গত জুলাইতে আমি ভুল করেছিলাম, অনেক বড় ভুল। সেই ভুলের মাশুল দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। আমি তখন সবে ফিডার খাওয়া ছেড়ে পাতলা খিচুড়ি খাওয়া শুরু করেছি। আমার বন্ধুরা তখনও ফিডার খায়। এই অবুঝ বয়সে আন্দোলনে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমাদের ছিলো না। কিন্তু কিছু সমন্বয়ক নামধারী দেশের শত্রুরা আমাদের ব্রেইন ওয়াশ করালো, আমাদের ভুল বোঝালো, আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিলো লীগ আমাদের শত্রু। আমরা তো ছোট, আমরা অবুঝ, আমরা ওদের কথা বিশ্বাস করলাম। বিশ্বাস করে ধরা খেলাম। ভুল পথে পা বাড়ালাম। আজ আমার আফসোসের সীমা নেই। সকাল থেকে কাঁদছি। দুই চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে। আপার জন্য বুকের ভেতরটা হাহাকার করছে। আগে জানলে আন্দোলনে যেতাম না, আগে বুঝতে শিখলে এই ভুলের পথে পা বাড়াতাম না।
জুলাই এর আগে আমাদের দেশটা কত সুন্দর ছিলো। কোথাও কোনো দূর্নীতি, হানাহানি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি, কিচ্ছু ছিলো না। আগের সকল নেতা, মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান, সভাপতি, সহ সভাপতি সবাই জনগনের জন্য কাজ করতো, আমাদেরকে কোলে করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতো। আদর করে চুমু খেতো। আমাদের প্রয়োজনে সবার আগে ছুটে আসতো। জিনিসপত্রের দাম ছিলো খুবই কম, রাস্তায় জ্যাম ছিলো না, দেশে কোনো খুন ধর্ষণ হতো না, কখনো শুনিনি সরকারি প্রজেক্টে হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে, কোনো নেতা বিদেশে টাকা পাঁচার করেছে। কখনো শুনিনি পুলিশ কারো ওপর অত্যাচার করেছে, ছাত্রলীগ কাউকে মারধোর করেছে, কুপিয়েছে। কি অসম্ভব সুন্দর একটা দেশকে এই জুলাই যোদ্ধারা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিলো। ডাস্টবিন বানিয়ে ফেললো। আহারে! আহারে!
আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে এপ্রিল মাসে ডিমের ডজন ছিলো পঞ্চাশ টাকা, কাঁচামরিচের কেজি ছিলো ত্রিশ টাকা, সয়াবিন তেল সরকার ফ্রিতে দিতো, মে মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ছিলো পুরোপুরি শূন্য, বিদেশে একটা টাকাও পাচার হয়নি, দেশের মানুষ তিনবেলা গরুর মাংস খেয়ে প্রেশার বাড়াচ্ছিলো, জুন মাসে বসবাসযোগ্য দেশের তালিকায় দুই নাম্বারে ছিলো নরওয়ে, তিন নাম্বারে ফিনল্যান্ড আর এক নাম্বারে বাংলাদেশ। বায়ুদূষণ আর শব্দদূষণ সূচকে ঢাকা ছিলো সবার শেষে। অথচ জুলাইতে এসে সব উলটে গেল। এখন ডিমের ডজন একশো বিশ টাকা, বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাঁচার হচ্ছে, জ্যামের কারণে রাস্তায় বের হওয়া যায় না। এই সাজানো গোছানো সুন্দর দেশটা জুলাই যোদ্ধারা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিলো। এই আফসোস আমার কোনোদিন যাবে না।
আমি লীগের কাছে ক্ষমা চাই। আমরা বুঝতে পারিনি। আপনারা আমাকে মাফ করবেন। আপা, আপনি তো মায়ের মত। মা কি সন্তানের ওপর রাগ করে থাকতে পারে। ছাত্রলীগ তো ভাইয়ের মত। ভাই কি পারে অন্য ভাইয়ের থেকে দূরে সরে থাকতে। আপনারা দেশে আসুন, আমাদের পাশে দাড়ান। ইউনুস সরকার সব শেষ করে দিচ্ছে। আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। আমরা ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। আপনারা আমাদের ফেরাবেন না, প্লিজ। প্লিজ।
আজ আপনাদের পোস্ট থেকে জানতে পেরেছি, আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। আমরা যারা না বুঝে জুলাই আন্দোলন করেছি, তাদের প্রতি আপনাদের ক্ষোভ নেই। আপনারা কত মহানুভব আজ আমি বুঝলাম। আপনারা চাইলে আমাদেরকে কঠিন শাস্তি দিতে পারতেন, জেল জুলুম করতে পারতেন, বাসা থেকে ধরে নিয়ে গুম করতে পারতেন, হাজারটা কেস দিয়ে জীবন নষ্ট করতে পারতেন, অথচ আপনারা এমন কিছু করবেন না বলে কথা দিয়েছেন। আমরা আপনাদের বিশ্বাস করেছি। কারণ আগেও আপনারা এমন কিছু করেননি। বিরোধী শক্তিকে সবসময় ক্ষমা করেছেন, মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছেন, কাউকে শাস্তি দেননি। আপনারা মহান, আপনারা অনন্য, আপনারা সেরা। আমরা আপনাদের কাছে ক্ষুদ্র, কলংকিত, দোষী। আমার হাত কাপছে, আমার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে, আমার বুকটা হাহাকার করছে। এই লেখাটা যখন আমি লিখছি তখন আমার একটাই চাওয়া, পিলিজ আমাকে খোমা করে দাও, প্লিজ, প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেও।
পাঠকের মন্তব্য