কত দূর আর কত দূর বলো মা!

২৩১ পঠিত ... ১৬:২৬, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫

30

শাহবাগে মাদ্রাসা শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির দাবিতে জটলা দেখে সহমত ভাই খবরটা শেয়ার করে দিয়ে লেখে; স্টেপ ডাউন ইউনূস। এরপর শিবব্রত দাদার কাছে ফোন করে বলে, ও দাদা খবর দেখছেননি; ইউসুফ সরকার তো এইবার যাইব গিয়া।

: কী হয়েছে সহমত ভাই!

: আমি শেয়ার দিছি; দেইখা লন।

শিবব্রতদাদা সাড়ে পনেরো বছর ধরে মাদ্রাসার শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের খবর শেয়ার করে ওপরে লিখে দিত, কাঁঠাল পাতাখোর। কিন্তু আজ মাদ্রাসা শিক্ষকদের শাহবাগে অবস্থান নিয়ে আর্দ্র হয়ে ওঠে। কিবোর্ড খেলিয়ে লিখে দেয়, কতই বা বেতন পান তারা; তারা কি মানুষ নন; ৫ আগস্টের পর ডাকাতির রাতে পুলিশকে ডেকে পাইনি; আর আজ পুলিশ মাদ্রাসা শিক্ষকদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। শিক্ষকেরে যে করিছে অপমান, একদিন অপমানে সে হবে সমানে সমান।

শিবব্রত দাদার অশ্রুঘন ফেসবুক পোস্ট দেখে অশ্রুসিক্ত হয় শরিয়ত ভাই। কিন্তু বেরসিক ভিন্নমত ভাই এসে লেখে, শহীদ মিনারে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের অনশনে ছাত্রলীগ ও পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ার সময় দাদা আপনার আজকের আবেগটা দেখিনি। ৫ আগস্টের পর আপনার আবেগটা বাড়ছে; আমগো প্রায়ই কান্দাইয়া দিতেছেন।

সহমত ভাই আবার ফোন করে, ও দাদা সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে ছাত্রদের জটলা; আবার সাত কলেজ জাইগা উঠছে; আজ মনে হয় ডে নাইট ম্যাচ হইব। আইসা পড়মু নাকি; এক লগে ম্যাচ দেখুমনে।

: এসে পড়ুন। ললিতাদি ফোন করছেন; ওটা ধরি কেমন।

ললিতাদি অত্যন্ত উত্তেজিত, পরীমনির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। থাকবে না, শিল্প-সংস্কৃতি-চলচ্চিত্র কিচ্ছু থাকবে না এদেশে। প্লিজ কিছু লিখো, আমি কপি পেস্ট করব।

শিবব্রতদাদা একটু গর্বিত ঢং-এ বলে, তোমরাও একটু লেখালেখি শেখ; আমি একা আর কত চাপ নেব। তোমাদের জন্য ফেসবুক স্ট্যাটাস লিখতে গিয়ে আজও একটা বই লিখে উঠতে পারলাম না।

ললিতা একটু পামপট্টি দিয়ে বলে, তোমার লেখার প্রতিভাটাকে হিংসা হয় দাদা; অমন যদি লিখতে পারতাম।

ফোনটা রেখে শিবব্রতের ভেতরে লেখক ভাবটা প্রবল হয়; একটু চায়ের তেষ্টা পায়। ওদিকে পপকর্ন না পেয়ে মুড়ি কিনে হাজির হয়েছে সহমত ভাই। সঙ্গে এক প্যাকেট রুচি চানাচুর। রুচি চানাচুর দেখে শিবব্রত দাদার মাঝে রুচি ভাব প্রবল হয়। লিখতে শুরু করে, ইউসুফ সরকারের ফ্যাসিস্ট কাজকর্ম দেখে আর রুচি হয় না লিখতে। আদালত যে মৌলবাদীদের ইশারাতেই পরীর গ্রেফতারি পরোয়ানা দিয়েছে; সেটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। প্রগতিশীলতার ওপর এ আঘাত সহ্য করা যায় না।

ভিন্নমত ভাই এসে মন্তব্য করে, এটা সেই বেনজিরের আমলের বোটক্লাব মামলা; শুনানিতে হাজির না হওয়ায় ফ্রেফতারি পরোয়ানা বেরিয়েছে।

ললিতাদি এসে বকে দেয় ভিন্নমত ভাইকে, নারী বিদ্বেষী, মুজিব বিদ্বেষী, ভারত বিদ্বেষী, মুক্তমনা বিদ্বেষী, সেকুলার বিদ্বেষী কোথাকার।

ললিতার কমেন্টে লাভ সাইন দিয়ে পথিকৃত বাতেন, মফিজ আকাশ, আকলিমা নদী ও আনারকলি নিজেদের প্রগতিশীল সমাজের একজন হিসেবে গর্বের চিহ্ন রেখে যায়। প্রতিদিন একবার প্রগতিশীলতার পৈতে পরে ফেসবুকে ঘুরে না গেলে গা ম্যাজ ম্যাজ করে। এভারেজ সমাজের একটু ওপরে বেশ কলচর টলচর করে; এমন একটা ভং না ধরলে; লোকজন রবার্ট মুগাবের কাজিন ভেবে ভুল করে। তাই রেগুলার এমন শ্যামল আর্যের গৌর সিগন্যালিং করতে হয়।

মাদ্রাসা শিক্ষক ও পরীমনি ইস্যু ঠিকমতো জমে না ওঠায়; সাত কলেজ ও ঢাবি প্রোভিসি ইস্যুটাতে রাত জেগে বাতাস দেয় সহমত ভাই, শিবব্রত দাদা, ললিতাদি ও আনারকলি আপা।

ঢাকা কলেজের ছাত্রদের শান্ত করতে গিয়ে হাসনাতের নাস্তানাবুদ হওয়াকে কেন্দ্র করে ঈদুল হাসনাত উদযাপন শুরু হয় পেঙ্গুইন প্রত্যাবর্তন শিবিরে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা ৫ আগস্ট আপাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে পেঙ্গুইনেরা পারলে জল দিয়ে জ্যান্ত গিলে খায় তাদের। তাই কোথাও তাদের সামান্য নাস্তানাবুদ হওয়াই; আপা ফিরে আসার রোশনাই মেলে ধরে, এই বুঝি হয়ে গেল, এই বুঝি হয়ে এল।

আশায় আশায় শিবব্রত দাদা ও সহমত ভাই ঘুমিয়ে পড়লে, জোড়া স্বপ্ন দেখে তারা। পরীমনি একটা ছাদখোলা জীপে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে; সামনে হাতিতে চড়ে ফিনিক্স পাখি হাতে রবার্ট মুগাবে। জোসেফের ভাই স্যালুটের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে; রাস্তার পাশে পপকর্ন ভেজে পাবলিকের হাতে ঠোঙ্গা তুলে দিচ্ছে হারুন। লেখক ভট্টাচার্য একটি বড় রুই মাছ হাতে দৌড়াচ্ছে, ট্যাংকের ওপরে নাচছে ইনু, লাল পতাকা ওড়াচ্ছে মেনন, বিহংগ বাস ভর্তি করে বরিশালের চিংড়ি এনেছে পংকজ, ট্রাম্পের ছবি হাতে দরবেশ হাস্যজ্জ্বল, মোদির ছবি হাতে দাঁড়িয়ে চিন্ময় প্রভু; পোস্টার বয় শেখ তন্ময়ের কাছে অটোগ্রাফ নিচ্ছে, রুপালী, সিনথিয়া, কল্পনা ও আলপনা, হেলমেট পরে সাদ্দাম ট্রাফিক কন্ট্রোল করছে, মোটর বাইকে কংগনা রানাওত রিভরভার রাণীর বেশে গান করছে, ঠা ঠা ঠা।  

একটা হেলিকপ্টার এসে গণভবনে নামে, তাপস কিবোর্ড বাজিয়ে গান করছে, কত দূর আর কত দূর বলো মা! পেছনে বেলারুশের স্বর্ণকেশীরা, মা মা বলে কোরাসে আ আ করছে। আপা হেলিকপ্টার থেকে নামলে সংস্কৃতি ভক্তেরা পথে হাত পেতে দেয়, সেই হাতের ওপর পা ফেলে তিনি হাঁটেন; শাইখ সিরাজ একটি ফুলকপি এনে উপহার দিয়ে বলেন, মাননীয়া এই মরশুমের প্রথম ফুলকপি আমি ছাদবাগানে ফলিয়েছি।

একটা কাঁটাতারের বেড়ার ওপাশে দাঁড়িয়ে দৈত্যের মতো অমিত শাহ অট্টহাসি দিয়ে বলছে, দিল্লিকে বাংলাদেশিমুক্ত করেছি।

শিবব্রত দাদার মা এসে ধাক্কা দিয়ে তোলে, ঐ শিবু আর কত ঘুমাবি, বাপটা যে বুইড়া হইছে; তারে যাইতে হয় বাজার করতে; আর জোয়ান পোলা পইড়া পইড়া ঘুমায়।

২৩১ পঠিত ... ১৬:২৬, জানুয়ারি ২৭, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top