ধরে নিলাম জাফর ইকবালের গল্পের একটি চরিত্র ইয়ান। তার খুব শখ সে তরমুজের কোমল পানীয় পান করবে। যাতে তার শরীরের মেরুদণ্ড দিয়ে একটা ঠান্ডা শীতল স্রোত বয়ে যায়। এটা ভাবতেই ইয়ান নিজের ভিতর একধরনের হাহাকার অনুভব করে।
কারওয়ান বাজারের আকাশের কাছাকাছি উঁচু কাঁচ ঘেরা অফিসের ভিতর ইয়ানের মন বসে না। খুব বিষণ্ণ মনে সে দেখতে পায় বাজারে অনেক তরমুজ। কিন্তু তার বান্ধবী রাইতা তাকে বলে দিয়েছে বাজারে নাকি তরমুজের ভিতর সাদা না লাল তা বুঝা যায় না।
রাইতা খুব কম বয়েসী মেয়ে। মাত্র বুয়েট পড়ে। গোল গোল কাচের ভিতর চশমা দিয়ে সে ইয়ানের মন বুঝতে পারে।
রাইতার কথা মনে হতেই ইয়ানের বুকের ভিতর এক ধরনের চিন চিন অনুভব করতে শুরু করলো। অফিসে রাইতা একটা বাক্স দিয়ে গেছে। কিন্তু ইয়ানের সেটি খুলতে ইচ্ছা হচ্ছে না। সে তার যোগাযোগ রক্ষাকারী মডিউল মটোরোলার moto-e7-plus মডেলটি দিয়ে রাইতার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে।
পর পর দুইটি বাটনে চাপ দেবার পরে ভিডিও বার্তায় রাইতার ছবি ভেসে উঠে।
রাইতা: তুমি বাক্সটা খুলেছো?
ইয়ান: না এখনও না।
রাইতা: বাক্সটা এখনি খোলো।
ইয়ান কথামতো বাক্সটা খুলে দেখে একটা পোর্টেবল আল্ট্রাসাউন্ড মেশিন । সাথে রাইতা ইউজার গাইড লাইন লিখে দিয়েছে।
এই মেশিন নিয়ে বাজারে গেলেই নাকি তরমুজের ভিতরে লাল না সাদা তা বোঝা যাবে।
পরপর ১-১০ MHz ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ ছুঁড়ে দেওয়া হবে তরমুজের ভেতরে। তরঙ্গ যাতে ভালভাবে কাজ করে সেজন্য জেল লাগিয়ে দিতে হবে তরমুজের গায়ে।
ইয়ান হন্তদন্ত হয়ে বাজারে ছুটে গেল। একটা তরমুজের গায়ে সে মেশিন দিয়ে তরঙ্গ ছুঁড়ে দিল। তরঙ্গ ভেতরে প্রবেশ করল আর ফিরে আসলো। সাথে সাথে রাইতার বানানো অ্যাপ টা মেশিনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তথ্য বিশ্লেষণ করা শুরু করে দিল। ইয়ান অবাক হয়ে দেখে মেশিনটা প্রতিফলিত তরঙ্গ ধরে তরমুজের ভেতরের ছবি তৈরি করে ফেলেছে।
যে তরমুজের ভেতরে সাদা বা কাঁচা পরপর তিনটা বিপ বিপ শব্দ করে জানান দিচ্ছে সেটি কাঁচা। আর পাকা হলে আরামদায়ক মিষ্টি একটা শব্দ করে উঠছে।
ইয়ান চেক করে। সে বিস্ফারিত চোখে দেখে আসলে মেশিন যেটা কাঁচা বলছে সেই তরমুজের ভিতর কেটে দেখা গেল আসলেই কাঁচা আর পাকা হলে পাকা দেখাচ্ছে।
ইয়ান খুশি মনে বসে আছে তার নিজের রুমে। সামনের বিশাল মনিটরের পর্দায় ভেসে উঠছে নানা রকম পানীয়ের রেসিপি। ওয়ালটনের এই মনিটরের সামনে ইয়ান বলে ওঠে, হেই গুগল তরমুজের কিছু রেসিপি দেখাও।
ইয়ানের কণ্ঠস্বর শুনেই গুগল তাকে নিয়ে গেল কেকা ফেরদৌসীর তরমুজের রেসিপিতে।
ইয়ানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে শুরু করলো।
সে বিস্ফারিত চোখে দেখছে একটা সিনথেটিক মুরগির পেছন দিয়ে তরমুজের লাল রস পাইপ দিয়ে ঢোকানো হচ্ছে।
পাঠকের মন্তব্য