eআরকি ট্রাভেল গাইড : যেভাবে পায়ে হেঁটে একটি সফল বাণিজ্য মেলা ভ্রমণ করতে পারেন

১৪৫৯ পঠিত ... ২০:১৫, জানুয়ারি ৩০, ২০১৯

চলছে জানুয়ারি আর চলছে ঘুরাঘুরির মৌসুম। ঢাকার আশেপাশে বেশকিছু বিনোদন কেন্দ্র থাকলেও ঢাকার একদম প্রাণকেন্দ্রেই প্রতিবারের মতো উদযাপিত হচ্ছে বাণিজ্য মেলা। নতুন বছরের আমেজ ঢাকা থেকে এখনও যে বিদায় নেয়নি তার একটি কারণ হচ্ছে এই বাণিজ্য মেলা। তাই অভিজ্ঞতা নিতে প্রতিবারের মতো এবারও ঘুরে এলাম বাণিজ্য মেলা থেকে।

বাণিজ্য মেলায় যাবার মূল ব্যাপারটা হচ্ছে ইচ্ছাশক্তির জোর। যদি কারো অসম্ভব মানসিক শক্তি থাকে তবেই কেল্লাফতে! সেই পারবে বাণিজ্য মেলা ঘুরে আসতে। ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে বাস-সিএনজি-রিকশা করে কিংবা পায়ে হেঁটে মেলার গেটে চলে আসবেন। টিকেট কেনাটা এখানে একটু রহস্যজনক। প্রথমে এক নম্বর গেটের সামনে যখন গেলাম কাউন্টারে দেখি টাকা নিবে না। তার মানে এই না যে, টিকেট ফ্রি দিচ্ছে। সেখানে টাকা বিকাশে পরিশোধ করতে হয়। অগত্যা অন্য কাউন্টারে যেয়ে নগদ টাকা দিয়ে টিকেট কিনে আনলাম।

ওয়েট, একটু বিরতি দেন এবার, মানে বাণিজ্য মেলায় ঢুকে পড়াটা যতো সহজে পড়ে ফেললেন, পুরো ব্যাপারটা অতো সহজ না আসলে। মানে ভাই বিশ্বাস করেন, সত্যিই, আমার বাসা যদিও মোহাম্মাদপুরে, হেঁটেই চলে আসছিলাম তাই বাণিজ্য মেলার গেটে। কিন্ত আসতে আসতে জ্যামে বসা যতো দুঃখ ভারাক্রান্ত মুখ দেখলাম...মানে ঢাকার যানবাহনের গড় গতি ছয় কিলোমিটার পার আওয়ার এটা জানতে পেপার পড়তে হয় না। যদি একবার এই জ্যামে আটকে পড়েন তাহলেই বুঝে যাবেন। এই জ্যামে কেউ যদি একবার ধ্যানে বসেন, আমার ধারণা নির্বাণ লাভ করবার পরেও সম্ভাবনা আছে যে তিনি আবিষ্কার করবেন জ্যাম তখনও ছোটেনি! আর আগেও তো বলেছি, যথেষ্ট ইচ্ছাশক্তির জোর না থাকলে বাণিজ্য মেলা যাবার ঝুঁকি নিবেন না। কারণ জীবনের মূল্য বাণিজ্য মেলার থেকে বেশি।

 

তবে, একবার টিকেট হাতে গেট পার হতে পারলেই অনাবিল শান্তি! লাইনে দাঁড়ালে শুনতে পাবেন, মানুষের ক্যাওম্যাও এবং মাইক-ঘোষণার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। তাতে করে বিরক্তি কমবে, বোর ফিল করবেন না আপনি। আর কীসের দোকান নেই এই এক বাণিজ্য মেলায়। যা চাবেন তা-ই আছে। মোদি কোট থেকে শুরু করে খেলনা পিস্তল, যেগুলো দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে পর্যন্ত কনভিন্স করে ফেলা সম্ভব সেগুলো আসল অস্ত্র। ক্রোকারিজ সেট থেকে, বাদাম ভাজা, সব আছে, সব।

 

ক্রোকারিজ সেটের ওপর এক ধরণের অদ্ভুত অফার দেখলাম। এক সেট ক্রোকারিজ সেট কিনলে দশটা চামচ-প্লেটের আইটেম আর একটা ওভেন নাকি ফ্রি। লোভনীয় অফার! কিন্ত বিস্তারিত শুনে তো চোয়াল ঝুলে পড়লো আমার। এক সেট ক্রোকারিজ সেটের সাথে দশটা চামচ-প্লেটের আইটেম আর ওভেন ফ্রি এটুকু সত্যি। কিন্ত সেই এক সেট ক্রোকারিজ সেটের দাম নাকি সাড়ে বাইশ হাজার টাকা!

ওভেনের অফার তো শুনলেন, এখন যেসব খাবার এই ওভেনে গরম করা যায়, সেই ব্যাপারে আসি। আমরা জাতে বাঙালী। তাই প্রতিবারই মেলায় খাবারের দাম বেশি থাকা সত্ত্বেও আমরা মেলাতেই পেটপুরে খেয়ে পকেট খালি করে  ফেসবুকে এসে স্ট্যাটাস দিয়ে হাউকাউ করি! আর বাণিজ্য মেলায় খাবারের দোকান মানেই হাজির বিরিয়ানীর ছড়াছড়ি। নিউ হাজির বিরিয়ানী, অরিজিনাল হাজীর বিরিয়ানী, দ্য হাজীর বিরিয়ানী। মানে হাজীর বিরিয়ানী শব্দযুগলের সামনে যতো প্রকারের আর্টিকেল ও অ্যাজেক্টিভ বসানো যায়, তা বসিয়ে হাজীর বিরিয়ানী লিখে দেয়া হয়েছে। সেসব বিরিয়ানীর দোকানে আবার নান রুটি পাওয়া যায়। ষাট টাকা দাম! শুনে মনে হলো তুলনামূলক কমই!

 

মেলায় চারিদিকে ঘুরে এবার মোটামুটি পজিটিভ একটি রিভিউ চিরকুটে লিখে ফেলতে গেলাম একটি ‘মতামত ও অভিযোগ’ বাক্সে। গিয়ে দেখি এক আশ্চর্য কান্ড! এখানে মতামতের যায়গায় দেখি পড়ে আছে নানা রকমের লিফলেট, তার সাথে ময়লা টিস্যু, চামচ- এমনকি কয়েকজন দানশীল ব্যক্তির খুচরা টাকাও! বাণিজ্য মেলা নিয়ে কিছু মতামত থাকলেও বেশিরভাগই ছিলো মনমতো নারীর দর্শন না পাওয়া কিছু সৌন্দর্যের পূজারীর হাহাকার।

এতোসব অফার, এতো কুপন, লোভের বিকিকিনি দেখতে দেখতে হঠাৎ খেয়াল করি যে, সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। সন্ধ্যা থেকেই বাণিজ্যমেলায় একদম ফেস্টিভ মুড চলে আসে। ছোট দুটি পার্ক মতোন আছে মেলার ভেতরেই। মেরী গো রাউন্ড, শান্তা মারিয়া, নাইন ডি(!) মুভির মতো অনেক বিনোদনের ব্যবস্থা আছে সেখানে।  বাচ্চাদের মতো অনেক বড়রাও হরদম চড়ে বসছে সেইসব রাইডে।  বেশ উৎসব উৎসব ব্যাপার পুরো মেলায়। কেনাকাটার ইতিবৃত্ত নিয়ে আর কিছু না বলি। ব্যাগ ভর্তি বিভিন্ন দোকানের লিফলেট নিয়ে বাসার অভিমুখে রওনা দিয়েছিলাম সন্ধ্যা নাগাদ, বেশ ভালো কাগজে বানানো লিফলেট, বাসায় নিয়ে গিয়ে কেজি দরে বেচে দেয়া যাবে। বাণিজ্যমেলার যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট এবং খরচ তাতে কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

 

ফিরতি পথের জ্যামের ইতিহাস আরো দুঃসহ। ঢুকবার জ্যামে বোধহয় নির্বাণ লাভের একটা চিকন সুযোগ ছিলো। কিন্ত ফিরবার পথের জ্যাম দেখে মনে হলো এই জ্যামে বোধহয় শুধু নির্বাণ লাভে পোষাবে না, এবার ধ্যানে বসলে একেবারে পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হয়ে তবেই উঠবেন, সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনারা সবাই যে কীভাবে বাণিজ্য মেলায় যাবেন। কীভাবে আবার, অবশ্যই পায়ে হেঁটে!

১৪৫৯ পঠিত ... ২০:১৫, জানুয়ারি ৩০, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top