রাজা ও রবিউলের ব্যবসা

৯৮ পঠিত ... ১৬:২৬, জুন ০১, ২০২৫

রবিউল বিক্রি করে পাওরুটি। প্রতি পিস ১০টাকা। দুই মাস ব্যবসা করার পর দেখল বিজনেসে বিরাট লস। প্রতি পিসে খরচই হচ্ছে ১২ টাকা। ১৫ টাকা করে না বেচলে বউ-বাচ্চা নিয়ে বাঁচাই মুশকিল! কিন্তু দুম করে দাম বাড়ালে রাজা চড়াবে শূলে!

রবিউল ব্যবসা বন্ধ করে তিন দিন ভাবে। যত ভাবে তারও চেয়ে বেশি ভাবার প্র‍্যাক্টিস করে। করতে গিয়ে দেখে ভাবার প্র‍্যাক্টিস করার চাইতে হুদা জিনিস ত্রিভুবনে নাই।

চতুর্থ দিন রবিউল হাজির হয় রাজার দরবারে--মহারাজ, ভীষণ বিপদ!

রাজা যেহেতু ডাক্তার না, মন দিয়ে রবিউলের সব কথা শোনেন। রবিউল জানায় ১৫ টাকা করে পাওরুটি না বেচতে পারলে মরে যেতে হবে হুজুর। রাজা কিছুক্ষণ ভাবলেন। তারপর বললেন, ঠিক আছে। তুমি পাওরুটি বেশি দামেই বেচবা। তোমার পাওরুটির দাম হবে ৪০ টাকা পার পিস!

রবিউলের চোখ চড়কগাছ। কী বলেন মহারাজ! ৪০ টাকা করে বেচলে তো মানুষজন আমারে পিটায়া মব করবে, মহারাজ!

রাজা বললেন, যা বলছি তা করো! কথা বাড়াইও না!

রবিউল কথা বাড়াল না। বরং বাধ্য হয়ে ফিরে গেল বাড়িতে। বউবাচ্চাকে জাপটে ধরে বলল, এ রাজ্যে আমার দিন শেষ। রাজার কথা ফেলতে পারব না। আবার ৪০ টাকা করে পাওরুটি বেচলে পাবলিকে আমাকে আস্ত রাখবে না!

চোখে পানি মনে আশঙ্কা নিয়ে রবিউল পরদিন সকালে পাওরুটি বেচতে শুরু করল। ৪০ টাকা পার পিস। লোকজন দাম শুনেই শুরু করল গালাগালি। ১০ টাকার রুটি ৪০? বাবা খাওয়া ধরছিস নাকি?

বেলা চড়ার সাথে আমজনতার মেজাজও চড়ল। তারা ছুটল রাজদরবারে। বলল, রাজা মশাই, যে রবিউল, ব্যাটা ৪০ টাকা করে পাওরুটি বেচছে!

রাজা খেপল ভীষণ-- কী! রুটিওয়ালার এত সাহস! আমাকে না জানিয়ে রুটির দাম বাড়ায়? তাও আবার একলাফে ৪০?

রাজ্যের ধরপাকড়ওয়ালারা রবিউলকে ধরে নিয়ে এল রাজদরবারে। রাজা প্রথমে ইচ্ছামতো গালাগালি করলেন রবিউলকে। বললেন, এমন নৈরাজ্য চলতে দেয়া যাবে না এই রাজ্যে!

রবিউল ভয়ে, আতঙ্কে বলতেই পারল না রাজাই তাকে বলেছিলেন ৪০ করে রুটি বেচতে! রাজা এবার ঘোষণা দিলেন, রুটির দাম ৪০ হবে না। হতে হবে এর অর্ধেক! অর্থাৎ ২০! এর এক পয়সাও বেশি না!

ধন্য ধন্য পড়ে গেল রাজ্যে। রাজা দারুণ সুবিবেচক। আমজনতা খুব খুশি। রবিউলও খুশি। সে তো ১৫ করে বিক্রি করতে চেয়েছিল। এখন পাবে... না ২০ পাবে না। রবিউল যখন বেরিয়ে যাচ্ছে তখন মন্ত্রী ফিসফিসিয়ে বললেন, প্রত্যেক রুটির বিক্রি থেকে রাজ কোষাগারে তোকে দিতে হবে ৫ টাকা, বুঝেছিস?

রবিউল অবশ্য তাতেও খুশি। তার লাভ, রাজারও লাভ। লস শুধু আমজনতার। কিন্তু এদের মধ্যে সবেচেয়ে খুশি আমজনতা। রাজা তাদের কথা ভেবে পাওরুটির দাম অর্ধেক করে দিয়েছে যে...

পুনশ্চ: রাজা রাজনীতির লোক বলে সবাইকে খুশি করতে পেরেছেন। কিন্তু রাজা যদি রাজনীতির বাইরের লোক হতেন তাহলে রবিউলের পাওরুটির দাম বাড়িয়ে করতে চাইতেন ১৫ টাকা। তখন আমজনতা ছুটে আসত রাজদরবারে। পাওরুটির দাম কেন ১৫ হবে এ নিয়ে ক্যাচাল করত। মিটিং মিছিলও হতো এন্তার। শেষে রাজা পাওরুটির দাম করতেন ১২টাকা। এতে আমজনতা ভাবত তাদের ওপর বাড়তি ২ টাকার প্রেশার দিলো রাজা, আর রবিউল ভাবত এ রাজ্যে ব্যবসা করার কোনো উপায় নাই। রাজা লাভ করতেই দেয় না!

পুরো রাজ্য ধীরে ধীরে হয়ে উঠত রাজার ওপর অখুশি।

৯৮ পঠিত ... ১৬:২৬, জুন ০১, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top