ভারতের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রোপাগান্ডা

৮৫৩ পঠিত ... ১৭:০০, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫

28

বাংলাদেশ থেকে ভারতের লেন্দুপ দর্জি টু পয়েন্ট ও শেখ হাসিনা জনঅভ্যুত্থানের মুখে বিতাড়িত হয়ে দিল্লিতে আশ্রয় নেবার পর; ভারতের ক্ষমতা কাঠামোর রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ সম্পর্কে আকাশ কুসুম গল্প রচনার পর; বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান জনগোষ্ঠী কোনো রকম উস্কানিতে পা না দিয়ে ভারতীয় মিডিয়ার প্রোপাগান্ডাকে ব্যর্থ করে দেয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা ভারতের মিডিয়ায় গিয়ে তাদের প্রোপাগান্ডার প্রতিবাদ জানান। ভারতের মিডিয়ায় জুলাই বিপ্লব সম্পর্কে আকাশ-কুসুম অপপ্রচার পশ্চিমা বিশ্বে বিন্দুমাত্র আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি। মিডিয়া ও ইন্টারনেট কানেক্টিভিটির যুগে ভারতের ‘দশচক্রে ভগবান ভূত’ জাতীয় গুজব রচনা কৌশল হাস্যষ্পদ প্রমাণিত হয়। ফলে ইকোনোমনিস্টের কান্ট্রি অফ দ্য ইয়ার ২০২৪ হিসেবে সম্মানিত হয় বাংলাদেশ।

ভারত তার প্রোপাগান্ডার দ্বিতীয় পর্যায়ে ড. ইউনূস সম্পর্কে আজগুবি সব গল্প চাউর করেছে। ইউনূসের মেয়ে বাইডেন প্রশাসনে চাকরি পেয়েছিলেন, সুতরাং চাকরি হারালেন; ইউনূস বাইডেন প্রশাসনের কাছে বাংলাদেশের জন্য টাকা ধার নিয়েছিলেন; সুতরাং তা ফেরত দিতে হবে এখন; ইউনূস হিলারির নির্বাচনে অনুদান দিয়েছিলেন; সুতরাং ট্রাম্প তাকে দেখে নেবেন; এরকম অসংখ্য মিথ্যা কথা মালায় সেজেছে ভারতের ইউনূস বিরোধী প্রচারণা। ইউনূসের ওপর এই ক্রোধের অন্যতম কারণ গোটা বিশ্বে উনার উজ্জ্বল ইমেজ। উনি কোনো বিশ্ব সম্মেলনে গেলেই সবার মনোযোগের কেন্দ্রে চলে যাচ্ছেন; আর ইংরেজি বলতে পারেন না এই ভয়ে নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন জায়গায় জয় শংকরকে পাঠান। এই ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স ইউনুসের ওপর অন্তহীন ক্রোধে রুপান্তরিত হয়েছে। আর ইউনূসের ইমেজের কারণে ভারতের বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা বিশ্ব মিডিয়ায় পাত্তা পাচ্ছে না। ফলে মরিয়া হয়ে গেছে ভারত। তারা জানে তাদের তৈরি অ্যাসেট আওয়ামীলীগের মৃত্যু ঘটেছে। তাই জুলাই গণহত্যার খলনায়ক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের মৃতদেহটিকে ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসে এনে পরীক্ষা করতে চেষ্টা করছে ওর হৃদস্পন্দন আছে কিনা।

আর রয়েছে ভারতের পাকিস্তান কমপ্লেক্স। যে কোনো কিছুকে পাকিস্তান দিয়ে গুণ করে হিন্দুত্ববাদ দিয়ে ভাগ করে অংক কষার যে বাতিক; সেটা বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় এসে পড়ছে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় পাকিস্তান ও ভারতের বেশ কিছু রাজ্যের চেয়ে বেশি, সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ অগ্রবর্তী একটি দেশ। বাংলাদেশের মানুষের পরিশ্রম করার যে ক্ষমতা; তাতে যে কোনো পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম দেশটি। জাতিসংঘ মিশনে ভারত-পাকিস্তানের সেনাকর্মীদের চেয়ে বাংলাদেশের সেনাকর্মীদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বেশি আদৃত। আর হিন্দুস্থান বা ভারত যে মুসলিম বিদ্বেষের অংকে হিন্দু ভারত রচনায় উদগ্র কিংবা পাকিস্তান যে হিন্দু বিদ্বেষের অংকে ইসলামি পাকিস্তান রচনায় উদগ্র; বাংলাদেশ তা নয়। বাংলাদেশ রাজনীতির মূল প্রণোদনা বৈষম্যবিরোধী সক্রিয়তা; সাম্যভিত্তিক সমাজের সংকল্প। বাংলাদেশের অনুসরণীয় মালয়েশিয়ার মতো দেশে। ভারত ও পাকিস্তানের ইনফেরিয়র পলিটিক্যাল কালচার বাংলাদেশের অভিলক্ষ্য কখনোই নয়। কাজেই ভারত তার পাকিস্তান কমপ্লেক্সকে মনের মাধুরী মিশিয়ে বাংলাদেশে মাখানোর চেষ্টা করলে; তা হবে বীণা সিক্রির মতো অচল মস্তিষ্কের বাতিল কষ্টকল্পনা।

বাংলাদেশকে দেখতে শিখতে হবে স্বতন্ত্র আয়নায়। ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সাংস্কৃতিক যে পার্থক্য, ঐটাই বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক পার্থক্য। বাংলাদেশের কোনো সাবেক রাষ্ট্রদূত বীণা সিক্রির মতো লঘু প্রোপাগান্ডার ভাষায় কথা বলার কথা কল্পনাও করতে পারেন না। ক্লাস ইন ইটসেলফ বলে যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে; তা বাংলাদেশের সাবেক সামরিক ও বেসামরিক আমলাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণে পাবেন। ভারতের অশালীন গোবর ছোঁড়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন যে ধৈর্য্য ও বাকসংযমের পরিচয় দিয়েছেন; ওটাই বাংলাদেশের সংস্কৃতি।

সুতরাং কালচারালি অপেক্ষাকৃত শালীন বাংলাদেশ ক্ষমতা কাঠামো; কালচারালি ইনফেরিয়র ভারত বা পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোর কারো দ্বারা বিন্দুমাত্র প্রভাবিত হওয়া অসম্ভব।

ভারত আওয়ামীলীগের কালচারাল লেভেল দেখে বাংলাদেশের কালচারাল লেভেল মাপাতেই ভুলটা হয়েছে। অথচ ২০০৯-২৪ পর্বের আওয়ামীলীগ হচ্ছে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যে তৈরি একটি জনগোষ্ঠী। যারা দুর্নীতি, গুম, খুন, ক্রস ফায়ার, ছাত্রগণহত্যাকে কোনো অপরাধ বলেই মনে করে না। ভারতে গুজরাট গণহত্যা যেভাবে বিজেপির রাজনৈতিক বিজয়ের কাঁচামাল। গত সাড়ে পনেরো বছরে আওয়ামীলীগ ও বিজেপি তাদের আদর্শিক নৈকট্যের কারণে এত ঘনভাবে মিশেছে; যে চেহারা দেখে পার্থক্য করা মুশকিল কে বিজেপি আর কে আওয়ামীলীগ।  

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ভারতের ক্ষমতা কাঠামোর বাংলাদেশ বিষয়ক অপপ্রচার প্রসঙ্গে এই লেখায় ভারত বলতে এর ক্ষমতা-কাঠামো ও ক্ষমতা প্রভাবিত মিডিয়াকে বোঝানো হয়েছে। ভারতের সাধারণ মানুষ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বন্ধু। নাগরিক পর্যায়ে এই বন্ধুত্ব বৈরি পরিস্থিতিতেও অটুট থাকবে এ প্রত্যাশা রইল।

 

৮৫৩ পঠিত ... ১৭:০০, জানুয়ারি ২৫, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top