একইদিনে ক্রিস্টোফার জায়েদ ও নোলান খানের জন্মদিন এবং নানান জটিলতা

৮২৮ পঠিত ... ১৫:০২, জুলাই ৩০, ২০২২

Nolan-zayed-khan

ক্রিস্টোফার নোলান এবং জায়েদ খানের জন্মদিন আজ। প্রতি বৎসর জুলাই মাসের ত্রিশ তারিখ আমি খুব কনফিউজড থাকি। কাকে আগে উইশ করবো? প্রথমে ভাবি ক্রিস্টোফার জায়েদকে করবো। পরে ভাবি, সবার আগে দেশ। দেশ রেখে হলিউড নিয়ে নাচানাচি আমার পছন্দ না। জায়েদ নোলানকে উইশ করার সিদ্ধান্ত নিই। পরমুহূর্তে মনে হয়, ক্রিস্টোফার খানের তুলনায় নোলান জায়েদ তো নস্যি। কী করছি আমি! আজব। মাথা গরম হয়ে যায় খুব। উলট পালট হয়ে যাই আমি। মাথা ঠাণ্ডা রাখা দরকার। দাবাং দেখতে বসি তাই। অর্ধেক দেখার পর মনে পড়ে আজ ক্রিস্টোফার নোলান পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ত্রিনিদাদ আবিষ্কার করেছিলেন। নোলান কেন মুভি-টুভি বাদ দিয়ে চর-দ্বীপ আবিষ্কার করতে যাবেন আমি ভেবে পাই না। অদ্ভুত! বন্ধুকে ফোন দিই। বন্ধু ধমকায় শুনে, 'কলম্বাস। গাধা ওটা ক্রিস্টোফার কলম্বাস। নোলান নয়। আর এটা আজ নয়, আগামীকাল। জুলাই মাসের শেষদিন আবিষ্কার করেছিলেন।'
'আজ কী করেছিলেন?'
'হন্ডুরাসের উপকূলবর্তী গুয়ানায়া দ্বীপে নেমেছিলেন।'
'জায়েদ নোলান তো হন্ডুরাসে নেই, বাংলাদেশে। কলম্বাস কেন হন্ডুরাসে নামবে?'
'জায়েদ নোলান কে?'
'আমাদের দেশের মানুষ৷ আজ তার জন্মদিন। কেন চিনবি না তুই? আজব! তোর জন্য আগামীকাল নাগপুরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধবে। ইতিহাস সাক্ষী।'
বন্ধু থতমত খায়, 'কী বলিস এগুলো? আমার জন্য দাঙ্গা বাঁধবে কেন?'
'তোদের মতোন মানুষদের জন্য দাঙ্গা বাঁধে।'
বন্ধু হতাশ হয়, 'তুই দাবাং দেখা বন্ধ কর ভাই। কথা শুন আমার। মাথা ঠাণ্ডা কর। ক্লিয়ার কর। জন্মদিন কার?'
'কার মানে? কলম্বাসের। জায়েদ কলম্বাস।'
'কলম্বাসের জন্ম তো ৩১শে অক্টোবর।'
'তুই যে বললি এইদিনে হন্ডুরাসে কলম্বাস জন্মেছিলেন।'
'ওরে ভাই, নেমেছিলেন, নেমেছিলেন। অবতরণ করেছিলেন চতুর্থ সমুদ্রযাত্রায় হন্ডুরাসে। জন্মগ্রহন করেননি।'
'জন্মগ্রহন না করলে তিনি টেনেট মুভি বানালেন কী করে?'
'কলম্বাস কবে মুভি বানালো?'
'কলম্বাসের কথা বলিনি, নোলান। আজ জন্মদিন যার।'
'ওকে। ওকে। আমায় বিষয়টা বুঝতে দে একটু। আজ নোলানের জন্মদিন। আজ আমাদের ববিতারও জন্মদিন।'
'আর তার ঠিক আগের দিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের মধ্যে হ্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জুলাই মাসের ঊনত্রিশ তারিখ।'
'হ্যাঁ। জ্যোর্তিবিদরা সৌরজগতের অন্যতম বামন গ্রহ এরিসও আবিষ্কার করেন সেইদিন।'
'আর পরদিন আমরা আবিষ্কার করি বাংলা সিনেমার দাবাং নক্ষত্র জায়েদ খানম ববিতা।'
'জায়েদ খানম ববিতা না, জায়েদ খান। শুধুই জায়েদ খান।'
'কিন্তু তুই তো সিঙ্গেল নাম বললি। এখন ডাবল বলছিস।'
'কী সিঙ্গেল নাম বললাম?'
'ববিতা।'
'ববিতা এবং জায়েদ খান দুইজন আলাদা।'
'কিন্তু একই দিনে জন্মগ্রহন করেছেন যে।'
'কী হয়েছে তাতে? এই দিনে তো বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় মারাও যান।'
'পথের পাঁচালীর বিভূতি?'
'না, বিভূতিভূষণ দুইজনও আলাদা। একজন বন্দোপাধ্যায়। অন্যজন মুখোপাধ্যায়।'
'জায়েদ খান কেন বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়কে মারবেন? মোটিভ কী?'
'জায়েদ খান বিভূতিভূষণকে মারেননি। তিনি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন।'
'ওহ। তার পর পরই তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।'
'হ্যাঁ, আজকের এই দিনেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। তাছাড়াও ইতালির নেপলস শহরে ভূমিকম্পে দশ হাজার লোকের প্রাণহানিও ঘটে।'
'একটা লোকের মৃত্যুতে কত কিছু। আহারে!'
'কোন লোকের মৃত্যু?'
'জায়েদ কলম্বাস। বিভূতিভূষণ মেরে ফেলল তাকে। তুই একটু আগে বললি।'
'বিভূতিভূষণ মারে নাই কাউকে ভাই।'
'তো মরলো কে?'
'বিভূতিভূষণ।'
'মদ টদ খেয়েছিস নাকি রে তুই?'
বন্ধু দাঁত কিড়মিড় করে। ফোনে খচখচ কিড়কিড় আওয়াজ পাই। রাগ ফেটে বের হতে গিয়েও হয় না তার। আমি হাই তুলে বলি, 'আগামীকাল জে.কে. রাউলিং-এর জন্মদিন বন্ধু।'
'জানি।'
'হ্যারি পটারেরও জন্মদিন।'
'হ্যাঁ হ্যাঁ। হ্যারি পটার, হারমায়োনি, রন সবার জন্মদিন। জে.কে. রাউলিং-এর সঙ্গে ওরা সবাই কানেক্টেড।'
আমি দুঃখী স্বরে বললাম, 'সবাই কানেক্টেড নয় বন্ধু, আগামীকাল মোহাম্মদ রফির মৃত্যুদিনও।'
'জন্ম মৃত্যুদিন নয় শুধু, ঐ দিন ঐতিহাসিক একটা দিনও বটে। নীল আর্মস্ট্রংরা এপোলো-১৫ নিয়ে চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন ঐ দিনে।'
'কেন?'
'কেন আবার? চাঁদের বুকে মনুষ্যের পায়ের চিহ্ন রেখে আসতে।'
'কিন্তু চাঁদে তো ইতোমধ্যে একজন নেমেছিলেন ঐ দিন।'
'কে?'
'কলম্বাস, ক্রিস্টোফার কলম্বাস।'
'সে হন্ডুরাসে নেমেছিল কুত্তা, হন্ডুরাস হন্ডুরাস।'
'তা বটে। হ্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য বোধহয়।'
'হ্যারিস চুক্তির সঙ্গে কলম্বাসের কোনো সম্পর্ক নাই।'
'কিন্তু তুই যে বললি হ্যারির সঙ্গে জে.কে. রাউলিং এর সম্পর্ক। ওরা কানেক্টেড।'
'ভাই, তুই মন দিয়ে শুন। আমি ক্লিয়ার করি। হ্যারিস চুক্তি, হ্যারি পটার, দুইটা আলাদা বিষয়। কলম্বাস, এপোলো-১৫, দুইটা আলাদা বিষয়। হন্ডুরাস আর চাঁদ এই দুইটাও আলাদা বিষয়। বুঝা গেল?'
'অর্থাৎ তুই বলতে চাচ্ছিস ক্রিস্টোফার হন্ডুরাসে নেমেছে আর নোলান আমেরিকায়। আলাদা আলাদা।'
'ক্রিস্টোফার নোলান দুইজন একই ব্যক্তি।'
'অথচ বিভূতিভূষণ দুইজন আলাদা বললি তুই। পাঁচ মিনিট আগে।'
'বিভূতিভূষণ দুইজন আলাদা। ক্রিস্টোফার নোলান একজন। এক।'
'কলম্বাস কে তাহলে?'
'কলম্বাস অন্য একজন। সে আমেরিকা আবিষ্কার করেছে।'
'ছ্যাহ! হন্ডুরাসে নেমে আমেরিকা আবিষ্কার করলো কী করে রে?'
'কলম্বাস সমুদ্রযাত্রা করেছে। চারবার। যেটা আবিষ্কার করেছে, সেটার মূল্য পায়নি বেঁচে থাকতে। তবে মেধাবী মানুষ ছিল, দারুণ মনোবল। জলের সঙ্গে সখ্যতা ছিল খুব।'
'জলের ওপর দিন রাত ভেসে থাকলে চাঁদে গেলো কখন?'
'কলম্বাস চাঁদে যায়নি।'
'তুই তো আমায় পাগল করে দিচ্ছিস। চাঁদে নোলান খানও তো যায়নি। স্পুটনিক-২ কি একলা গেলো?'
'স্পুটনিক-২ 'তে লাইকা ছিল।'
'অথচ তুই বললি নীল আর্মস্ট্রং ছিল।'
'ওটা এপোলো-১৫।'
'দুইটার পার্থক্য কী?'
'একটা আমেরিকার, আরেকটা রাশিয়ার।'
'নোলান খান কোনটায় ছিল?'
'কোনোটায়ই না। ওয়েট, নোলান খান কে?'
'বাহ, দেশের মানুষ চিনিস না। দেশদ্রোহী! তুই পাকিস্তান চলে যা।'
'মাঝখানে পাকিস্তান আসলো কোথা থেকে? কি আশ্চর্য!'
'কোনো আশ্চর্য না। তুই হন্ডুরাস খানকে চিনিস না। তোর জন্য পাকিস্তান ঠিক। তুই ঐখানে যা। জে.কে. রাউলিং-এর সঙ্গে সংসার কর। কোনো এক বৎসরের ৩০শে জুলাই, অর্থাৎ আজকের এই দিনে মুসোলিনির মতোন একটা বাচ্চা হোক তোর।'
বন্ধুর অসীম ধৈর্য। থতমত খেয়ে পুনরায় সংশোধন করার চেষ্টা করে আমায়, 'মুসোলিনির জন্ম তার আগের দিন। গতকাল। ২৯শে জুলাই।'
'বিয়ের আগেই বাচ্চা। তুই তো সমাজ মানবি না।'
'আমি কোথায় বিয়ে করলাম?'
'একটু আগেই তো বললি, বিয়ের আগের দিন মুসোলিনির জন্ম হলো।'
'মুসোলিনি ঐ দিন জন্মগ্রহন করেছিলেন। মুসোলিনি আমার সন্তান না।'
'তো কার সন্তান?'
'আলেসান্দ্রোর সন্তান।'
'আলেসান্ড্রো তোর সন্তান?'
'না।'
'তুই তাকে কিভাবে চিনিস তাহলে?'
'আমি কেন, সবাই চেনে তাকে।'
'আলেসান্দ্রো তোর সন্তান না, অথচ সবাই মুসোলিনিকে চেনে। পিতাকে চেনে না। আফসোস। দুনিয়ার কত রঙ ঢঙ!'
'আলেসান্দ্রো আমার সন্তান না। আলেসান্দ্রো বেনিতো মুসোলিনির পিতা।'
'ওহ। মুসোলিনি তোর সন্তান। আলেসান্দ্রো তোর ঐ সন্তানের পিতা।'
'চুপ তুই, একদম চুপ। মুখ খুললে দাঁত খুলে নেবো তোর। চুপ।'
আমি চুপ করে যাই। বন্ধুর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। সময় আমাদের জন্য থেমে থাকে না। জায়েদ নোলান এবং ক্রিস্টোফার খানের জন্মদিন পার হয়ে যাচ্ছে। আমি এখনও চুপ করে আছি। মুখ খুললেই আমার দাঁত উপড়ে নেবে মুসোলিনির দ্বিতীয় পিতা। অথচ মাঝে মাঝে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, স্পুটনিক-২ হন্ডুরাসে অবতরণ করার পর আলেসান্দ্রো কলম্বাস কেন বিভূতিভূষণকে মেরে ফেললেন? মোটিভ কী?
৮২৮ পঠিত ... ১৫:০২, জুলাই ৩০, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top