মানুষ ঠিক কী কী কারণে ঘর ছাড়ে? ঠিক কী কী কারণে মুসাফির হয়ে যায়? ঠিক কী কী কারণে পথে পথে ঘোরে?
এই মুহূর্তে আমার অবস্থা ভিন্ন! বুকে খুব জ্বালা। গ্রামের রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার। একটু আগে ইটের টুকরোর সাথে লেগে পায়ের আঙুল ব্যথা করছে। ঈদের আগের রাতে এভাবে মুসাফির হয়ে যাওয়া যেন হতাশার।
ছোট ভাই লুকিয়ে লুকিয়ে বিড়ি খাচ্ছিল। আমাকে দেখে মোটামুটি ধড়াম করে একটা সালাম ঠুকে দিল—
— ভাই, এই অন্ধকারে হাঁটছেন যে?
— দুই দিনের দুনিয়া, কী অন্ধার আর কী আলো! দম ফুরাইলে সবই তো কালো!
— ভাই, কিছু খাইছেন?
আমি বিস্ময়ে তার দিকে তাকাতে তাকাতে মোবাইলটা উঁচু করলাম, “না, নেই।”
সে কাচুমাচু করে বলল, “না ভাই, চান রাইতে খাইতেই তো পারেন।”
— হুম, খাইছি।
— কী?
— কিছুক্ষণ আগে একটা উষ্ঠা, রাতে ভাত কাচকি মাছ দিয়া, আর...
— আর কী ভাই?
কিছু না বলে হাঁটা দিলাম। পৃথিবীতে কেউ কারও না। কী লাভ এত কথা বাড়িয়ে! কোথায় আমার গন্তব্য আমি জানি না, কোথায় যাচ্ছি তাও জানি না। জীবনটা রীতিমত সংগ্রামের। মোবাইলটা উঁচু করলাম, না, নেই।
আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। আমার এমন মুসাফির হয়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে খুবই মর্মস্পর্শী গল্প।
ঘটনার সূত্রপাত সন্ধ্যায়। ঘরে ঢুকেই ভাবলাম, একটু ফেসবুকে ঢুকি। কিন্তু নেট নেই! এক বুক আশা নিয়ে ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া গেলাম দরজার সামনে— নেই। আরও দুই পা ফেলিয়া উঠানে নামলাম— একটু একটু আসছে। কয়েক ক্রোশ হাঁটিয়ে চলে গেলাম বাড়ির বাইরে। আছে বা নেই, নেই বা আছে!
তারপর হাঁটলাম, হাঁটলাম... মোবাইলটা উঁচু করলাম— না, নেই, নেটওয়ার্ক নেই!
নেটওয়ার্ক খুঁজতে খুঁজতে... আমি মুসাফির!
পাঠকের মন্তব্য