ইদ শপিঙে যেভাবে আরিফ ভাইকে আমি নিজের করে পেলাম

৯১৭ পঠিত ... ১৬:১৯, এপ্রিল ১৭, ২০২২

shoping-arif-vai

রাস্তার জ্যামের যা অবস্থা, এইটা দেখে মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি যে ইদের আগে শপিঙে যাবো না, অনেক জ্যাম হবে। তাই ভাবলাম শুরুর দিকেই যাবো শপিঙে।

শপিঙে যাবার আগে ভাই বললো, ‘দেখ, আম্মুর সাথে আব্বুকেও নিয়ে চল যাতে মানসম্মান রক্ষা হয়।‘ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন?’ ভাই বললো, ‘আম্মু তো জানিসই ২৫০০ টাকার জিনিসের দাম বলবে ৬০০ টাকা। আব্বু থাকলে দেখবি সামলায় নিবে।‘ আমিও ভেবে দেখলাম আসলেই মান সম্মান বাঁচানো ফরজ। যথারীতি আব্বু আম্মু আর আমরা দুই ভাইবোন নিয়ে শপিঙে চলে গেলাম।

শুরুটা হলো ভাইয়ের জামাকাপড় দিয়ে। ওর একটা শার্টের দাম চাইলো ১২০০ টাকা। আম্মু আস্তে করে আমাকে বললো, ‘দেখ এটার ফ্যাব্রিক ভালো। ১০০০ বলি?’ আম্মুর এত উন্নতি দেখে মনে মনে আবেগে কেঁদে দিলাম আমরা দুই ভাইবোন। ভাবলাম শুধুশুধু আব্বুকে নিয়ে আসলাম কষ্ট দিতে। ওদিকে আব্বু দেখি খুব মনোযোগ দিয়ে শার্ট দেখছে। হঠাৎ করে আব্বু বলে বসলো, ‘এই শার্টের নিচের সুতাটা বাঁকা, সেলাই সোজা না আর ফ্যাব্রিকও আহামরি না অতো। ৪০০ এর বেশি এটার দাম হওয়া উচিত না ভাই।‘

মনে হলো আকাশ ভেঙে মাথার উপর ঠেকে আছে। আমার ভাই এক হাত দিয়ে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে আর দোকানদার অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। আম্মুকে দেখি আব্বুকে বলতে লাগলো, ‘আরে ৪০০ অনেক কম৷ তুমি ৫০০ বলো।‘ ওমা, আম্মুর কী হলো? একটু আগেও না ঠিক ছিলো? পাশের থেকে ভাই আমাকে বললো, ‘সময় থাকতে বের হ, মাথাটা ঝিমঝিম করছে।‘

দোকান থেকে বের হয়ে আসলাম। আব্বু আম্মু খুব রেগে আছে। এতক্ষণ ধরে এত জামাকাপড় দেখে না কেনায় নাকি মানসম্মান চলে গিয়েছে। আইরনি এটাকেই বলে হয়তো বা। যাইহোক, এসব দেখে ভাবলাম ফিক্সড প্রাইজের দোকানে যাই। বিপদমুক্ত। যা লেখা তাই নিয়ে আসবো। ঝামেলা শেষ। গেলাম এক দোকানে। দোকানে গিয়ে খুশি হয়ে গেলাম কারণ সেখানে আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র আরিফ ভাই। ইনি সেই সিনিয়র যার আমি প্রেমে পড়েছি।

এদিক ওদিক করতে করতে আরিফ ভাই আমার কাছে চলে আসলেন। কাছে আসতেই বললাম, ‘ভালো আছেন আরিফ ভাই?’

আরিফ ভাই মাখন মার্কা এক হাসি দিয়ে বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। তুমি ভালো আছো ছোঁয়া?’

আমি ভালো আছি কি নাই এটার জবাব দিতে গিয়ে হঠাৎ আমার ভাই দৌড়ে এসে বললো, ‘দ্রুত আয়।‘

আমি হন্তদন্ত হয়ে দিলাম দৌড়। পেছন পেছন দেখি আরিফ ভাইও দৌড়ায়। গিয়ে দেখি আমার বাবা শো-রুমের ম্যানেজারের সাথে ঝগড়া করছে, ‘একটা লুঙ্গির দাম নাকি ৬০০ টাকা। ফাইজলামি দেখছেন? গলাকাটা দাম নিচ্ছে আপনারা। আপনিই বলুন ৬০০ টাকার লুঙ্গি কে পরে? আপনিও তো পরেন না।‘

: স্যার, আমি লুঙ্গিই পরি না। আর আপনি ঈদে লুঙ্গি কেনো পরবেন? আমাদের আছে অনেক এক্সক্লুসিভ কালেকশন। আপনি পাঞ্জাবি দেখতে পারেন।

: আরে রাখেন আপনার পাঞ্জাবি। লুঙ্গির দাম দেখানে ৬০০, পাঞ্জাবি তো তাহলে কিডনি দিয়ে কিনতে হবে। আপনারা দাঁড়ান। আমি ভোক্তা অধিকার দপ্তরে কল দিচ্ছি।

আমার মনে হলো আমি ভুল করে কোথাও চলে এসেছি। এগুলা কী, এ আমি কোথায়। স্মৃতি চলে গেলে খুব ভালো হত। এদিকে আম্মু আমাকে এসে বলল, ‘জীবনে এই প্রথম তোর বাপ একটা কাজের কাজ করতেছে।‘

লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।মনে হচ্ছে পায়ের নিচের মাটি নেই, আর আমি শূন্যে। পাশে আরও আরিফ ভাই। কই যাই আমি। যাও একটু আশা ছিল তাও বোধহয় আজ শেষ। হলো না, আরিফ ভাইকে আমার আর বিয়ে করা হলো না। আরিফ ভাইয়ের দিকে যখনই একটু বিব্রতভাবে তাকাতে যাবো আর তখনই দেখি আরিফ ভাই আমার পাশে নেই। তিনি আমার বাবার পাশ থেকে এক আন্টিকে ধরে টানছেন আর আন্টি যাবেনই না কোনোভাবে। আরিফ ভাই দেখি আস্তে আস্তে বলছেন, ‘মা থামো, তুমি চলো বাসায়। প্লিজ মা।‘

কিন্তু আন্টি কথা শুনবার পাত্রী নন। তিনি আরিফ ভাইকে ধাক্কা দিয়ে আমার কাছে ফেলে দিয়ে আমার বাবার কাছে একটা চটের ব্যাগ নিয়ে গিয়ে বললেন, ‘ভাই আপনি এটার কথাও বলেন। এই ব্যাগ ৮০০ টাকা? এটা কোনো কথা? দেখছেন অবস্থা?’

এসব দেখে আরিফ ভাই লজ্জায় আমার কোলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন আর আমি বেহায়া তাকে ধরে দাঁড়িয়ে। মনে মনে যাকে বিয়ে করতে চাই তাকে অতি নিকটে পেয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছি। ধরে রাখবো নাকি ছেড়ে দিবো বুঝে উঠতে পারছি না। এদিকে আমার ভাই এসে বললো, ‘আহারে। এইটুকুতেই এই অবস্থা। আমরা দুই ভাইবোন তো তাহলে দেখছি অনেক স্ট্রং। এই নে পানির বোতল। উনার মাথায় ঢাল। আর যদি কিছু বেঁচে থাকে তাহলে আমার মাথায় ঢালিস। মাথাটা খুব ঘুরছে।‘

৯১৭ পঠিত ... ১৬:১৯, এপ্রিল ১৭, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top