আর্নেস্ট হেমিংওয়ের জীবনের ১০টি মজার ঘটনা

৩০৪৬ পঠিত ... ২১:২৩, জুলাই ২১, ২০১৮

'দ্য ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি', 'ফর হুম দ্য বেল টোলস' কিংবা 'আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস'; বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম সেরা তিন উপন্যাস লিখেছেন একজনই। লিখেছেন 'আ মুভেবল ফিস্ট'-এর মত অসাধারণ আত্মজীবনী, যা পড়তে পড়তেই কেউ অর্ধ শতাব্দী আগের প্যারিস ঘুরে আসতে পারবেন। ১৮৯৯ সালের ২১ জুলাই আমেরিকার ইলিনয়ে জন্ম নেয়া এই উপন্যাসিক পরপর দু'বছর জিতেছেন পুলিতজার এবং নোবেল। হ্যা, আর্নেস্ট হেমিংওয়ের কথাই হচ্ছে।

ছোটবেলায় মায়ের অতিরিক্ত শাসন আর খেয়াল-খুশিতে বড় হলেও, ভিতরে ভিতরে তিনি ছিলেন প্রচণ্ড ডানপিটে আর দুরন্ত এক ছেলে। সাধারণত সাহিত্যিক লেখকদের যেমন জীবন আমরা পড়ি বা জানি, তার সাথে হেমিংওয়ের যেন কোন মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। করতেন প্রচণ্ড মদ্যপান, শিকার করতে ভালোবাসতেন, ভালোবাসতেন ভ্রমণ আর এডভেঞ্চার, সমুদ্রে ফিশিং বোট নিয়ে যখন তখন বেরিয়ে পড়তেন টুনা নাহয় মারলিন শিকারে। এখানে সেখানে মারামারিতে জড়িয়ে পড়তেন। বৈবাহিক জীবনটাও খুব একটা স্থির ছিল না। তিনবার ডিভোর্স নেন, বিয়ে করেন মোট চারবার। সব মিলিয়ে একেবারে এলোমেলো জীবন... তারই মাঝে লিখে ফেলেছেন সব অসাধারণ সব উপন্যাস। বৈচিত্র্যময় জীবনে ঘটেছে অসংখ্য মজার, অদ্ভুতুড়ে সব ঘটনা। অসংখ্য মজার ঘটনা থেকে খুঁজে বের করা হয়েছে দশটি মজার ঘটনা, যা আজ থাকছে eআরকির পাঠকদের জন্য।  

১# প্রখ্যাত সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে মদ্যপান করতে খুব পছন্দ করতেন। তার প্রিয় পানশালা ‘স্লোপি জো’স বার’ যখন স্থান পরিবর্তন করে, তখন হেমিংওয়ে বাথরুমের একটি ইউরিনাল খুলে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। তার ভাষ্যে ‘আমি এখানে অনেক টাকা ঢেলেছি, তাই এটার মালিক আমি।’

২# হেমিংওয়ে তার জীবদ্দশায় অ্যানথ্রাক্স, ম্যালেরিয়া, নিউমোনিয়া, ডিসেন্ট্রি, স্কিন ক্যান্সার, হেপাটাইটিস, রক্তস্বল্পতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্ষতিগ্রস্থ কিডনি, লিভার এবং প্লীহা; ফাটল ধরা খুলি, ক্ষতিগ্রস্থ মেরুদণ্ড, মর্টার স্প্লিন্টারের ক্ষত, একটি অগ্নিকান্ড, তিনটি গাড়ি দুর্ঘটনা ও দুটি প্লেন ক্র্যাশের মুখোমুখি হয়ে বেঁচে যান। কিন্তু ৬২ বছর বয়সে নিজ হাতে প্রিয় শটগানের গুলিতে প্রাণ হারান হেমিংওয়ে। কেউ বলে আত্মহত্যা, কেউ বলে দুর্ঘটনা।

৩# বিখ্যাত আইরিশ উপন্যাসিক জেমস জয়েস এবং হেমিংওয়ে খুব কাছের বন্ধু ছিলেন এবং তারা প্যারিসে এক সাথে মদ্যপান করতেন। জয়েস খুব রোগা হলেও প্রায়ই কারো না কারো সাথে ঝামেলা পাকিয়ে ফেলে নিজে কেটে পড়তেন। আর হেমিংওয়েকে ডেকে বলতেন মারামারি করে আসতে।

৪# ‘দ্য ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি’-এর লেখকের পছন্দের কাজ মাছ ধরা, এমনটাই তো হওয়ার কথা। সমুদ্রে মাছ শিকার হেমিংওয়ের নেশা ছিল। ১৯৩৫ সালে বাহামার সমুদ্রে এক ঝাঁক টুনা শিকারের সময় এক দল হাঙর খুব ঝামেলা পাকালে, তিনি মেশিনগান নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করেন। যদিও তাতে খুব একটা কাজ হয়নি, রক্তের স্বাদ পেয়ে হাঙরের দল আরও উৎসাহে ঝাঁপিয়ে পড়ে টুনা ঝাঁকের উপর।

৫# ১৯৩৫ সালে ব্যর্থ হলেও, তার তিন বছর পর হেমিংওয়ে সফল হন। ১৯৩৮ সালে তিনি এক দিনে ৭টি মারলিন (সোর্ডফিশ জাতীয় বড় মাছ) শিকার করে বিশ্বরেকর্ড করে ফেলেন। তিনিই সম্ভবত প্রথম কোন জায়ান্ট টুনা অক্ষত অবস্থায় শিকার করেন।

৬# প্রখ্যাত আমেরিকান সাহিত্যিক ফ্রান্সিস স্কট ফিটজেরাল্ড ছিলেন হেমিংওয়ের খুব ভাল বন্ধু। দুই বন্ধু মিলে এক রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় হুট করে ফিটজেরাল্ড হেমিংওয়েকে খুব অস্বস্তি নিয়ে বলেন যে, তার স্ত্রী জেল্ডা, বিছানায় তার পারফরম্যান্স নিয়ে অখুশি এবং জেল্ডার দাবি, ফিটজেরাল্ডের পক্ষে কোন নারীকে তৃপ্ত করতে পারবে না। ফিটজেরাল্ড তার ‘ইয়ে’র দৈর্ঘ্য নিয়ে চিন্তিত এবং তিনি হেমিংওয়েকে বিষয়টা দেখতে বলেন। এরপর বাথরুমে যেয়ে ফিটজেরাল্ড নিজেকে উন্মুক্ত করলে হেমিংওয়ে সব দেখেশুনে রায় দেন, সাইজ একেবারে ঠিক আছে। ফিটজেরাল্ড তাতেও নিশ্চিন্ত না হতে পারলে হেমিংওয়ে বন্ধুকে বলেন, ‘নদীর ওপারে ল্যুভর মিউজিয়ামে গিয়ে মধ্যযুগের নগ্ন পুরুষদের ভাস্কর্য দেখে আসো।’

৭# ১৯৫৪ সালে আফ্রিকায় ছুটি কাটাতে যেয়ে কঙ্গোতে পরপর দুই দিন হেমিংওয়ে দুটি ভয়ানক বিমান দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়ে গুরুতর আহত হন। দুর্ঘটনার খবর যখন এন্তেবে (উগান্ডার গুরুত্বপূর্ণ নগরী) শহরে পৌঁছায়, সেখানকার সাংবাদিকেরা হেমিংওয়ের মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে খবর ছাপিয়ে দেন। দুইদিন পর হেমিংওয়ে এন্তেবেতে পৌঁছে পত্রিকায় নিজের মৃত্যুর খবর আর শোকবার্তা পড়েন।

৮# যমজ মেয়ে নিয়ে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের মায়ের অদ্ভুত মোহ ছিল। ছেলেকে ছোটবেলায় সবসময় মেয়েদের পোশাক পরাতেন, বড় মেয়ের জামা কাপড়ের সাথে মিলিয়ে। ছোটবেলাতেই মা তাকে চেলো বাজানো শেখার জন্য অনেক চাপাচাপি করেন। এমনকি শুধুমাত্র চেলো শেখানোর জন্য এক বছর স্কুলেও যেতে দেননি হেমিংওয়েকে। যদিও হেমিংওয়ে এই বাদ্যযন্ত্র একেবারেই পছন্দ করতেন না। তার ভাষায়, ‘ঐ চেলো- সেটা আমার চেয়ে বাজেভাবে পৃথিবীতে কেউ বাজাতে পারবে না।’

৯# মিয়ামি দ্বীপপুঞ্জের সর্বদক্ষিণের দ্বীপে হেমিংওয়ের বাড়ি ‘কি ওয়েস্ট’ (যা এখন জাদুঘর) অন্য অনেক কিছুর সাথে বিখ্যাত ছয় আঙুলের বিড়ালের জন্য। সাধারণত বিড়ালের থাবায় পাঁচটি করে আঙুল থাকলেও হেমিংওয়ের একটি ছয় আঙুলের হুলো বিড়াল ছিল। আর এই হুলো বিড়াল পুরো এলাকা ঘুরে প্রেম করে বেড়াত। যার ফলাফল অত্র অঞ্চলে অসংখ্য ছয় আঙুলের বিড়াল, যা কি না আজকেও পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।

১০# ছোটবেলায় মায়ের কাছে অদ্ভুত শৈশব কাটান হেমিংওয়ে। মেয়ে সাজিয়ে রাখা কিংবা জোর করে চেলো শিখানো ছাড়াও তার শৈশবজুড়ে মায়ের অদ্ভুত সব সাধ-আহ্লাদের ‘এক্সপেরিমেন্ট’ তার উপর দিয়ে গিয়েছে। একবার কোনো এক সাংবাদিক হেমিংওয়ের মায়ের সাথে লেখকের শৈশব নিয়ে কথা বলতে চাইলে হেমিংওয়ে মাকে রীতিমত হুমকি দেন, যেন তিনি ছোটবেলার কোনো গল্প সাংবাদিককে না বলেন!

৩০৪৬ পঠিত ... ২১:২৩, জুলাই ২১, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top