একবার এক রাজ্যে নতুন রাজা আসন গ্রহণ করেই ঘোষণা দিলেন, তিনি সব বদলে দেবেন।
প্রজারা বেজায় খুশি। যাক, দিন-বদলের শুরু তাহলে এখানেই। খাজনা দিতে হিমশিম খেতে হবে না নিশ্চয়ই আগের মতো। পরদিন থেকেই শুরু হলো রাজার বদল কর্মসূচি।
এক প্রজা লালশাক কিনতে গেলে দোকানদার তাকে ধরিয়ে দিল পাটশাক।
কী হলো ভাই! আমায় লালশাক দেবেন না? দোকানি উত্তর দেয়, কী হে বাপু? তুমি কি জানো না যে পাটশাকের নাম হয়ে গেছে লালশাক?
চোখ কপালে ওঠা ব্যাপারটা দেখা গেলে বোঝা যেত, সত্যিই প্রজার চোখ কপালে শুধু উঠেছে না, গোল চোখে তাকিয়েও আছে।
কী বলছ? তাহলে পাটশাকের নাম কী?
পালং শাক!
আমি আসল পালং শাক কিনতে চাইলে কী বলব?
লালশাক!
বিটলামি করো আমার সঙ্গে?
না হে, এটা রাজার আদেশ।
প্রজা আর শাক কিনল না। পাশের দোকানে গিয়ে ঢেঁড়স চাইলো। দোকানি তাকে মুলা দিতে যাবে, তক্ষুনি প্রজা হালকা রেগে বলল, তোমায় ঢেঁড়স দিতে বলেছি।
এটাই ঢেঁড়স!
আমি কী ঢেঁড়স চিনি না ভেবেছ?
আজ থেকে এটাই ঢেঁড়স।
বাদ দাও, মুলা দাও আমায়।
এবার দোকানদার কুমড়ো দিল।
প্রজার তো রাগে দিগ্বিদিক হারানোর দশা।
তোমরা কী আমায় বাজার করতে দেবে না?
দেখেন, এটা রাজার নির্দেশ। বাজারের শেষ কোণায় একটা তালিকা দেখতে পাবেন। সব শাক-সবজির নাম পরিবর্তন করা হয়েছে রাজার নির্দেশে।
সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সে কাপড়ের দোকানগুলোতে চলে গেল। মাথাটা কেমন করছে, একটু ঠান্ডা করা দরকার। আগে চা খেলে বরং মন্দ হয় না। কার্তিক দার দোকানে গিয়ে কড়া এক কাপ চা চাইলো। মনে মনে সে ভাবছে, চায়ের বদলে অন্য কিছু না চলে আসে। এবার তার ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করে সত্যি সত্যিই চা এল।
প্রজা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, প্রিয় এই বস্তুটার অন্তত নাম বদলায়নি। কিন্তু চায়ে চিনি তো দেওয়া হয়নি।
দাদা, চিনি দিন একটু।
নিশ্চিত তো? চিনি দেব?
হ্যাঁ দাদা, একদম!
কার্তিক দা চায়ে লবণ মিশিয়ে দিল। লবণের নতুন নাম চিনি।
প্রজা এবার প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে আপন মনে বিড়বিড় করতে লাগল, রাজা এমন কেন করছেন, সবকিছুর নাম কেন বদলে দিচ্ছেন!
দোকানে একজন বিজ্ঞ তথা বয়স্ক চাচা ছিলেন।
তিনি বিষয়টা খোলাসা করলেন, আসলে রাজা ঘোষণা দিয়েছিলেন সব পাল্টে দেবেন। এজন্য সব জিনিসপত্রের নাম পাল্টে তিনি পাল্টাপাল্টি অভিযান শুরু করেছেন। শুনেছি, আরও পাল্টাবেন। এই যেমন, জায়গাগুলোর নাম, সৈনিকদের পোশাক, পাঠদান প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম, এমনকি এই রাজ্যের নামও পরিবর্তনের সুপারিশ রয়েছে। তোমার কী মনে আছে, তিনি এসেই বলেছিলেন, আমূল বদলে দেব?
সেটাই হচ্ছে।
প্রজা মুখ নিচু করে খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলল, চাচা, উনি কি পারবেন হেনার স্বামীকে বদলে সেখানে আমায় বসিয়ে দিতে?
চাচা উত্তর দিলেন, হতে পারে, যদি তুমি ও রাজার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তোমার স্ত্রীর নাম বদলে হেনা রাখো।
পাঠকের মন্তব্য