সাধু বাবা

৪৮২৭ পঠিত ... ২০:২৩, জুলাই ২৬, ২০১৬


দিল্লীর এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বেনারসে যাকে তীর্থ যাত্রায়। সংসারে তার আপন বলতে কেই ছিল না। কাজেই যাবার সময় সে একটা সমস্যায় পড়ল। তার সঞ্চিত কিছু টাকা ছিল। সঙ্গে নিতে চাইল না সেগুলো। পথে ডাকাতরা না আবার সব লুটে নেয়। কিন্তু রাখবেই বা কার কাছে? বিশ্বস্ত কারো কাছে রেখে না গেলে বৃদ্ধ বয়সে শেষ সম্বল টুকু খোয়াতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তার মনে পড়ল গ্রামের শেষ প্রান্তের বটতলার সাধুর কথা। ওই সাধু বাবাই একমাত্র লোক যার কাছে টাকাগুলো রেখে তীর্থে যাওয়া যেতে পারে।
প্রয়োজনীয় অর্থ নিজের কাছে রেখে অবশিষ্ট অর্থ একটি থলিতে ভরে বৃদ্ধ ব্রাম্মণ গিয়ে হাজির হলো সেই সাধুর কাছে। কিন্তু সব শুনে সাধু বাবা রেগে বলল, ‘ তোমার সাহস তো কম নয়, হে। তুমি কি জানো না আমরা- সাধুরা দুনিয়ার সব ত্যাগ করেছি? যেখানে আমার নিজেরই কোন টাকা-পয়সা নেই, সেখানে আমি তোমার টাকা পাহারা দেব?’
ব্রাহ্মণ সাধুর হাতে পায়ে ধরে কাকুতি-মিনতি করতে লাগল। বলল, ‘আপনি পূণ্যবান লোক। আপনি দয়া করে এ টাকা কয়টা না রাখলে আমার আর তীর্থে যাওয়া হবে না, বাবা।’
ব্রাহ্মণের অনুরোধে সাধু কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে বলল, ‘ঠিক আছে। আমি দেখব, তবে ওসব স্পর্শ করতে পারবো না। তুমি বরং এক কাজ করো। ওই যে নিম গাছটি দেখা যাচ্ছে, ওখানে গর্ত করে টাকার থলে টা পুঁতে রাখো। তাহলেই চলবে।’
ব্রাহ্মণ খুশি হয়ে তাই করল। তারপর সাধুকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে তীর্থে যাত্রা করল।
কয়েক মাস পর তীর্থ থেকে ফিরে সে গেল সাধুর কাছে। টাকাগুলো চাইল। সাধু বলল, ‘তুমি তো ওই নিম গাছের নিচে টাকার থলিটা পুঁতে রেখে গিয়েছিলে। এখন খুঁড়ে বের করে নাও।’
ব্রাহ্মণ মাটি খুঁড়ল বটে কিন্তু কোন থলি পেল না। তারই ভুল হয়েছে ভেবে নিম গাছের চারপাশটাই খুঁড়ল। কিন্তু না, কোথাও নেই। টাকার থলির কোন চিহ্নই নেই। বেচারা বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ ভারী ব্যথিত হয়ে সাধুকে একথা বলতেই সাধু ভীষণ রেগে উঠল, ‘তুমি কি বলতে চাও যে আমি তোমার টাকা চুরি করেছি?’
ব্রাহ্মণ বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করল, ‘না, আমি তা বলছি না, বাবা। কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আপনি কি নিম গাছের আশেপাশে কাউকে মাটি খুঁড়তে দেখেছেন? এমন তো হতে পারে আপনি যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন কেউ হয়তো মাটি খুঁড়ে টাকার থলিটা নিয়ে গেছে।’
কিন্তু সাধু বাবা ব্রাহ্মণের কোন কথাই কানে তুলল না। উল্টো ধমক-ধামক দিয়ে তাড়িয়ে দিল তাকে।
বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ মনের দুঃখে বাড়ি ফিরে ভাবতে লাগল এখন সে কি করবে? সাধু বাবা এমন করল! কিভাবে সে টাকা উদ্ধার করবে? হঠাৎ করে বীরবলের কথা মনে পড়ল তার। দেরি না করে সে গেল বীরবলের কাছে।
সব শুনে বীরবল বললেন, ‘’চিন্তা কোরো না, ব্রাহ্মণ ঠাকুর। ওই সাধু ব্যাটার কাছে থেকে তোমার টাকা ঠিকই উদ্ধার করে দেব। আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।
এক ভৃত্যকে ডেকে ব্রাহ্মণের গ্রামের অবস্থান জানিয়ে বীরবল বললেন, ‘গ্রামের শেষ মাথায় বাটগাছের নিচে এক সাধু বাবা আছে। তুমি সোজা গিয়ে বলবে যে তোমার ভাই ব্যবসার কাছে দেশের বাইরে যাবে। সে সঞ্চিত টাকা নিরাপদে রাখার কোন স্থান খুঁজে পাচ্ছে না। তো সাধু বাবা কি তা কিছুদিনের জন্য রাখতে পারবে? ঠিক এই সময় বাহ্মণ যাবে সেখানে, তার টাকার থলির সন্ধানে। সাধু নির্ঘাত নিজেকে বিশ্বস্ত প্রমাণ করার জন্য তোমার সামনেই ব্রাহ্মণের টাকা ফেরত দেবে। ব্রাহ্মণ তার টাকার থলি নিয়ে চলে আসার পর তুমি অবিলম্বে তোমার ভাইসহ টাকা নিয়ে আসছ- এই বলে সাধুকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসবে। আর হ্যাঁ সাধুকে বলো- তোমার ভাই অনেক সোনার মহর রাখতে চায়।’
যেমন বলা তেমন কাজ। বীরবলের ভৃত্য সাধুকে মোহর রাখার কথা বলতেই প্রথমে সাধু রেগে গেল। কিন্তু সে অনেক বলে কয়ে সাধু কে রাজি করাল। যখন তাদের কথাবার্তা চলছিল, তখন বাহ্মণ গিয়ে হাজির হল সেখানে। সাধু বাবা তাকে খুব খাতির করে বলল, ‘আসলে তুমি গতকাল ভুল জায়গায় মাটি খুঁড়েছ। তুমি চলে যাবার পর আমার তা মনে পড়েছে। তাই আমি বের করে রেখেছি। এই নাও,’ বলে সে ব্রাহ্মণ কে তার টাকার থলিটা ফিরিয়ে দিল। ব্রাহ্মণ ফিরে গেল এবং বীরবলকে ধন্যবাদ জানাল।
ওদিকে বীরবলের ভৃত্য এই দৃশ্য দেখে সাধু বাবার প্রচুর প্রশংসা করল। তক্ষুণি সে ত্র ভাইকেসহ সোনার মোহর নিয়ে আসার কথা বলে বিদায় নিল। কিন্তু সাধু বাবা আর কখনোই ওই ভৃত্যকে দেখল না। সোনার মোহর গচ্ছিত রাখার ভাগ্যও তার হল না।

৪৮২৭ পঠিত ... ২০:২৩, জুলাই ২৬, ২০১৬

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top