লেখালেখি করতে গেলে কি হাস্য রসিকতা মানা?

৫২৬ পঠিত ... ১৬:৪৮, জানুয়ারি ৩১, ২০২২

hassho-roshikot

প্রতিভা আর হাস্যরসবোধ প্রায় সমার্থক। প্রতিভাবানেরা সাধারণত গম্ভীর হন না। ব্যতিক্রম আছে, তবে বেশির ভাগ প্রতিভাবান মানুষই রসিক মানুষ। তাদের কথা বুদ্ধিদীপ্ত, তাদের চোখেমুখে হাসির ঝলক; অবশ্য কেউ কেউ আছেন গুপ্তঘাতকের মতো, তারা নিজেরা হাসেন না, তাদের চেহারা প্রতারণাপূর্ণ, গম্ভীর মুখে তারা করে যান আশ্চর্য সব রসিকতা। তাদের সৃষ্টির পরতে পরতে পাই হাস্যরসের হীরকদ্যুতি।

বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ লেখকদের প্রায় সবাই হাস্যকৌতুকে ওস্তাদ। আমরা যদি পেছন ফিরে তাকাই, আলালের ঘরের দুলাল থেকে হুতম প্যাঁচার নকশা হয়ে কমলাকান্তের দপ্তর পর্যন্ত আমরা পাব আমাদের সুন্দরতম হাস্যরস, কৌতুকবোধ, ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপের উদাহরণগুলো। বঙ্কিমচন্দ্রকে বলা যাবে হাস্যরসের মাস্টার। তারপর আছেন রবীন্দ্রনাথ। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ মনীষীটিই বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে হাস্যরস-সমৃদ্ধ পুরুষ। এরপর এলেন শরৎচন্দ্র। তার লেখারও অন্যতম প্রধান গুণ যে হাস্যরস; করুণরসের দিকে তাকাতে গিয়ে সে কথা অনেক সময় আমাদের খেয়ালই থাকে না।

আলালের ঘরের দুলাল থেকে খানিকটা উদ্ধৃতি দিই:

আলালের ঘরের দুলালের লেখাপড়ার বহর কী রকম হতে পারে, নমুনা দেখুন:

'বালকটি পিতা-মাতার নিকট আস্কারা পাইয়া পাঠশালায় যাইবার নামও করিত না। যিনি বাটীর সরকার তাঁহার উপর শিক্ষা করাইবার ভার ছিল। প্রথম প্রথম গুরু মহাশয়ের নিকটে গেলে মতিলাল আঁ আঁ করিয়া কান্দিয়া তাঁহাকে আঁচড় ও কামড় দিত, গুরুমহাশয় কর্তার নিকট গিয়া বলিতেন, মহাশয়! আপনার পুত্রকে শিক্ষা করানো আমার কর্ম নয়। কর্তা প্রত্যুত্তর দিতেন, ও আমার সবেধন নীলমণি-ভুলাইয়া-টুলাইয়া গায় হাত বুলাইয়া শেখাও। পরে বিস্তর কৌশলে মতিলাল পাঠশালায় আসিতে আরম্ভ করিল। গুরুমহাশয় পায়ের উপর পা, বেত হাতে দেয়ালে ঠেসান দিয়া ঢুলছেন ও বলছেন ‘ল্যাখ রে ল্যাখ।‘ মতিলাল ঐ অবকাশে উঠিয়া তাঁহার মুখের নিকট কলা দেখাচ্ছে আর নাচ্ছে, গুরুমশায় নাক ডাকিতেছেন, শিষ্য কি করিতেছে তাহা কিছুই জানেন না। তাঁহার চক্ষু উন্মীলিত হইলেই মতিলাল আপন পাততাড়ির নিকট বসিয়া কাগের ছা বগের ছা লিখিত। সন্ধ্যাকালে ছাত্রদিগকে ঘোষাইতে আরম্ভ করিলে মতিলাল গোলে হরিবোল দিত, কেবল গণ্ডার এণ্ডা ও বুড়িকা ও পণিকার শেষ অক্ষর বলিয়া ফাঁকি সিদ্ধান্ত করিত, মধ্যে মধ্যে গুরুমহাশয় নিদ্রিত হইলে তাঁহার নাকে কাটি দিয়া ও কোঁচার উপর জ্বলন্ত অঙ্গার ফেলিয়া তীরের ন্যায় প্রস্থান করিত। আর আহারের সময় চুনের জল ঘোল বলিয়া অন্য লোকের হাত দিয়া পান করাইত। গুরুমহাশয় দেখিলেন বালকটি অতিশয় ত্রিপণ্ড, মা সরস্বতীকে একবারে জলপান করিয়া বসিল, অতএব মনে করিলেন যদি এত বেত্রাঘাতে সুযুত না হইল, কেবল গুরুমারা বিদ্যাই শিক্ষা করিল তবে এমতো শিষ্যের হাত হইতে ত্বরায় মুক্ত হওয়া কর্তব্য, কিন্তু কর্তা ছাড়েন না, অতএব কৌশল করিতে হইল। বোধ হয় গুরুমহাশয়গিরি অপেক্ষা সরকারি ভালো, ইহাতে বেতন দুই টাকা ও খোরাক-পোষাক, উপরি লাভের মধ্যে তালপাত কলাপাত ও কাগজ ধরিবার কালে এক একটা সিধে ও এক এক জোড়া কাপড় মাত্র, কিন্তু বাজার সরকারি কর্মে নিত্য কাঁচা কড়ি। এই বিবেচনা করিয়া কর্তার নিকট গিয়া কহিলেন, মতিবাবুর কলাপাত ও কাগজ লেখা শেষ হইয়াছে এবং এক প্রস্থ জমিদারী কাগজও লেখানো গিয়াছে। বাবুরামবাবু এই সংবাদ পাইয়া আহ্লাদে মগ্ন হইলেন, নিকটস্থ পারিষদেরা বলিল, না হবে কেন! সিংহের সন্তান কি কখন শৃগাল হইতে পারে?'

আর বঙ্কিমচন্দ্রের রসবোধের সামান্য নিদর্শন দিই কমলাকান্তের দপ্তর থেকে। এখানে কমলাকান্ত মানুষকে বিভিন্ন ফলের সঙ্গে তুলনা করছেন:

'এ দেশের সিবিল সার্ভিসের সাহেবদিগকে আমি মনুষ্যজাতিমধ্যে আম্রফল মনে করি। এ দেশে আম ছিল না, সাগরপার হইতে কোন মাহাত্ম্য এই উপাদেয় ফল এ দেশে আনিয়াছেন। আম্র দেখিতে রাঙ্গা রাঙ্গা, ঝাঁকা আলো করিয়া বসে। কাঁচায় বড় টক- পাকিলে সুমিষ্ট বটে, কিন্তু তবু হাড়ে টক যায় না। কতকগুলো আম এমন কদর্য্য যে, পাকিলেও টক যায় না। কিন্তু দেখিতে বড় বড় রাঙ্গা রাঙ্গা হয়, বিক্রেতা ফাঁকি দিয়া পঁচিশ টাকা শ' বিক্রয় করিয়া যায়। কতকগুলি আম কাঁচামিটে আছে - পাকিলে পান্শে। কতকগুলো জাঁতে পাকা। সেগুলি কুটিয়া নুন মাখিয়া আমসী করাই ভাল।

সকলে আম্র খাইতে জানে না। সদ্য গাছ হইতে পাড়িয়া এ ফল খাইতে নাই। ইহা কিয়ৎক্ষণ সেলাম-জলে ফেলিয়া ঠাণ্ডা করিও - যদি জোটে, তবে সে জলে একটু খোশামোদ-বরফ দিও - বড় শীতল হইবে। তার পরে ছুরি চালাইয়া স্বচ্ছন্দে খাইতে পার।

স্ত্রীলোকদিগকে লৌকিক কথায় কলাগাছের সহিত তুলনা করিয়া থাকে। কিন্তু সে গেছো কথা। কদলীফলের সঙ্গে ভুবনমোহিনী জাতির আমি সৌসাদৃশ্য দেখি না। স্ত্রীলোক কি কাঁদি কাঁদি ফলে? যাহার ভাগ্যে ফলে ফলুক - কমলাকান্তের ভাগ্যে ত নয়। কদলীর সঙ্গে কামিনীগণের এই পর্যন্ত সাদৃশ্য আছে যে, উভয়েই বানরের প্রিয়। কামিনীগণের এ গুণ থাকিলেও কদলীর সঙ্গে তাঁহাদিগের তুলনা করিতে পারি না। পক্ষান্তরে কতকগুলি কটুভাষী আছেন, তাঁহারা ফলের মধ্যে মাকাল ফলকেই যুবতীগণের অনুরূপ বলেন। যে বলে, সে দুর্ম্মুখ - আমি ইঁহাদিগের ভৃত্যস্বরূপ; আমি তাহা বলিব না।

আমি বলি, রমণীমণ্ডলী এ সংসারের নারিকেল। নারিকেলও কাঁদি কাঁদি ফল বটে, কিন্তু (ব্যবসায়ী নহিলে) কেহ কখন কাঁদি কাঁদি পাড়ে না। কেহ কখন দ্বাদশীর পারণার অনুরোধে, অথবা বৈশাখ মাসে ব্রাহ্মণসেবার জন্য একটি আধটি পাড়ে। কাঁদি কাঁদি পাড়িয়া খাওয়ার অপরাধে যদি কেহ অপরাধী থাকে, তবে সে কুলীন ব্রাহ্মণেরা। কমলাকান্ত কখন সে অপরাধে অপরাধী নহে।'

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কৌতুকবোধ তার লাইনে লাইনে ছড়ানো। একটু উদাহরণ দিই, তার বিখ্যাত 'শ্রীকান্ত' উপন্যাসের সেই অংশটি থেকে, যেটা আবার আমাদের ছোটবেলায় স্কুলের পাঠ্যবইয়ে ছিলো।

'ছোড়দা, যতীনদা ও আমি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ি এবং গম্ভীর-প্রকৃতি মেজদা বার-দুই এন্ট্রান্স ফেল করিবার পর গভীর মনোযোগের সহিত তৃতীয়বারের জন্য প্রস্তুত হইতেছেন। তাঁহার প্রচণ্ড শাসনে একমুহূর্ত কাহারো সময় নষ্ট করিবার জো ছিল না।

আমাদের পড়ার সময় ছিল সাড়ে সাতটা হইতে নয়টা। এই সময়টুকুর মধ্যে কথাবার্তা কহিয়া মেজদা'র 'পাশের পড়া'র বিঘ্ন না করি, এই জন্য তিনি নিজে প্রত্যহ পড়িতে বসিয়াই কাঁচি দিয়া কাগজ কাটিয়া বিশ-ত্রিশখানি টিকিটের মত করিতেন। তাহার কোনটাতে লেখা থাকিত 'বাইরে', কোনটাতে 'থুথু ফেলা', কোনটাতে 'নাক ঝাড়া', কোনটাতে 'তেষ্টা পাওয়া' ইত্যাদি।

যতীনদা একটা 'নাক ঝাড়া' টিকিট লইয়া মেজদা'র সমুখে ধরিয়া দিলেন। মেজদা তাহাতে স্বাক্ষর করিয়া লিখিয়া দিলেন, হুঁ, আটটা তেত্রিশ মিনিট হইতে আটটা সাড়ে চৌত্রিশ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ এই সময়টুকুর জন্য সে নাক ঝাড়িতে যাইতে পারে। ছুটি পাইয়া যতীনদা টিকিট হাতে উঠিয়া যাইতেই ছোড়দা 'থুথুফেলা' টিকিট পেশ করিলেন। মেজদা 'না' লিখিয়া দিলেন। কাজেই ছোড়দা মুখ ভারি করিয়া মিনিট-দুই বসিয়া থাকিয়া 'তেষ্টা পাওয়া' আর্জি দাখিল করিয়া দিলেন। এবার মঞ্জুর হইল। মেজদা সই করিয়া লিখিলেন, হুঁ, আটটা একচলি্লশ মিনিট হইতে আটটা সাতচলি্লশ মিনিট পর্যন্ত। পরওয়ানা লইয়া ছোড়দা হাসিমুখে বাহির হইতেই যতীনদা ফিরিয়া আসিয়া হাতের টিকিট দাখিল করিলেন। মেজদা ঘড়ি দেখিয়া সময় মিলাইয়া একটা খাতা বাহির করিয়া সেই টিকিট গঁদ দিয়া আঁটিয়া রাখিলেন। সমস্ত সাজ-সরঞ্জাম তাঁহার হাতের কাছেই মজুত থাকিত। সপ্তাহ পরে এই সব টিকিটের সময় ধরিয়া কৈফিয়ৎ তলব করা হইত।

এইরূপে মেজদা'র অত্যন্ত সতর্কতায় এবং সুশৃঙ্খলায় আমাদের এবং তাঁহার নিজের কাহারও এতটুকু সময় নষ্ট হইতে পাইত না। প্রত্যহ এই দেড়ঘণ্টা কাল অতিশয় বিদ্যাভ্যাস করিয়া রাত্রি নয়টার সময় আমরা যখন বাড়ির ভিতরে শুইতে আসিতাম, তখন মা সরস্বতী নিশ্চয়ই ঘরের চৌকাঠ পর্যন্ত আমাদিগকে আগাইয়া দিয়া যাইতেন; এবং পরদিন ইস্কুলে ক্লাশের মধ্যে যে সকল সম্মান-সৌভাগ্য লাভ করিয়া ঘরে ফিরিতাম, সে ত আপনারা বুঝিতেই পারিতেছেন। কিন্তু মেজদা'র দুর্ভাগ্য, তাঁহার নির্বোধ পরীক্ষকগুলা তাহাকে কোনদিন চিনিতেই পারিল না।'

সব শেষে দিই রবীন্দ্রনাথ থেকে। ছুটি গল্পটাই দেখুন না কীভাবে শুরু হচ্ছে?

'বালকদিগের সর্দার ফটিক চক্রবর্তীর মাথায় চট্ করিয়া একটা নূতন ভাবোদয় হইল; নদীর ধারে একটা প্রকাণ্ড শালকাষ্ঠ মাস্তুলে রূপান্তরিত হইবার প্রতীক্ষায় পড়িয়া ছিল; স্থির হইল, সেটা সকলে মিলিয়া গড়াইয়া লইয়া যাইবে।

যে ব্যক্তির কাঠ, আবশ্যক-কালে তাহার যে কতখানি বিস্ময় বিরক্তি এবং অসুবিধা বোধ হইবে, তাহাই উপলব্ধি করিয়া বালকেরা এ প্রস্তাবে সম্পূর্ণ অনুমোদন করিল।

কোমর বাঁধিয়া সকলেই যখন মনোযোগের সহিত কার্যে প্রবৃত্ত হইবার উপক্রম করিতেছে এমন সময়ে ফটিকের কনিষ্ঠ মাখনলাল গম্ভীরভাবে সেই গুঁড়ির উপরে গিয়া বসিল; ছেলেরা তাহার এইরূপ উদার ঔদাসীন্য দেখিয়া কিছু বিমর্ষ হইয়া গেল।

একজন আসিয়া ভয়ে ভয়ে তাহাকে একটু-আধটু ঠেলিল, কিন্তু সে তাহাতে কিছুমাত্র বিচলিত হইল না; এই অকাল-তত্ত্বজ্ঞানী মানব সকল প্রকার ক্রীড়ার অসারতা সম্ব্বন্ধে নীরবে চিন্তা করিতে লাগিল।'

রবীন্দ্রনাথ তার কনে দেখার গল্পটা মৈত্রেয়ী দেবীকে যেভাবে বলেছিলেন, সেটা না বলে এই লেখা শেষ করা যাবে না:  

'মেয়ের বাবা অনেক পয়সা-কড়ির মালিক। বাসায় যাবার পর, দুটো অল্প বয়সী মেয়ে এসে উপস্থিত হলো । একটি মেয়ে নেহাৎ সাধাসিধে, জড়ভরতের মত এক কোনে বসে রইল এবং অন্যটি যেমন সুন্দরী তেমনি স্মার্ট। কোন জড়তা নেই। শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজিতে কথা বলছে। ওর সঙ্গে কথা হল। আমাদের পিয়ানো বাজিয়ে শোনালো। আমি মুগ্ধ, বিস্মিত। মনে মনে ভাবছি, সত্যিই কি আমি ওকে পাবো। ভাবনায় ছেদ পড়লো। বাড়ির কর্তা তখন ঘরে ঢুকলেন। ঘরে ঢুকেই তিনি মেয়েদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সুন্দরী, স্মার্ট মেয়েটিকে দেখিয়ে তিনি বললেন, হেয়ার ইজ মাই ওয়াইফ। আর জড়ভরতটিকে দেখিয়ে বললেন, হেয়ার ইজ মাই ডটার।

আমি তো শুনে থ হয়ে গেলাম। যা হোক, বিয়ে হলে মন্দ হতো না। সাত লাখ টাকা পাওয়া যেতো। বিশ্বভারতীর কাজে ব্যয় করতে পারতাম। তবে শুনেছি, মেয়েটি নাকি বিয়ের দু'বছর পরই বিধবা হয়। যাক, বাঁচা গেছে। কারণ স্ত্রী বিধবা হলে আমার প্রাণ রাখা শক্ত হতো।'

আমাদের কালেও হুমায়ূন আহমেদই বলুন, আর নির্মলেন্দু গুণ বলুন, এদের রসবোধের কোনো তুলনা হয় না। নির্মলেন্দু গুণ তখন বাংলাবাজার পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক। একদিন আমাকে বললেন, এই আনিস, আমাকে লেখা দিও, আমরা তো ভালো লেখাও ছাপি। হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে গল্প করতে বসলে বোঝা যায়, লোকটা কী রকম রসে একেবারে টইটম্বুর। যেমন আনিসুজ্জামান স্যার। স্যার গল্প করতে আরম্ভ করলে আমি তাকে বলতে বাধ্য হই, স্যার, আগে হেসে নিই। তারপর আবার পরের অংশ বলেন। স্যার বলতে শুরু করেন, শোনো, একবার হলো কী, আমি বক্তৃতা করব, আর একজন রেভারেন্ড সভাপতিত্ব করবেন, সভাকক্ষে আমরা দুজনই মাত্র উপস্থিত। সভা শুরু করা যাচ্ছে না। এই সময় বৃষ্টি শুরু হলো বাইরে। কিছু লোক দৌড়ে ভেতরে এলো। যেইনা সভার কাজ শুরু করতে যাব, অমনি বৃষ্টি গেল থেমে। সবাই বাইরে চলে গেল। শেষে সভাপতি বললেন, শুরু করুন আপনার বক্তৃতা। আমি বক্তৃতা দিলাম। সভাপতি শুনলেন। তারপর সভাপতি বক্তৃতা দিলেন। আমি শুনলাম।

কিন্তু বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠজনেরা কৌতুকবোধ হাস্যরসবোধে উজ্জ্বল হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে রসিকতা করা বিপজ্জনক। কারণ লোকে আপনাকে রম্যলেখক বা ভাঁড় বলে চিহ্নিত করার প্রয়াস পাবে। এই দেশে এক ধরনের কপট সিরিয়াসনেসের বড়ই কদর। কিন্তু মূর্খরা জানে না, এমনকি আখতারুজ্জামান ইলিয়াসও অত্যন্ত রসিক ও কৌতুকপ্রিয় ছিলেন। তার গল্পেও ব্যঙ্গ ও বিদ্রূপ এক প্রধান সম্পদ। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের পা কেটে ফেলতে হয় ক্যান্সারের কারণে। হাসপাতালে তাকে দেখতে গিয়ে এক তরুণ আঁতেল কাঁদতে শুরু করেন। ইলিয়াস বলেন, কাঁদছ কেন?

ইলিয়াস ভাই, আপনার পা? আপনার তো পা নাই।

ইলিয়াস জবাব দেন, আমার পা নাই, তাই তুমি কাঁদছ? তোমার যে মাথা নাই, তা নিয়ে আমাকে কখনও কাঁদতে দেখেছ!

আমি আবার মিলান কুন্ডেরার খুবই ভক্ত। তিনি মনে করেন, এবং প্রচার করেন, সব কিছুরই একটা হালকা দিক আছে, এমনকি মৃত্যুরও আছে হালকা দিক, এমনকি সেক্সেরও আছে হালকা দিক। তার একটা উপন্যাসে একজন চিকিৎসক বন্ধ্যা নারীদের সন্তান ধারণের চিকিৎসা করেন। তিনি নিজের শুক্রাণু ইনজেকশন দিয়ে ঢুকিয়ে দেন নারীদের ডিম্বাশয়ে। তারপর রাস্তা দিয়ে হাঁটেন আর খেলার মাঠের শিশুদের দিকে তাকিয়ে দেখেন, ছেলেপুলেগুলো তার মতো দেখতে হয়েছে কিনা।

এটা নিতান্তই একটা গল্প। একদিন মিলান কুন্ডেরার কাছে কয়েকজন চিকিৎসক আসেন, তারা তাকে আমন্ত্রণ জানান বন্ধ্যত্ব নিরাময় বিষয়ক সেমিনারে ভাষণ দেবার জন্য। কুন্ডেরা বলেন, আমি তো এই বিষয়ের কিছুই জানি না। ডাক্তাররা বলেন, না না, আপনি বন্ধ্যত্ব বিষয়ে উপন্যাস লিখেছেন।

কুন্ডেরা বলেন, আমি তো হালকা চালে লিখেছি। এটাকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নাই।

আপনি এটা কী বলছেন, আপনার লেখা আমরা সিরিয়াসলি নেব না?

৫২৬ পঠিত ... ১৬:৪৮, জানুয়ারি ৩১, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top