হোয়াইট হাউজে দুপুরের খাবারে মহা আয়োজন দেখে আপ্লুত হয় আসিম মুনির। খেতে খেতে বলে, কী দরকার ছিলো এতোসব! আজকাল তো একটু স্যালাদ হলেই চলে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে, গরিবের বাড়িতে দুটি ডাল-ভাত খেয়ে যাবেন; এ আর এমন কী !
কৃতজ্ঞতাবোধে চোখে অশ্রু এসে যায় আসিমের। মনে মনে ভাবে, ইমরান খান অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট বলে এতো ভাব দেখায়; অথচ ডোনাল্ড ট্রাম্প কত বিনয়ী! কথাবার্তার এক পর্যায়ে বলে, আপনি রাশিয়া-ইউক্রেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতি করেছেন। এখন ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি করালে নোবেল কমিটি আপনাকে বাসায় এসে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিয়ে যাবে।
: আপনিও তো বেলুচিস্তানে শান্তি এনেছেন; অশান্তির নেতা ইমরান খানকে জেলে রেখে পাকিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইমরান সমর্থকদের ক্যাঙ্গারু কোর্টে বিচার করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলে আপনাকে কংগ্রেসে মেডেল দেবার ব্যবস্থা করবো। আপনি তো ফিল্ড মার্শাল নন; একজন প্রকৃত পিস মার্শাল।
আসিম হোয়াটস এপে আই এসপি আরকে মেসেজ পাঠায়, আমি ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছি। আই এসপি আর মিডিয়ায় এ খবর পাঠালে পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির রোল পড়ে যায়। তখন আবার মিডিয়ায় বার্তা পাঠানো হয়, হাসতে মানা।
এই খবরটা পেয়ে ভারতীয় মিডিয়া সজাগ হয়ে ওঠে। এতোদিন যারা মোদির বেস্ট ফ্রেন্ড ট্রাম্প বলে মুখে ফেণা তুলে ফেলতো; নতুন দিল্লি-ওয়াশিংটন হানিমুনের প্রতিবেদন বানিয়ে বলতো, কি মধুর এই সম্পর্ক! তারা আসিম-ট্রাম্পের লাঞ্চকে বড্ড দৃষ্টিকটু বলে বর্ণনা করে; আর ট্রাম্পকে নোবেল পুরস্কার দেবার প্রস্তাব নিয়ে রগড় করে।
গদি মিডিয়ার অর্ণব গোস্বামী বলে, মহামতি মোদি গুজরাট, কাশ্মীর, উত্তর প্রদেশে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন, বাংলাদেশে শান্তির জন্য যে লড়াই চালিয়েছেন পুরো একটি দশক, শান্তির জন্য অভিযান পরিচালনা করেছেন পাকিস্তানে; তাতে নোবেল শান্তি পুরস্কার বড্ড কম হয়ে যায় মোদিজীর জন্য।
ময়ুখরঞ্জন মোদিকে জিজ্ঞেস করে, আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড, আপনার ওয়ার্স্ট এনিমিকে ডেকে হালাল লাঞ্চ করাচ্ছে; আপনার প্রতিক্রিয়া কী!
: আমাকেও খুব করে ধরেছিলো যেতে; জামাই ষষ্ঠীর দাওয়াত খেতে; আমি না করে দিয়েছি। যে গৃহে মুসলমান পাত পেড়ে খায়, সেখানে খেলে আমার জাত যাবে। দেখি পরে কখনো যাবো; হোয়াইট হাউজের বাসন কোসন বদলালে তবে।
নেতানিয়াহু ফোন করে মোদিকে, ও দাদা কি সব হানি ট্র্যাপার দিলেন, সব তো ধরা পড়ে গেলো তেহেরানে। তেহেরানের লোকেশন দেবে কি তেল আভিভের লোকেশন ফাঁস করে দিয়েছে জেরার মুখে! ইরান যত্রতত্র বোমা ফেলে তেল বের করে দিলো যে!
: ইসলামি প্রজাতন্ত্রের হানি ট্র্যাপার, ঘোমটা খুলতে ছয় মাস লাগিয়ে দেয়; রেজিম চেঞ্জ না হলে ছাম্মাক ছাল্লো করা যাবে না। দেখি খোমেনিকে যে এতোদিন পারমানবিক বোমা তৈরি থেকে বিরত রেখেছিলো; সেই হিউম্যানিটির নেত্রীকে একটু বলে দেখি।
: একটু তাড়াতাড়ি করুন।
অজিত দোভাল ছুটে যায় লুটিয়েন্স প্যালেসে। শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করে খোমেনিকে ফোন করে থামাতে। হাসিনা তখন এতিম গ্রুপের সঙ্গে জুম মিটিং-এ ব্যস্ত ছিলো। সেটা থামিয়ে বলে,
আমি যত যাই করি না কেন, নোবেল শান্তি পুরস্কার আমাকে দেবে না। মুশকিলটা হচ্ছে শাহের ছেলে রেজা পদলোভী আমাকে অনেকদিন ধরেই অনুরোধ করছে ইরানের রেজিম চেঞ্জ করার জন্য। আমি তো ভেবেছিলাম, ওর জন্য ইরানের রেজিম চেঞ্জ করা গেলে; বাই ওয়ান গেট ওয়ান ফ্রি ভিত্তিতে বাংলাদেশের রেজিম চেঞ্জটা করিয়ে নেবো!
দিল্লিকে দিয়ে কাজ হবে না দেখে নেতানিয়াহু ফোন করে ট্রাম্পকে, ও ভাই একটা কিছু করেন! হাইফা শহরটাকে গাযা বানিয়ে দিলো। প্রমিজড ল্যান্ড ছেড়ে সবাই পালাচ্ছে!
ট্রাম্প তখন কাতারের ভাতারকে ফোন করে, ইরানকে বলেন তার তিনটি পারমানবিক কেন্দ্র থেকে ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিতে; আমি সেখানে তিনটি শিশু বোমা ফেলবো। এরপর আপনি কাতারে আমার এমেরিকান ঘাঁটি খালি করিয়ে দেবেন; ইরান ঐখানে বোমা হামলা করবে।
: এ আবার কেমন কথা আলমপনা!
: এটা হচ্ছে আর্ট অফ রেসলিং। দর্শক ভাববে রেসলাররা মারামারি করে মরে যাবে; আসলে হচ্ছেটা কচু!
কাতারের কথায় ইরান রাজি হতে চায় না; কারণ ভ্লাদিমির পুতিন বলেছে, বোমা লাগে দেবে মস্কো সেন; আপনারা চালিয়ে যান!
বিরস বদনে উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন চুক চুক করে বলে, বোতামে চাপ দিলেই ইজরায়েল ভস্ম হয়ে যাবে; অথচ আমারে কেউ জিগায় না ক্যারে!
আসিম মুনির ট্রাম্পকে ফোন করে ভারী গলায় বলে, ও ভাই, আপনি এই যুদ্ধবিরতি না করালে আমি পাকিস্তানে থাকতে পারবো না! আপনাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার পর থেকে আমাকে নিয়ে ট্রোল আর রগড়ের ঢোল চলছে।
কাতার ঐ এলাকার অশীতিপর বৃদ্ধ তুরস্ক, ইরাককে দিয়ে খোমেনিকে শান্ত করার চেষ্টা করে। নরেন্দ্র মোদিও খোমেনিকে ফোন করে বলে, ছেড়ে দিন দাদু। আপনি আমাদের উত্তর প্রদেশের ছেলে; অত্র অঞ্চলের গর্ব। এই যুদ্ধে আপনিই জিতেছেন।
পাঠকের মন্তব্য