যে কারণে আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত করে না

৬২৮ পঠিত ... ১৭:২৩, নভেম্বর ০৯, ২০২২

biyer dawat

১.

বন্ধুর বড় বোনের বিয়ে। অনেক চাপাচাপি করছে। যেতেই হবে। গিফটের কথা মনে পড়লে যেতে মন চায় না। ওদিকে বিয়েবাড়ির সুস্বাদু খাবারের ছবিগুলো চোখে ভাসছিল। কী যে করি!

খাওয়ার দিকের পাল্লাটাই ভারী হলো। যথারীতি বিয়ের দিন কমিউনিটি সেন্টারে হাজির। বিয়েবাড়িতে বর কনেকে একা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এখানে ঢুকেই সুমি আপুকে পেলাম। সবাইকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য নিশ্চয়ই দাঁড়িয়ে আছেন। আহা! কী আপ্যায়ন।

আপুকে জিজ্ঞেস করলাম ,আপু কেমন আছেন? আপনার নতুন জীবনের পথচলা শুভ হোক। আপু এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কোনো কথাবার্তা নেই। কী হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আজকাল কি শুভ কামনা জানানোও দোষের মধ্যে পড়ে? অবশেষে আপুর মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হলো।

: দেখে তো মনে হয় চশমার পাওয়ার ভালোই আছে।

: জি আপু। একদম পার্ফেক্ট।  

: তাহলে কে আপু আর কে আন্টি সেটা বুঝতে পারো না?

: ওহ! শিট। আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

আমার কী দোষ বলেন। আজকাল তো পার্লারে যদু, মধু, কদু যেই ঢুকুক না কেন, বের হয় সবাই মধু হয়ে! অনেকে শুনি বিয়েবাড়িতে নিজের বউকেচিনতে পারে না! সে তুলনায় আমার ভুল কিছুই না। তবুও এই বন্ধু আর কোনো দিন আমাকে  বিয়ের দাওয়াত দেয়নি!

 

২.

বন্ধুর কাজিনের বিয়ে। এবার আর আপুকে চিনতে ভুল করা যাবে না! বর-কনের সাথে কথাবার্তা বলে একটা ফাঁকা মতো জায়গায় আমি আর বন্ধু দাঁড়ালাম। পাশে বরের মামা আছে। দুই বন্ধু ফিসফিস করছিলাম। লোকটা আমাকে ডাকল।

: বাবা, যদি কিছু  মনে না কর দুই প্যাকেট সিগারেট এনে দিবা?

: স্যরি, আংকেল। আমি সিগারেট খাই না।

: তোমাকে খেতে বলছি না। শুধু এনে দিলেই হবে।

: এটা তো করা যাবে না আংকেল! ব্যাপারটা অনেকখানি যৌতুক দেয়া-নেয়ার মতো। দুপক্ষই অপরাধী। আমি সিগারেট খাই না। আপনাকে এনে দিলে তো আমার না খাওয়ার স্বার্থকতা থাকল না!

লোকটা কিছু না বলে হনহন করে সামনে থেকে চলে গেল। বিয়ে ভেঙে দেয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিল। আমি তো অবাক। আজব মানুষ তো! সামান্য সিগারেট না এনে দেয়াতে বিয়ে ভেঙে দিতে চাইছে! ও মাই গড!

একটু পরেই বন্ধুর কাছ থেকে আসল ঘটনা শুনলাম। বিষয় হলো সবাই জানে এই বিয়ে হচ্ছে কোনো আর্থিক যৌতুকবিহীন।

কিন্তু কাহিনির ভেতরে একটুখানি ভাইরাস ঢুকে গেছে। বর কনে দুজনের পরিবারই যথেষ্ঠ মালদার পার্টি। তো বরের মামা কনের বাবার সাথে ছোট্ট একটা গোপন চুক্তি করেছিল। কোনো কাক-পক্ষিও যেন টের না পায় এমনভাবে বরের বাবার অ্যাকাউন্টে ১০ লক্ষ টাকা জমা দিতে বলেছিল। আংকেল তা দিয়েছে। টাকা পয়সার তো আর আংকেলের কমতি নাই!

বরের মামার অভিযোগ হচ্ছে তিনি এই টাকার কথা কাউকে জানাতে নিষেধ করেছিলেন। এমনকি বরকে পর্যন্ত না। কিন্তু তার কথা রাখা হয়নি। আমি সিগারেট আনার ঘটনার মধ্য দিয়ে তাকে নাকি খুবই সূক্ষ্মভাবে জেনেবুঝে যৌতুকের ওই টাকা নিয়ে অপমান করেছি!

শেষপর্যন্ত অবশ্য বিয়েটা হয়েছিল। আল্টিমেট ক্ষতি আমারই। পরবর্তীতে আর বিয়ের দাওয়াত পাওয়ার কোনো চান্স নেই!

 

৩.

প্রায় বছর তিনেক পরে বন্ধু জুয়েলের ফোন।

: ভয়েস শুনে মনে হচ্ছে কোনো খুশির খবর। কাহিনি কী দোস্ত?

: সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে। তোকে কিন্তু আসতেই হবে। আর শোন...

: আর কোনো শোনাশুনি চলবে না দোস্ত। অবশ্যই আসব। মুরগির রানগুলো যেন বড় হয়!

: আচ্ছা ঠিক আছে রে ভাই। তুই আগে আমার কথাটা পুরো শোন।

: কোনো পুরো কথা চলবে না। পুরো হবে শুধু মুরগির রান! এখন রাখছি। বিয়ের দিন ঠিক হাজির হয়ে যাব।

যথারীতি বিয়ের দিন আমি কমিউনিটি সেন্টারে হাজির। বরের আসনে বন্ধু বসা। আহা! রাজপুত্র ফেল। কাছে গেলাম। ভাবীর সাথে অনেকদিন পর দেখা। ভার্সিটি লাইফের পর আর দেখা হয়নি।

: আরে ভাবী, এই যুগে কেউ মুখে ঘোমটা দেয় নাকি?

এতটুক বলার পর দেখি বন্ধু আমার হাত ধরে টানছে।

আরে বাবা, তুই টানাটানি শুরু করলি কেন? তোর সাথে তো এরপর নিয়মিত কথা হবেই। আজ একটু ভাবীর সাথে কথা বলতে দে। অনেকদিন পর দেখা হল।

বন্ধুকে কথাগুলো বলে আবার ভাবীর সাথে কথা শুরু করলাম।

: তো ভাবী যা বলছিলাম। মুখে ঘোমটা দিয়ে রেখেছেন কেন? ও বুঝছি। সব আমার এই বন্ধুর বুদ্ধি, তাই না? ভার্সিটিতে থাকতেও আপনার কাছে তেমন একটা আমাদেরকে ঘেঁষতে দিত না। আজ বিয়ের দিন যেন সবাই মুখ দেখতে না পায় তাই ঘোমটা দিয়ে রাখতে বলেছে। ছেলেটা আসলেই হিংসুক! দাঁড়ান। বিয়েটা হইতে দেন। তারপর দেখেন শালারে কী মাইরটা দেই!

যাই হোক। ভার্সিটি লাইফটা খুব মিস করি ভাবী। টিএসসির প্রাণোচ্ছল আড্ডা। কার্জনে সেদিন জুয়েলকে মারতে কী দৌড়টাই না দিয়েছিলেন আপনি। হল থেকে রান্না করে আনতেন। জুয়েলকে খাইয়ে দেয়ার দৃশ্যগুলো এখনো আমার চোখে ভাসে। আমাদের কিন্তু অনেক হিংসা হত তখন! কোথায় গেল সেসব দিন?

কোন লেখক যেন বলেছিলেন ভালবাসার মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া খুবই সৌভাগ্যের ব্যাপার। আজ আপনাদের এত বছরের প্রেম পূর্ণতা পাচ্ছে। আপনারা সত্যিই লাকি।

ঘোমটা সরানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমি ধপাশ করে পড়ে গেলাম। এ তো সেই মেয়ে না! এখন তো বিয়ে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে। বিয়েটা হবে কিনা জানি না। শুধু একটা বিষয় নিশ্চিত জানি। আমার আর কোনো বিয়ের দাওয়াত পাওয়ার চান্স নাই!

 

৬২৮ পঠিত ... ১৭:২৩, নভেম্বর ০৯, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top