রাতে এক ছোটো বোন নক দিল, আপু শীঘ্রই আমাকে একটা ঘিবলি করে দ্যান!
: ঘিবলি কী?
আরেহ, ঐ যে কার্টুন পিক! এখন ট্রেন্ডিং-এ যেটা, প্লিজ আপু...
ফেসবুকে কয়েকঘণ্টা ছিলাম না তাতেই কত কী মিস হয়ে গেল। যেহেতু সে আমার ছোটো বোন, বড় আহ্লাদী ছোটো বোন—তাই করে দেব কথা দিয়ে ফেললাম।
ফেসবুকে ঢুকেই দেখি সব কার্টুন হয়ে গেছে, সমস্যা কী! যেহেতু কথা দিয়েই ফেলেছি তাই একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে ওর ‘ঘিবলি’ বানিয়ে পাঠালাম। খুশি হয়ে বেচারী সাথে সাথে আপলোড করেছে, যেন তৃষ্ণার জল হাতে পাওয়া মাত্রই গলাধঃকরণ। ভালো, সমস্যা নেই! কিন্তু সে পোস্টে আমাকে এডিটিং-এর ক্রেডিট দিয়ে ট্যাগ দিয়েছে। ট্যাগ রিভিউ অফ করা ছিল এবং আমি আবারও কিছুক্ষণের জন্য ফেসবুকে ছিলাম না।
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আরেক ছোটো বোন ফোন দিল, হুম টিনা আপুকে তো ঠিকই দিলে আর আমার ম্যাসেজই সিন করো না! হতে পারে কাজে আমি একটু স্লো, তাই বলে মেসেজ তো অন্তত সিন করবা! কাজ ফাস্ট করব, এখন আমারটা করে দাও!
এত কথার মাঝে একটু সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কী করে দেব?
: গিবলি!
: সেটা আবার কী!
: ঢং? দাও তাড়াতাড়ি!
আচ্ছা মুশকিল তো! পরে বুঝলাম যাহা ঘিবলি তাহাই গিবলি।
ছটফট করতে থাকা বোন এবার দিল কাপল পিক, এডিট করে পাঠালাম। এদিকে মেসেঞ্জারে অন্তত ২০ জন নক দিয়ে এডিট করার রিকোয়েস্ট করে রেখেছে। আরেহ যন্ত্রণা!
একটু কিউরিসিটি হলো, খোঁজখবর নিয়ে জানলাম জাপানিজ ভদ্রলোক মিয়াজাকি হায়াও-এর কঠিন পরিশ্রমের, অধ্যাবসায়ের কথা। কীভাবে মানুষ এত মেধাবী হয়!
এদিকে পরের বোনটি কাপল ছবি আপলোড দিয়েছে, ট্যাগ না দিলেও সে অন্তত এডিটিং করার ক্রেডিটটা দিতে পারত!
ওয়েট, এডিটিং কী সত্যিই আমি করেছি?
মিয়াজাকি এত বছর ধরে যে অক্লান্ত পরিশ্রম এই কার্টুন ক্যারেক্টারগুলোর পেছনে দিয়েছে সেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিছু ফিচার যোগ করেই কোনো ক্রেডিট না দিয়েই তো ছবিগুলো এমন অ্যাভেইলেবল করে দিচ্ছে!
আমরা জিবলি কে ঘিবলি থেকে গিবলি বানিয়ে দেদারসে গিলে যাচ্ছি, বিনা ক্রেডিটে! হঠাৎ আরেকটা মেসেজ আসলো, ক্রাশের।
একটা ছবি এডিট করে দিতে বলছে।
‘প্রতি ছবি ৫০০ টাকা, ১০% ডিসকাউন্ট শুধুমাত্র আপনার জন্য’ লিখে উত্তর দিলাম।
এরপর ক্রাশ আর মেসেজ সিন করে না। সব দোষ মিয়াজাকির। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।
পাঠকের মন্তব্য