খুফিয়া ও সুফিয়া

২৪৫ পঠিত ... ১৭:২৩, ডিসেম্বর ০৭, ২০২৪

8

অতিরঞ্জনবাজার পত্রিকায় ডেস্কে বসে হারজিত চক্কোত্তী গান গাইছে, এক টানেতে যেমন তেমন দুই টানেতে সুখি, তিনটানেতে রাজা উজির চার টানেতে রুগী। অতিরঞ্জন আনন্দের ফেসবুক আপডেটে লেখা, গা শিউরে ওঠা হুঁশিয়ারি কট্টরবাদীদের, বাংলাদেশে নারীদের কী কী বন্ধ? হিন্দুমেয়েরা শাঁখা সিঁদুর পরে পথে বের হতে পারছে না, মুসলমান মেয়েরা গাইতে পারছে না রবীন্দ্রসংগীত। ওদিকে রাঁচি বাংলা টিভিতে ময়ূখ বলছে, আমি আজ আর হাসব না; শুধু কাঁদব, বাংলাদেশ থাকবে না, আজ আমার মন খারাপ।

এসব খবর দেখে টাবুকে ফোন করেন প্রসেঞ্জিত দোভাল, একটু ঘুরে দেখে এস তো হারজিত চক্কোত্তীর দেওয়া খবরগুলো কতটা সত্যি!

টাবু বলে, এই হারজিত কিন্তু সারাক্ষণ দম মারো দম গায়, ওকে সিরিয়াসলি নেওয়া কী ঠিক হবে!

: যাও তবু দেখে এস, কত শতাংশ ঢপ মারছে, আর কত শতাংশ বাস্তবতা। আমি অক্ষয়কে বলে দিচ্ছি, সে ডুব-সাঁতার করে গিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে ভুস করে উঠবে, ওর ছদ্মবেশ হবে মোল্লার। আর সালমান বজরঙ্গী ভাই যাবে পুরোহিতের বেশে। এখানে তুমি সুফিয়া হিসেবে গিয়ে খুফিয়াটা বুঝে এস। অপারেশন ইউসুফ চালু করছি আমরা।

অক্ষয় সদর ঘাটে পৌঁছে, দাড়ি গোঁফ লাগিয়ে আলখাল্লা পরে নেয়। এরপর সে কাকরাইল মসজিদে গিয়ে একটু ঘুমাতে চেষ্টা করে। তাবলীগের দুই গ্রুপের ঝগড়ায় তার ঘুমানো কঠিন হয়ে যায়। দোভালের ফোন আসে, কি মসজিদে কি হিন্দুদের বিরুদ্ধে কোনো শলা করতে দেখলে?

: এরা তো জোবায়েরপন্থী বনাম সাদপন্থী নিয়ে এত ঝগড়া করে যে চোখের দুটো পাতা এক করতে পারছি না!

সালমান বজরঙ্গী ভাই পুরোহিত সেজে একটা মন্দিরে গেলে মন্দিরের এক সেবক বলে, প্রভু আগে কখনও দেখিনি আপনাকে, আপনি ইসকন না তো। আমরা ওসব ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চাচ্ছি।

দোভালের ফোন আসে বজরঙ্গী ভাইয়ের কাছে, মন্দিরে কী দেখলে?

: এরা তো ইসকন বলে আমাকে এড়িয়ে চলতে চাইছে।

অক্ষয় মোল্লা ও সালমান পুরোহিত মিটিং পয়েন্ট ঠিক করে শ্যামলীতে। এরপর তারা একসঙ্গে মাথায় সাদা পাগড়ি পরা এক আধ্যাত্মিক গুরুর বাসায় যায়।

চোখের ছানি অপারেশনের পর কালো চশমা পরা আধ্যাত্মিক গুরু তাদের একে একে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এরপর বলেন, দরিদ্রের ইনসাফের জন্য আমাদের সম্প্রীতির সিলসিলা জারি রাখতে হবে। এতে হিন্দু ও মুসলমান উভয়ের একটা এজেন্সি তৈরি হবে।

এজেন্সি শব্দটা শুনে মুখ চাওয়া চাওয়ি করে অক্ষয় ও সালমান।

গুরু বলেন, গাইস্ট বা রুহের সাধনা করলে ধনীর বিরুদ্ধে পুচ, কুদেতা, বিপ্লবের কুদেতা হয়ে অবশেষে আমরা বিপ্লব সম্পন্ন করতে পারব। বিপ্লবের চারটি ধাপের কথা মনে থাকবে তো।

অক্ষয় ও সালমান উভয়েই মাথা নাড়ে। এরপর তাদের হাতে দুটি ঝুনঝুনি ধরিয়ে দিয়ে ভাব সংগীত পরিবেশন করেন গুরু। তারপর আসে নাশতা ও চা। দুজনেই ভাবের ঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে গুরুর বৈঠকখানায়।

টাবু সুফিয়া সেজে শাঁখারি বাজারে যায়। সেখানে নারীদের হাতে শাখা আর সিঁথিতে সিঁদুর দেখে জিজ্ঞেস করে, মৌলবাদিরা আপনাদের শাখা ও সিঁদুর পরতে দেয়!

নারীরা বিস্ময়ে তাকায়। একজন বলে, নিজেই পরে দেখেন, কেউ নিষেধ করে কিনা!

টাবু সিঁদুর দিয়ে শাখা পরে মুখমণ্ডলে চন্দনচর্চিত হয়ে পথে বের হয়। এক ভিক্ষুক এসে বলে, ও দিদি আইজকা কি আপনার বিয়া নাকি! গরিবরে কিছু দিয়া যান; আপনের স্বামীর হায়াতের জন্যি দুয়া করুমনে। আইজকাল যেই হারে ডিভুস হইতাছে; দুয়া করি, আপনাগো জোড়া সুখে থাউক।

টাবু ফকিরকে টাকা দিয়ে শাহবাগে হাজির হয়। সেখানে অতিরঞ্জন বাজার পত্রিকার খবর দেখে উত্তেজিত হয়ে ললিতা আপা ও আনারকলি আপা এসেছে প্রতিবাদী মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করতে। ব্যানারে লেখা, কাঁদো হিন্দু কাঁদো। একজন মাথা ন্যাড়া করে চিন্ময় সেজে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটি প্ল্যাকার্ড, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। টাবু ললিতা আপাকে জিজ্ঞেস করে, আপনাদের কি চলাফেরায় কোনো অসুবিধা হচ্ছে!

ললিতা আপা বলে, ৫ আগস্টের পর আমাদের আর কোনো স্বাধীনতা নেই। ফেসবুকে একটু সেজেগুঁজে ছবি দিলে লোকে বলে, আপা এত সাইজা যাইবেন কই! গণভবনে তো বুবু নাই!

আনারকলি আপা অভিযোগ করে, কদিন আগে ভারতের রাজস্থানে গিয়ে চেক ইন দিতেই ফেসবুকের লোকেরা এসে বলে, আসার আগে লুটিয়েন্স প্যালেসে গিয়া লুটেরা আপার সঙ্গে দেখা কইরা আইসেন গো। এত কটাক্ষ আর টিপ্পনীতে ঠিক মতো নিঃশ্বাস নিতে পারি না। দম বন্ধ হয়ে আসে।

আনারকলি অজ্ঞান হয়ে গেলে নক্সী পাঞ্জাবি পরে সিঁথিতে সিঁদুর ও হাতে শাখা পরা প্রতিবাদী সেলিম এসে বলে, ওঠো আনারকলি, ওঠো আনারকলি ওঠো, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করো।

দোভাল ফোন করেন, এনি আপডেট টাবু!

: যা দেখলাম, অতিরঞ্জনবাজারের স্থানীয় সংবাদদাতা সবই আফসোস লীগের লোক। হাসিনার পতনে বড্ড দিশেহারা হয়ে পড়েছে এরা। অতিরঞ্জনবাজার অফিসের মতো এখানেও সবজির সুঘ্রাণ পেলাম। সবই দম মারো দমের কীর্তি।

২৪৫ পঠিত ... ১৭:২৩, ডিসেম্বর ০৭, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top