নেটফ্লিক্স না থাকায় কল্পনায় আমি 'এক্সট্রাকশন' মুভিটা যেমন দেখলাম

১২২১ পঠিত ... ১৩:২৬, এপ্রিল ২৬, ২০২০

সবাই বলছেন, extraction মুভিতে ঢাকাকে ঠিকমত রিপ্রেজেন্ট করা হয়নি। আমার কিন্তু একদম সেরকম মনে হচ্ছে না। বরং আমার পর্যবেক্ষণে, সফল এই মুভিটাকে আমি 'রোমান্টিক থ্রিলার' জনরায় ফেলতে পারি।

মুভির শুরুতেই আমার মন কেড়ে নেয় 'ক্রিস হেমসওয়ার্থ'-এর সাবলীল অভিনয়। মুভিতে তার নাম- 'রাজু ভাই'। তিনি মূলত একজন সৎ, পরিশ্রমী সিএনজি ড্রাইভার। মুভিতে ক্রিস একজন চেইন স্মোকার। 'হলিউড' ব্রান্ডের সিগারেট সবসময় তার বুক পকেটে থাকে। এছাড়া, গতর খাটিয়ে সিএনজি চালানোর কারণে তার সিক্সপ্যাক অ্যাবস সদা দৃশ্যমান।

ক্রিসের মুখে খাস ঢাকাইয়া ভাষা শুনে আমি অত্যন্ত বিমোহিত। আমার মনে পড়ে যায়, প্রয়াত নায়ক মান্নার কথা। 'ধর', 'ধাওয়া', ইত্যাদি মুভি রিমেক করা হলে মান্নার স্থানে ক্রিস হেমসওয়ার্থকে নেয়া যাবে নির্দ্বিধায়।

একটি দৃশ্যে জনৈক যাত্রী মিটারে যেতে চাইলে, ক্রিস রেগে গিয়ে বলেন, 'আবে হালায় মাইংগারপো, মিটার ভাইঙ্গা বেইচা দিছি। আমারে চ্যাতাইসনা! অহন কইলাম তরে ভাঙমু!'

এসময় ওই যাত্রী ভয় পেয়ে দৌড় দিলে ক্রিস তার পিছু নেয়৷ একটু পরেই বুঝতে পারি ওই যাত্রী আসলে ড্রাগ ডিলার৷ অর্থাৎ, প্রতিটা দৃশ্যই যেন একটার সাথে অন্যটা রিলেটেবল।

ক্রিস দৌড়াতে দৌড়াতে ঢুকে পড়েন মোহাম্মদপুরের বিহারী কলোনিতে। এসময় অনেকেই ডাক দিয়ে বলতে থাকে, 'রাজু ভাই! এইদিকে আহেন। একের মাল আছে৷ খাইলেই চক্ষে সালমা হায়েক দেখতারবেন।'

এসময় ক্রিস এর চোখ পড়ে বিহারী কলোনির অপরূপ রূপবতী একটি মেয়ের উপর। বুঝতে বাকি থাকেনা যে রূপবতী মেয়েটাই মুভির প্রধান নায়িকা।

ক্রিস সবাইকে ইগনোর করে ওই মেয়েটার কাছ থেকেই একটা জয়েন্ট কিনে খায়। জয়েন্টে টান দেয়ার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় মুভির প্রধান আইটেম সং! বানিজ্যিক মুভিতে এধরনের রগরগে আইটেম সং আগে হয়নি।

গানের শেষ দৃশ্যে ক্রিস হেমসওয়ার্থের মুখ নায়িকার মুখের কাছে আসতেই একতোড়া গোলাপ ফুল এসে ঢেকে দেয় স্ক্রিন। উফ! আই ক্যান এ্যাসিওর ইউ, এরকম আবেদনময়ী গোলাপফুল আর কোনো হলিউড মুভিতে দেখানো হয়নি।

নেশা কাটলেই ক্রিস আবারো ড্রাগ ডিলারের পিছু নেয়। এদিকে মেয়েটাকে ছেড়ে যাওয়ার সময় ক্রিস এর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। ব্যাকগ্রাউন্ডে করুণ সূরে বাজতে থাকে, 'নেশা কেটে গেলে, তুমিও কেটে যাবে'। ইমোশনে ভরপুর এই মুভি আপনাকে কাঁদাবেই ৷

মুভির মাঝখানে আরো কিছু ঘটনা ঘটে যায়। ক্রিস এর বাবা ফোন করে হঠাৎ বলেন, 'রাজু তোর মায়ের অপারেশন। এখনই বিশ হাজার টাকা লাগবে।'

আমি ভেবেছিলাম ক্রিস হয়তো সিএনজি চালিয়েই টাকাটা আয় করবেন৷ কিন্তু না। ক্রিস একজন সঞ্চয়ী নায়ক। আগে থেকেই তার কাছে টাকা ছিলো। ক্রিস বলেন, 'আব্বাজান! আপনের বিকাছ নাম্বারডা পাঠায়া দ্যান। আমি ডলার ভাঙ্গায়া আইতাচি।'

শেষ দৃশ্যে ক্রিস এর মা সুস্থ হয়ে ওঠেন। ক্রিসও সেই ড্রাগ ডিলার কে ধরতে সক্ষম হন। ক্রিস তাকে গুলিস্তানের রাস্তায় নিয়ে বেদম প্রহার করতে থাকেন৷ তবে, প্রহার করার পর জানা যায়, ঐ ড্রাগ ডিলারই নায়িকার বাবা৷ আর তখনই শেষ হয়ে যায় মুভি।

এখানেই পরিচালক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। নায়িকার বাবা কি এত মার খাওয়ার পরও ক্রিসের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি হবেন? হয়তো এসব প্রশ্নের উত্তর, মুভির সিকুয়ালেই জানা যাবে।

তবে এত সব 'ভিজুয়াল ট্রিট' এর মধ্যে আমার ওই দৃশ্যটাই সবচেয়ে ভাল লাগলো, যখন ক্রিস হেমসওয়ার্থ নায়িকার মুখের কাছে মুখ আনলো, আর সাথে সাথে একটা গোলাপ ফুল এসে ওদের মুখ ঢেকে দিলো...

 

আরও পড়ুন

এক্সট্রাকশন দেখে যা বুঝলাম, যা বুঝলাম না

যে ১০টি কারণে এক্সট্রাকশন ঢাকাকে সঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি

১২২১ পঠিত ... ১৩:২৬, এপ্রিল ২৬, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top