গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার নিকৃষ্ট দেশ প্রমাণের অপচেষ্টার প্রতিবাদনামা

২২১১ পঠিত ... ১৫:১৮, এপ্রিল ২৮, ২০১৮

বরাবর,
খ্রিস্তফে দেলোয়ার
মহাপরিচালক
রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার্স
প্যারিস, ফ্রান্স।

বিষয়: গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসূচক ২০১৮-তে বাংলাদেশকে  দক্ষিণ এশিয়ায় নিকৃষ্ট দেশ হিসাবে প্রমাণের অপচেষ্টার প্রতিবাদ প্রসঙ্গে।

প্রিয় দেলোয়ার ভাই,

উপর্যুক্ত বিষয়ে রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমাদের নজরে এসেছে। দেখলাম দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। এ অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো অবস্থান ভুটানের- ৯৪। এছাড়া সূচকে নেপালের অবস্থান ১০৬, আফগানিস্তান ১১৮, শ্রীলংকা ১৩১, মিয়ানমার ১৩৭, ভারত ১৩৮, পাকিস্তান ১৩৯, থাইল্যান্ড ১৪০ এবং কম্বোডিয়ার অবস্থান ১৪২।

রিপোটার্স উইদাউট বর্ডার ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের র‌্যাঙ্ক

এতে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ দেশের মধ্যে ১৪৬। গত বছর একই অবস্থানে থাকলেও স্কোরের দিক থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের নেতিবাচক স্কোর ছিল ৪৮ দশমিক ৩৬। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৪৮ দশমিক ৬২।

আমরা সুখি সাংবাদিক সমিতির সদস্য বৃন্দ একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাদের এই রিপোর্ট প্রত্যাখান করছি। উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মাঝে লাগাতার প্রথম হয়ে গোটা বিশ্বকে বাংলাদেশ যখন তাক লাগিয়ে দিচ্ছে; তখন উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে’ বাংলাদেশকে হেয় প্রতিপন্ন করার ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে চাই আমরা। আফ্রিকার দেশ উগান্ডা বাংলাদেশের চেয়ে ২৯ ধাপ এগিয়ে আছে এমন তথ্যও রিপোর্টে রেখেছেন আপনারা। আপনারা কী চান! আপনাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করুন।

আপনারা নিজেরাও সাংবাদিকতা করেন। নিজ নিজ দেশে রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কতটুকু আদর পেয়েছেন আপনারা? সত্যি করে বলবেন, কতটি দাওয়াত, বিদেশ সফর কিংবা প্লট ও পদক পেয়েছেন। আমরা সরকারের যে আদরে আছি; এমন অপত্য স্নেহ পিতা-মাতার কাছেও পাইনি। অ্যাসাইনমেন্টে থাকার কালে দেখা হলে প্রাণপ্রিয় নেতা-নেত্রীরা বলেন, মুখটা শুকনা দেখাইতেছে ক্যানো; ভাত খাইছো! এমন দরদিয়া নেতা-নেত্রীর মর্যাদা আপনারা বুঝবেন কী করে! প্যারিসে দেখেছি প্রেস ক্লাবে বসে শুকনা রুটি চিবান আপনারা। জাঁক শিরাক থেকে ইমানুয়েল ম্যাখরো; আপনাদের কোন নেতাই কী আপনাদের বাতাস করে করে জিয়াফত খাওয়ায়! আমাদের নেতারা খাওয়ায়। কারণ আমাদের খাওইন্যা সংস্কৃতি! তাই ঐ সব পশ্চিমা সূচক বদলান। দাওয়াত, বিদেশ সফর, মিডিয়া লাইসেন্স, প্লট, পদক এই ঐতিহ্যগুলোকে সন্নিবিষ্ট করলে দেখবেন; বাংলাদেশ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ইউরোপের চেয়েও এগিয়ে আছে।

রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস-এর এই নেতিবাচক রিপোর্টের প্রতিবাদে সুখি সাংবাদিক সমিতি ‘স্ট্যান্ড ফর তথ্য মন্ত্রণালয়’ হ্যাশট্যাগ আন্দোলন শুরু করেছে ফেসবুক ও টুইটারে। আপনারা গুজব প্রচারের মাধ্যমে ‘অনিন্দিতা’ সরকারকে বিশ্বসম্মুখে হেয় প্রতিপন্ন করার যে নোংরা খেলায় মেতেছেন; তা প্রতিহত করতে প্রয়োজন হলে সুখি সাংবাদিক সমিতি রাজপথে নামবে; তথ্য মন্ত্রণালয়ে ফুল বৃষ্টি ঝরাবে।

রিপোর্টে সাংবাদিক ও ব্লগারদের ওপর উগ্রপন্থীদের হামলা এবং হুমকিকে বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতায় অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি পুরোপুরি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সৃষ্টি। বাংলাদেশে কোনো উগ্রপন্থী নাই। বাংলাদেশকে জঙ্গি দেশ প্রমাণে ইহুদি-নাসারাদের অব্যাহত প্রচারণার মুখে; আমাদের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে কোনো আইএস নাই। অথচ আপনারা আবার ষড়যন্ত্রে মেতেছেন। এটা সত্যি মাঝে মাঝে ‘পুলিশ সাংবাদিকের শার্টের কলার ধরা’ ছবি মিডিয়ায় আসে। সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে আপনারা বুঝতে পারেননি, এটা পুলিশের সাংবাদিকের প্রতি গভীর ভালোবাসার প্রকাশ।

আর ব্লগারেরা ইউরোপে ‘পাকা শৌচাগার’-এর লোভে অ্যাসাইলাম বা রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়। এদের সবুজ পাসপোর্টের প্রতি ভালোবাসা নাই; দেশপ্রেম নাই। এইখানেও সাংস্কৃতিক পার্থক্য আছে। আপনাদের গড কিংবা যিশু খ্রিস্ট কারো প্রতি গভীর অনুরাগ নাই। তাই আপনারা বুঝবেন না ধর্মীয় অনুভূতি রক্ষা করার বেদনা। আমরা বুঝি। আপনাদের তো দেশপ্রেমও নাই আমাদের মতো। একদিকে ধর্মীয় অনুভূতি অন্যদিকে দেশপ্রেমের অনুভূতি; এ ছাড়া আমাদের মতো সুখি মানুষের আর কী সম্পদ আছে বলুন। আপনাদের অর্থনীতির সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির পার্থক্য আছে। আমাদের অর্থনীতিতে যে কোন ব্যবসা উদ্যোগের মূলধন হচ্ছে ‘ধর্মীয়’ ও ‘রাজনৈতিক’ অনুভূতি। তাই আমাদের অনুভূতিতে এ ধরণের আঘাত বরদাশত করা হবে না। আপনাদের শীঘ্রই আমরা আমাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অনুভূতিতে আঘাতের দায়ে উকিল নোটিশ পাঠাবো। আপনাকে ঢাকা হাইকোর্টের বারান্দায় ঘুরিয়ে ছাড়বো। সারাদেশে গণমামলা হবে আপনার বিরুদ্ধে।

এছাড়া আপনাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর অব্যাহত হামলা ও মামলার কারণে সেলফ সেন্সরশিপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে অন্তত ২৫ জন সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় কয়েক'শ ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারী বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে।

আপনাদের জানা প্রয়োজন; অভিমত প্রকাশে দায়িত্বশীলতা জরুরী। এই লক্ষ্যে আমরা সুখি সাংবাদিক সমিতির লোকেরাই বলে কয়ে ৫৭ ধারা নিয়ে আসি। যা কিছু হয় আমাদের পরামর্শেই হয়। কোন দেশের সাংবাদিক নীতি নির্ধারণে এতোটা গুরুত্ব পায়? বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে; এইখানে উন্নয়নের বিরুদ্ধে যে কোন সংবাদ ও প্রতিবেদন অনিন্দিতা সরকার ও সুখি সাংবাদিক সমিতির জন্য খারাপ। উন্নয়ন বিরোধী রিপোর্ট করার জন্য কথিত ২৫ সাংবাদিককে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। সারাক্ষণ দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লেখায় কয়েক'শ ব্লগার ও ফেসবুক ব্যবহারকারীকে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কারণ দেশে আইনের শাসন আছে। আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি!

আমাদের সুখি সাংবাদিক সমিতি প্রয়োজন বোধে ‘অনিন্দিতা সরকার’-এর কাছে উড়োজাহাজের টিকেট আর খাই-খরচা নিয়ে প্যারিসে গিয়ে রিপোটার্স উইদাউট বর্ডারের সদরদপ্তর ঘেরাও করবে।

তাই এই বাংলাদেশ বিরোধী রিপোর্ট প্রত্যাহারের জন্য আমরা ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। নইলে ইদের পরে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

দুর্বিনীত
আপনার প্রতি ক্ষুব্ধ
সুখি সাংবাদিক সমিতি

২২১১ পঠিত ... ১৫:১৮, এপ্রিল ২৮, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top