আমরা হলাম চিপায় পড়া হতভাগা জেনারেশন

১৬০০ পঠিত ... ১০:২২, মে ০২, ২০২২

chipay pora gen

আমরা না হতে পারলাম সেকালের বাবা-মা, না হতে পারলাম একালের ছেলেমেয়ে। বাবা ছিলেন আমাদের বাবারা, মা ছিলেন আমাদের মায়েরা। সেই রকম। খালি একবার হুংকার দিলেই হলো, ‘বাবলু! এদিকে আয়!’ ব্যাস। বাবলুর প্যান্ট ভিজে যাবেই। মায়েরাও ছিলেন তেমনি। ‘আসুক আগে তোর বাপ, দেখাচ্ছি মজা।‘ আরে মা, মজা কি তুমি কম দেখাচ্ছো? সংসারে যা কিছু সম্পদ ও সম্পত্তি ছিল, তার সবই তো বাবুলের পিঠের ওপর দিয়ে ব্যবহার করে ব্যবহার-উপযোগিতা যাচাই করা হয়েছে… পাখার ডাঁট, ছাতার বাট, যাবতীয় জুতা-স্যান্ডেল-খড়ম-স্পঞ্জ, স্কেল, পাটকাঠি, খড়ি, ছড়ি, কঞ্চি, বাঁশ, কাপ-পিরিচ-থালা-বাটি, কলম-পেন্সিল। এরপর আবার আসুক তোর বাপ বলার মানে কী!

সেই বাবলু এখন নিজেই বাবা। ছেলেমেয়েদের শাসনে তার জীবন জেরবার। বাবা, তুমি চোখ পাকাচ্ছো কেন? মা যদি বলেন, ‘বুবলি, তোর গায়ের রংটা ময়লা হয়ে গেছে।’ অমনি ধমক, ‘মা, গায়ের রং নিয়ে কথা বলতে হয় না।‘ ডাক্তার মামা বললেন, ‘বান্টি, ওয়েট বেড়ে যাচ্ছে, তুই তো দেখছি ব্লাডপ্রেসার বাধাবি।‘ অমনি বান্টি গলা মোটা করে শান্তস্বরে জবাব দেবে, ‘মামা, বডি শেমিং করতে হয় না।‘ ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, বলা যাবে না কথা, জীবন ওষ্ঠাগত করে বাবা-মা হয়ে পেলাম এমনি বাধকতা!

আপনি যদি আজকের বাবা/মা আর সেইকালের সন্তান হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই পিটুনি খেয়ে মানুষ হয়েছেন। আপনার বাবা-মা স্কুলে আপনাকে নিয়ে গিয়ে মাস্টারকে বলেছেন, ‘মাস্টার সাহেব, আমি ওর মাংস চাই না, শুধু হাড়টা ফিরিয়ে দেবেন, কিন্তু ছেলে য্যানো আমার মানুষ হয়।‘

: হবে, হবে, কত গাধা পিটিয়ে মানুষ করলাম আর একে পারব না। রেখে যান। হয়ে যাবে।

তা বটে। মানুষই তো হয়েছি। অমানুষ তো হইনি।

তো আমাদের বাচ্চাদের আমরা তো কিচ্ছু বলি না। শুধু চোখের আড়াল হলেই ফুপিয়ে কাঁদি। এখন আমরা আমাদের বাবা-মাকে হারিয়ে কাঁদি, আর ছেলেপুলে পর হয়ে যাচ্ছে দেখে কাঁদি।

chipay pora gen inner

আরো করুণ অবস্থা শাশুড়িদের। তারা না হতে পারলেন সেকালের শাশুড়ি, না হতে পারলেন একালের বউমা। আজকের শাশুড়িদের তাদের শাশুড়িরা প্রথম দিনেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন রান্নাঘরে, আস্ত একটা মোরগ দেখিয়ে বলেছিলেন, ‘কেটে-কুটে রান্না করো, দেখো, গিলাটা যেন ফেলো না।' ওদিকে দুই সের ছোটমাছ উঠানো ঝপাৎ করে ফেলা হলো, ‘ছাই হাতে ওগুলো কুটতে বসো।'

আর তাদের পুত্রবধুরা প্রথম দিন সকালেই বলবে, ‘গা ম্যাজ ম্যাজ করছে, একটু পার্লারে যাব ম্যাসাজ নিতে, তোমাদের এইসব সেকেলে রান্না কিন্তু খেতে পারব না, হয় ফুডপান্ডায় অর্ডার করো, তা নাহলে চলো আজকে লাঞ্চ সারব কোরিয়ান রেস্তোরাঁয়।' ‘মা, আপনি তো আর কোরিয়ান খাবেন না। আপনার জন্য কী আনব বলুন।' ‘আমার শাশুড়ি আম্মা একেবারেই আমার নিজের মায়ের মতো, আমরা সব কথা শেয়ার করি। মা দুপুরে খেয়ে নিতে ভুলবেন না কিন্তু!’

আমরা না হতে পারলাম সেকালের লেখক, না হতে পারলাম একালের পাঠক। চুরি করে করে বই পড়তাম, স্কুলের মাস্টাররা আউট বই দেখলেই রেগে যেতেন, ‘সে কী রে হাতে বই কেন, লেখাপড়া নষ্ট করে এইসব আউট বই পড়বি!’ আর লেখক! কথাটা শুনলেই কী রকম শ্রদ্ধা আসতো!

আর আজকালকার পাঠক। লেখক শুনে নাক সিঁটকায়! ‘আপনি কী লিখেছেন! আমার আবার মুরাকামি কোয়েলহো হলে চলে না, আমি শুধু রুশদিকেই খানিকটা গিফটেড বলে স্বীকার করি! আর সত্যি কথা বলতে কী, আমার একটা স্টাটাসে লাইক পড়ে আট হাজার! আপনি বড় লেখক, নাকি আমি! আপনার স্ট্যাটাসে তো ত্রিশটার বেশি লাইক কখনও দেখিনি।'

আমাদের জেনারেশনের মতো চিপায় পড়া হতভাগা জেনারেশন আর নাই!

 

১৬০০ পঠিত ... ১০:২২, মে ০২, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top