ফাঁকা পকেটে ঢাকা অভিযান

১২১ পঠিত ... ১৭:৫১, জানুয়ারি ০৯, ২০২৫

20

রাজু এক সাদাসিধে ছেলে। তার স্বপ্নগুলোও তার মতো সাধারণ—সকালবেলা দুধের মালাই দিয়ে রুটি খাওয়া, কিংবা শরতের কোনো দুপুরে নৌকায় শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা। তবে তার এক অদ্ভুত স্বপ্নও ছিল—ফাঁকা পকেটে ঢাকা শহর ঘুরে বেড়ানো এবং সারাদিন সার্ভাইভ করা। এমনই কোনো এক দিনে, তার পকেটে টাকা ছিল না, কিন্তু মনে ছিল আশা ভরা আর সামান্য হেঁটে চলার শক্তি।

আজ সেই দিন। পকেটে কোনো টাকা-পয়সা নেই, একমাত্র যা আছে, তা হলো তার বিশ্বস্ত বাটার স্যান্ডেল। জুতো পায়ে দিয়ে ঢাকার রাস্তায় পা রাখল। আজ ঢাকা শহরটা একটু অদ্ভুত লাগছে—সোনালী রোদে ঢাকা, শহরের রাস্তাও বেশ ফাঁকা, জ্যাম যেন কিছুটা কম। হাঁটতে হাঁটতে রাজু প্রায় ভুলেই গিয়েছিল যে, তার পকেটে টাকা নেই। কোথায় যাবে, কী করবে, এসব ভাবতে ভাবতে চলছিল সে। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটুকু পথ চলে আসছে। খিদায় পেটও চো চো করছে। 

ঢাকা শহরে টাকা-পয়সা ছাড়া সার্ভাইভ করা সম্ভব, কিন্তু খাবার ছাড়া তো কিছুই সম্ভব না। ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা রিকশা তার কানের পাশ দিয়ে চলে গেল। রিকশাওয়ালা চেঁচিয়ে বলল, ফুটপাতে হাঁটেন মিয়া! রাজু ভাবল, ফুটপাতে হেঁটে কী হবে? শপিং মলগুলো যেন ওদের সাব ব্রাঞ্চ ফুটপতে খুলে ফেলছে। এত এত দোকান, মানুষের ভীড়। ভালোই লাগে না। কিন্তু রাস্তায় হাঁটাও যাচ্ছে না। ট্রাফিক বাড়ছে একটু একটু করে। অগত্যা সে ফুটপাথেই উঠে হাঁটা শুরু করল। সামনে দেখে এক লোক পুরোনো চেয়ারের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, টেনশন ফ্রি জীবন চাইলে আজই চেয়ার কিনুন! দাম বেশি না, ২০০ টাকা মাত্র।

রাজু ভাবল, এই চেয়ার কিনলেই হয়তো জীবন সোজা হয়ে যাবে! কিন্তু সমস্যা একটাই—টাকা নেই। কোথায় যাবে তাও জানে না, আর চেয়ার কিনলে পেটের ক্ষুধা মিটবে কিনা সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। সে চেয়ার বিক্রেতার কাছে গিয়ে বলল, ভাই, এই চেয়ারে বসলে কি সব সমস্যা মিটে যায়?

চেয়ার বিক্রেতা তাকে বিরক্তিসহ ঠোঁট বাকিয়ে পালটা প্রশ্ন করে উঠেন, আপনি কি চেয়ার কিনবেন নাকি কিনবেন না?

রাজু একটু অস্বস্তিবোধ করে, তারপর বলল, আমার তো এখন একটাই সমস্যা—টাকা নেই, খাবারও নেই, আর সারাদিন চলতে হবে। তবে যদি চেয়ার কিনলে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, আমি নিশ্চয়ই কিনে ফেলতাম।

চেয়ার বিক্রেতা চুপ করে কিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন, দেখেন, আপনার মনে হয় একটু সমস্যা আছে। আপনি আমার সঙ্গে চেয়ার বেচুন, আর রাইত পর্যন্ত খাইতেও পারবেন আমার সাথে। সাথে আমি আপনাকে চেয়ারও দিমুনে।

রাজু একটু আশ্চর্য হলো, কিন্তু খাবার, চেয়ার এসবের সুযোগ পেয়ে সে আগ্রহী হয়ে উঠল। কয়েক ঘণ্টা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে, বসে বসে চেয়ার বিক্রি শুরু করল। তার মুখে হাসি আর চমকপ্রদ কথা শুনে অনেকেই চেয়ার কিনছে দেখে তার মনটাও ভালো হয়ে গেল। 

মাঝখানে পরিচিত এক বন্ধুকে হেঁটে যেতে দেখে তাকেও ডাক দিল রাজু। বন্ধুকে বলল, দোস্ত একটা সাইড বিজনেস শুরু করলাম। তোর কি কোনো চেয়ারের দরকার আছে? চাইলে নিতে পারছ, বেশ শক্ত-পোক্ত আছে চেয়ারটা। রাজুর বন্ধু রাজুকে জিজ্ঞেস করে,কীরে এসব শুরু করলি কবে থেকে? 

: আজ থেকেই। আজকের জন্যই। টাকা পয়সা ছিল না। হাঁটতে বের হইছিলাম। খাবারও খাই নাই। উনি বললেন চেয়ার বিক্রি করতে, বাকি সব কিছুর দায়িত্ব উনি নিছেন। রাজুর বন্ধু অবাক হয়ে বলল, বলিস কী! মাসের শেষে তো আমারও এমন সাইড বিজনেস শুরু করা লাগবে। টাকা পয়সা তো কিছুই থাকে না পকেটে। 

চেয়ার বিক্রি শেষ হওয়ার পর, চেয়ার বিক্রেতা তাকে রাতে বিরিয়ানি খাওয়াল, এবং ফেরার পথে বাসায় যাওয়ার টাকাও দিল। ফেরার আগে রাজু চেয়ার বিক্রেতাকে হাসতে হাসতে বলল, আমার মনে হচ্ছে চেয়ার কেনার চেয়ে চেয়ার বিক্রি করে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি। 

বাসায় ফিরতে ফিরতে রাজুর মনে হলো, জীবনে টাকা-পয়সা আসলে কোনো সমস্যাই না। টাকা-পয়সা ছাড়া বের হয়েছিলাম, বিরিয়ানি খেয়েছি, একটা চেয়ারও বাসায় নিয়ে আসছি। এরপর আবার বের হলে একটা খাট আনব, তারপর একটা ফ্রিজ, একটা রাইস কুকার, ভাবতে ভাবতে রাজুর মনে হচ্ছে জীবনে কোনো সমস্যাই নাই। আরে চেয়ারটা আসলেই কাজ করছে। লোকটা ঠিকই বলেছিল, চেয়ার কিনলেই জীবনের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

 

১২১ পঠিত ... ১৭:৫১, জানুয়ারি ০৯, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top