প্রায় সাতমাস হয়ে এলো; কলকাতার বেহালাতে মেস করে আছি সবাই। মনে পড়ে যায় গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে ভুতের গলিতে একটা মেস করে থাকতাম আমরা। এরশাদকে ক্ষমতা থেকে নামানোর পর বাবর রোডে একটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখল করি। আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। গুলশানে আরেকটা পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে নিলাম আপা ক্ষমতায় আসতেই। আর এবার তো ভানকুভারে ভিলা কিনেছি। কিন্তু আল্লাহর কি লীলাখেলা আবার এই বেহালার মেসে তুলছেন। গোলাপ, টগর, রতন, দুলাল ডাবলিং করে থাকি। জবা-কুসুম একটা ঘরে উঠছে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ এসে মরাকান্না জুড়ে দেয়। বাড়িওয়ালা ধমক দিয়ে যায়, বাশাটাকে একেবারে ছাপড়ি বানিয়ে ছাড়লেন; আপনারা তো লোক ভালো নয় মশয়।
সেইদিন খেলা হবে ভাইরে ফোন দিছিলাম। সে কইলো দিল্লির দিকে আইসো না; উঁইপোকা বলে পুলিশ ভ্যানে তুলে নিয়ে যাবে। আমি আজমির শরীফে খাদেম হয়ে কোনমতে বেঁচে আছি।
প্রায় প্রত্যেকদিনই শুভেন্দু দাদার অফিসের বারান্দায় বসে জয় শ্রীরাম শ্লোগান দিই। সেদিন দাদার পকেটে বিদেশি মার্লবরো সিগেরেটের প্যাকেট ঠেসে দিয়ে বললাম, ও দাদা অনেকদিন তো হলো। বেহালা থেকে এ অব্দি আসতে ভয় লাগে; কবে কোন পুলিশ ধরে উঁইপোকা বলে চালান করে দেয়। এবার একটা আধার কার্ডের ব্যবস্থা করুন প্লিজ। শুভেন্দুদা মুখ বাঁকিয়ে বললো, তাতে আমার কি লাভ!
–দাদা বাংলাদেশে আমরা আপনার বিজেপির শক্ত ঘাঁটি করে দিয়েছিলাম। মোদিজি সেখান থেকে পশ্চিমবঙ্গ ইলেকশন ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে তো আপনারা দাঁত ঢুকাতে পারলেন না। তাই বলি কি আমাদের দায়িত্ব দিন। গুজরাটে যেমন ডেমোগ্রাফি চেঞ্জ করে বিজেপি আধিপত্য বিস্তার করেছিলো; পশ্চিমবঙ্গে অমনি ডেমোগ্রাফি চেঞ্জ করে আপনারা জিতে যাবেন। এখন তো আওয়ামী লীগ মানেই বিজেপি।
কথাটা মনে ধরে শুভেন্দুদার। কাঁধে থাবা দিয়ে বলে, তুমি তো দেখছি আসলেই একটা জুয়েল। দেখি কতদূর কী করতে পারি।
জবা-কুসুম বোনের ঘরে রুপালি-শেফালি-কল্পনা-আল্পনা এসে জুটেছে। তাদের মলিন চেহারা দেখে মনে হলো এরা পনেরো বছর পারসোনার ওপর নির্ভর করে পারসোনালিটি টিকিয়ে রেখেছিলো। এখন ওদের জন্য আধার কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। হাওড়া, হাতিশালা, বানতলা, রাজারহাট, মহেশতলা নানা জায়গার ঠিকানা দিয়ে বানাতে হবে কার্ড। এক জায়গায় কার্ড বানাতে গেলে সবাই ধরা পড়ে যাবে।
বাংলাদেশে টেকাটুকার দায়িত্ব দিয়ে এসেছিলাম ফুরকান হুজুরের কাছে। সে নিয়মিত হুন্ডি করে। সে ওলামা লীগ থেকে এখন জামায়াতের রুকন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ট্রয়ের ঘোড়া দেইখা এই আত্মগোপন ও আত্মপ্রকাশের রাজনীতি বানাইছিলাম আমরা। সেইডা কাজে দিতেছে।
টগর অনেকদিন পর একটু কিং ফিশার আনছিলো। কিন্তু আজকাল সময় পাইলেই তজবিহ টিপি। তাই বারান্দায় গিয়া দাঁড়াইয়া সামনের দিকে তাকাইলাম। আল্লাহ যে রাজারে ফকির বানাইতে পারে সেই বুজরুকিটা জীবন দিয়া দেখলাম। আরে দূর, ফইন্নি সে যতই টাইকুন হইতে চেষ্টা করুক; সে ফইন্নিই থাইকা যায়; ভাল্লাগে না জীবন। এখন আবার কাপড় কাচার বল সাবান দিয়া লুঙ্গি ধুইতে হইবো।
একটা খেংরা টাইপের চশমা পরা লোক আসে, হাতে চামড়ার ব্যাগ, পাঁচ আঙ্গুলে নানা পাথর বসানো আংটি। চশমার ফাঁক দিয়া কয়, দাদা পাঠিয়েছেন, আমি ঘনশ্যাম; জুয়েল বাবুকে একটু ডেকে দিন।
: আমিই জুয়েল।
: শরীর তো নধর গোলগাল বানিয়েছেন। আপনাকে অধিকারী টাইটেলে মানিয়ে যাবে। কই বাকিগুলোকে ডাকুন; চেহারা দেখে টাইটেল বসিয়ে দেবো।
সবাই এলে ঘনশ্যাম বাবু তাদের চেহারা ছবি দেখে, দাস, সাহা, মাল্লা, পাল টাইটেল বসিয়ে দেয়। সবাইকে নামের আগের অংশটা বেছে নিতে বলে। কেউ রাজেশ, কেউ ভবেশ, কেউ রাহুল, কেউ শ্যামল, কেউ সুভাষ বসিয়ে নেয়। কেউ কেউ ফেসবুক দেখে নাম তালাশ করতে।
জবা একটু আগ্রহ করে জিজ্ঞেস করে, বাবার নাম কি হবে!
ঘনশ্যাম বাবু চশমাটা নাকের ওপর থেকে আঙ্গুল দিয়ে তুলে বলে, কেন বচ্চন জির ফিলিম দেখেননি, রিশতেমে তো হাম তুমহারা বাপ লাগতাহু, নাম হ্যায় শাহেনশাহ।
সবাই উৎসুক চোখে তাকায়, ভবেশ-রাজেশের বাবার নাম শাহেনশাহ হয় কি করে!
ঘনশ্যাম মাথা ঝাঁকিয়ে সুড়ুত করে চায়ে চুমুক দিয়ে বলে, শাহেনশাহ তো একজনই যার দয়ায় আপনারা প্রাণে বেঁচে গেলেন। জয় বাবা মুদিন্দ্রনাথ!
পাঠকের মন্তব্য