাবু কালচারে ও ললিতলোভনকান্তিতে নির্বাচন চাই
দেশের মালিক হতে নির্বাচন চাই
ভিন্নমতকে বাপের দেশে পাঠাতে নির্বাচন চাই
হাট-মাঠ-জল-বালু মহাল পেতে নির্বাচন চাই
উন্নয়ন প্রকল্পের ফিফটি পার্সেন্ট খেতে নির্বাচন চাই
ইউনূস আপনি এক্ষুণি চলে যান নির্বাচন চাই।
পাঠকের মন্তব্য