বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে জুলাই ২৪-এ সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত হবার পর আওয়ামী লীগের সদর দপ্তর দিল্লি ও উপ সদর দপ্তর কলকাতায় বইছে রায় প্রত্যাখানের হাওয়া।
দিল্লির লুটিয়েন্স সদর দপ্তরের সামনে কথা হয় আওয়ামী লীগের খাজাঞ্চি সম্পাদক এস আলমের সঙ্গে। তিনি মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রত্যাখ্যান করে বলেন, আমি বাংলাদেশে আমার নায়েব ও গোমস্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কথা দিয়েছে, আওয়ামী লীগের গায়ে যেন ফুলের টোকাটাও না লাগে; সে ব্যবস্থা করবে তারা। শুধু ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
আওয়ামী লীগের পুলিশ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, সাবেক পুলিশ সম্পাদক আল-মামুন স্যার রাজসাক্ষী হওয়ায়; আমাদের ঘরের কথা পরে জেনে ফেলেছে। কিন্তু তাতে কি, আওয়ামী লীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস লেখার জন্য মুনতাসির মামুন স্যার আছেন। আজকের এই মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা যে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তির ষড়যন্ত্র; সে বিষয়ে মামুনের আলো, মামুনের কণ্ঠ, মামুনভেলে, মামুনবিসি অজস্র উপসম্পাদকীয় প্রচার করবে। টক শো মামুনেরা সুশীলের বেশে ঝড় তুলবে। আমাদের কালচারাল মামুনেরা এরই মাঝে ফেসবুকে এই রায় প্রত্যাখ্যান করে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করতে শুরু করেছে।
পুরোহিত রতি অগ্নিহোত্রী রায়ের প্রভাব কাটাতে অগ্নিযজ্ঞ করতে লুটিয়েন্সের সদর দপ্তরে ঢুকছিলেন, তার পেছনে পেছনে আওয়ামী লীগের উপপুলিশ সম্পাদক বিপ্লব কুমারকে দেখা গেল যজ্ঞের সরঞ্জাম হাতে। তাকে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে অনুরোধ করলে; তিনি ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বোঝান, যজ্ঞের আগে কোন বাক্যালাপ নয়।
নমস্কারের ভঙ্গিতে নওফেল এসে বলেন, ইংলিশ মিডিয়া পেলে আমি প্রতিক্রিয়া দেব। কলকাতা উপ সদর দপ্তরে গেলে বাংলা সাহিত্যের কবি শরণ ও গোবর্ধনকে পেয়ে যাবেন; বাংলায় প্রতিক্রিয়া দিতে। আমি শুধু একটা কথাই বলব, আমরা এই রায় মানিনা। এই যে এখানে অগ্নিযজ্ঞ হচ্ছে; আগুন গিয়ে পড়বে বাংলাদেশের বাসে-ট্রেনে। এসব কেবল পৌরাণিক কাহিনীতেই হয় না; বাস্তবেও হয়, তার প্রমাণ লকডাউন ও শাটডাউনে পেয়েছেন আপনারা।
কলকাতা উপ সদর দপ্তরের সামনে আওয়ামী লীগের কৈ মাছ বিষয়ক সম্পাদক নানক উত্তেজিত হয়ে বললেন, আমরা হালায় কৈ মাছের প্রাণ। যতই মারো, পিছ থেকে টানো, মরবো না। ঐ যে দেখেন মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাওয়া আসাদুজ্জামান কামাল কি সুন্দর অপু উকিলের সঙ্গে বসে বাদাম খাইতেছেন।
ওবায়দুল কাদের বেরিয়ে আসেন মিডিয়ায় রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাতে। তিনি বলেন, এ কোন সকাল; রাতের চেয়ে অন্ধকার। বাংলার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা–কে দেবে আশা, কে দেবে ভালোবাসা!
অতিরঞ্জন বাজার পত্রিকার রিপোর্টার বলে, পয়েন্টে আশুন দাদা, পয়েন্টে আশুন।
কাদের আবার শুরু করেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগ, বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৃঙ্খল মুক্তির প্রতীক আওয়ামী লীগ।
এই সময়ের রিপোর্টার অস্থির হয়ে বলে, ভাটের কেত্তন ছেড়ে আসল কথাটা বলুন; এই রায় আপনারা মানছেন কিনা!
কাদের রেগে গিয়ে বলেন, কিসের রায়, কোন রায়! বাংলাদেশে রায় দেবার অধিকার শুধু আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগই রাষ্ট্র, রাষ্ট্রই আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনায় আস্থা রাখতে পারেনি যারা; তারা রাজাকার!
অতিরঞ্জন রাজার পত্রিকার রিপোর্টার নানককে উদ্দেশ্য করে বলে, ও কৈ মাছ দাদা, আজকের রায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে পারবে এমন কেউ কি আছে? উনি যে মহাভারত শোনাচ্ছেন; তাতে ফিরে গিয়ে যে ব্রেকিং রিপোর্ট দেব, সে উপায় তো নেই!
নানক ছাত্রলীগের সাদ্দামকে এগিয়ে দেন। সাদ্দাম শুরু করে, আজ বুলডোজার নিয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি আবার ৩২ নম্বর-এ, এ সেই বত্রিশ নম্বর যেখানে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মুক্তির পতাকা উড়িয়েছিলেন।
এই সময়ের রিপোর্টার এবার নানককে বলে, এই যে কৈ মাছ দাদা মহাভারত থামিয়ে যে রামায়ণ শোনার ব্যবস্থা করলেন। পেয়েছেন কি মশায়! কেউ টু দ্য পয়েন্ট কথা বলতে পারে না কেন!
নানক কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, ভাটের কেত্তন তো আমরা আপনাদের কাছ থেকেই শিখেছি দাদা। আগে বাংলাদেশের মানুষ সারাংশে কথা বলত; আপনাদের বয়ানবাজদের কাছ থেকে আমরা ভাবসম্প্রসারণ শিখেছি।
অপু উকিল এগিয়ে এসে সবাইকে শান্ত করে বলেন, আমরা রায় প্রত্যাখ্যান করেছি। এই ট্রাইবুনাল অবৈধ, ইউনুস সরকার অবৈধ, আমরা আওয়ামী লীগ বাদে সবাই অবৈধ।



পাঠকের মন্তব্য