মানুষের কত রকম ভ্রমণের অভিজ্ঞতাই না থাকে। কারো নৌকা, কারো ট্রেন, কারো কারো প্লেন। আজ এই বিশেষ দিনে একজন তাঁর হেলিকপ্টার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন পাঠকদের জন্য। পড়ে নিন তাঁর ভাষাতেই—
রাত থেকেই আমার মনটা কেমন করছিল। বলেছিলাম, একটাকেও না ছাড়তে। পিস্তল, শটগান কী কম কিনে দিয়েছি নাকি, খরচ করতে এত কিসের কিপ্টেমি!
একঘেয়ে চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে আলো-বাতাস একটু পাল্টানোর চিন্তা আমার ছিল অবচেতন মনেই। ছোট বোন বারবার বলছিল, চলো এখান থেকে, এসব বাদ দাও! কিন্তু কীভাবে বাদ দিই? এসব যে আমার কিডনিতে মিশে আছে। তাছাড়া রাতে এত বেশি কাঁঠালের বার্গার খেয়েছি যে মনে হচ্ছিল দেশের বাইরে গিয়ে বমি না করলে সুস্থ হব না। শেষ পর্যন্ত শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে আমার জন্য ঠিক করা হলো হেলিকপ্টার ভ্রমণ।
ভ্রমণের দিন সকালেই গণভবনের ছাদে আমার জন্য সাদা হেলিকপ্টার চলে আসে। কালো রঙের চেয়েছিলাম, কারণ আমার তো মনটা খারাপ ছিল—প্রাণের বিটিভিতে ভাঙচুর আমার ভেতরটা চুরমার করে দিচ্ছিল। নাক মুছতে মুছতে নাকের গোঁড়ায় হয়ে যাওয়া ফোঁড়াটা হেলিকপ্টার দেখে যেন আরও টনটন করে উঠলো। যেহেতু বেড়াতে যাচ্ছি, তাই এসবে আর পাত্তা দিলাম না। যাত্রাপথে সঙ্গে ক্যামেরা, টেপরেকর্ডার, পানি, কিছু শুকনো খাবার—বিস্কুট, চানাচুর, চিপস, কলা, এমনকি একটা বড় ফ্ল্যাক্সে চাও নেওয়া হলো না! এভাবে হয় নাকি! বোনকে বলেছিলাম, পলিথিনে অন্তত কয়েকটা কুমড়োর বড়া নে, পথে খিদে পেলে খাবো কী!
যাত্রা শুরু হলো। পাইলট গান ধরলো, "মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে, আমি আর বাইতে পারলাম না!" ইচ্ছে করলো, টুক করে ওকে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিই।
হেলিকপ্টার সাঁই সাঁই করে আমাদের কুমিল্লার দিকে নিয়ে চললো। এমনিতে আমি তো হেলিকপ্টারে বসে মোবাইল তাক করে ছবি, ভিডিও করি, সে অবস্থার ছবি একজন তুলে দেয়। আজ কেউ ছবি তোলার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
কুমিল্লা এলাম, যাত্রাবিরতি।
অথচ কেউ মিষ্টি টাও অফার করলো না।
বোন বললো, গন্তব্যে পৌঁছে গেলে ইচ্ছামতো মিষ্টি খেতে পারবো, ওখানে নাকি সব ব্যবস্থা করাই আছে।
আকাশ, বাতাস, নৌকা দেখতে দেখতে হেলিকপ্টার আবারো ধেই ধেই করে উড়ে চললো। পিছনে ফেলে এলাম তুমুল জনস্রোত—যারা আমায় ভালোবেসে দেখা করতে আসছিল।
পাঠকের মন্তব্য