ভিসা নেই, ভিডিও কল তো আছে

৩২১ পঠিত ... ১২:৩৩, মে ২৯, ২০২৩

ভিসা-নেই,

প্রিয়তম টগর,

তোমার শেষ চিঠিতে তুমি লিখেছিলে; আমি যেন তোমাকে ভুলে না যাই। একথা কী করে ভাবতে পারলে টগু। পৃথিবীতে কী প্রেম ভালোবাসা এতোই ঠুনকো বিষয়; যে ভুলে যাবো তোমাকে; যে আমার হৃদি সরসিজ; প্রেম উদ্দাম আমাকে ধন্যি করেছিলো।

আব্বা এক ঘাটের মড়া ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে ঠিক করলে; আমি এক কাপড়ে চলে এসেছিলাম তোমার হলের গেটে। তারপর কোর্টে গিয়ে বেলি ফুলের মালাবদল করে বিয়ে করলাম। তোমার হলের ছাদে জ্যোৎস্না দেখে আমাদের মধুচন্দ্রিমা হলো।

এরপর আমরা হাজারিবাগের সেই ছোট্ট ফ্ল্যাটে উঠলাম। তুমি কত কষ্ট করে সংসার চালাতে। সবজি কাটার সময় গরমে আমার নাকের নীচে কয়েকবিন্দু ঘাম জমলে, তুমি পরম আদরে মুছে দিতে তোমার পাঞ্জাবির খুঁট দিয়ে।

মনে আছে আমরা দুজনে দীর্ঘ পথ হেঁটেছি। ২০০৯ সালের পর তুমি হাতে আলাদিনের চেরাগ পেলে। তাতে ঘষা দিয়ে চাইলে গুলশানে একটা অ্যাপার্টমেন্ট আর গাড়ি। আর আমাদের পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিদিন রাতে চেরাগ ঘষা দিলেই দৈত্য এসে বলতো; আদেশ করুন রুখ রুখ রুখসানা।

আমি সেকেন্ড হোম চাইলাম; ছেলেমেয়ে দুটোর অ্যাডমিশন চাইলাম আটলান্টিকের ওপারে।

তুমি তখন উন্নয়নের দুর্জয় শিখরে; নির্বাচনী এলাকায় প্রবল প্রতাপ, তোমার ভয়ে বাঘে-মহিষে একই ঘাটে জল খেতো।

একদিন তোমার ফোনে ওয়েস্টিনের কুচিন্তার মেয়েদের মেসেজ দেখলাম; তাদের প্রতিশ্রুতির ইতিউতি দেখলাম পাঠানো ছবিতে। তোমাকে যুবতী নারীর কোল নিয়ে প্রগলভ হতে দেখে নিজেকে মৌরালা মাছের ঝোল বলে মনে হলো।

বাচ্চাদের সঙ্গে চলে এলাম মার্কিন মুল্লুকে। আমার কী অভিমান হতে নেই। কিন্তু আমি জানতাম একদিন তোমার দম্ভের আর পৌরুষের পতন হবে। যেদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লিংকেনের চড় দেখলাম; বুঝলাম তোমার গালে এই চড়ের দাগ বসে গেছে।

আমি জানতাম পিউ পাপিয়ার আসর তোমার কপালে সইবে না; তোমাকে আমার কাছে ফিরে আসতেই হবে। আমি মানত রেখেছিলাম আমার টগরের সুমতির জন্য।

কিন্তু তোমার হাতে যে রক্তের দাগ; ঐ গুনাহ আল্লা ছাড়া কেউ ক্ষমা করতে পারেন না। এইদেশে একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধীর বিচার হয়েছে ৪০ বছর পর। চল্লিশ বছর পর তোমার বিচার হবে এতো জানা কথা। তোমার পাপের ছায়া আমাদের সন্তানের মাথায় পড়ুক এ আমি চাই না।

কিন্তু ভয় পেও না। আমি তোমারই থাকবো। হাতকাটা জামা ছেড়ে গতকাল থেকে হিজাব পরতে শুরু করেছি। সুযোগ পেলে ওমরাহ করতে গিয়ে তোমার সঙ্গে দেখা হতে পারে। আমি আমার মেহরামকে পাশে চাই পবিত্রভূমিতে।

এখন নির্বাচনের আগে তোমার কমিশনের বানিজ্যটা ভালো যাবে না। আমি বুদ্ধি করেছি এখানে পাচার করা তোমার টাকা থেকে কিছু টাকা প্রতিমাসে রেমিটেন্স হিসেবে পাঠাবো। এতে কালো টাকা সাদা করার কাজও হয়ে যাবে।

ক্ষমতা আঁকড়ে আছো থাকো; কিন্তু সামনে নির্বাচনের আগে প্রতিপক্ষের লোকের দিকে লেঠেল লেলিয়ে দিও না। ভোটের আগের রাতে ভোটকেন্দ্রে যেও না। রাতের ভোটের নেশা কিন্তু ফেনসিডিলের নেশার মতো চোখ লাল করা জীবন বিনাশী নেশা। নির্বাচনে জিততে কোন রকম কালো টাকা-পেশীশক্তি বা রিটার্নিং অফিসারকে প্রভাবিত করা; বা পুলিশ ডেকে বিরিয়ানি পেপসি খাওয়ানো আর হাতে টাকা গুঁজে দেবার কৌশলগুলো আর করো না। ধরা তো পড়বেই নির্বাচনে দুর্নীতির যে কোন চেষ্টা।

লক্ষীটি তোমার পায়ে পড়ি ওরা আমাদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি কেড়ে নিলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো বলো। সেকেন্ড হোম হাতছাড়া হয়ে গেলে তখন কী হবে। এখানে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেবে; তুমি ওখানে ধরা পড়া মাত্র।

এমেরিকানরা এরকমই; হাসতে হাসতে; গলা টিপে মারে। প্রতিদিন রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি। বাসার দরজায় কলিং বেল বাজলেই মনে হয় বুঝি এফবি আই এসেছে।

একী করলে গো। এরকম সোনার শেকল চাইনি আমি। আমার অভাবের সংসারের সুখস্মৃতিগুলো কী আর কেউ ফিরিয়ে দেবে। যেদিন গেছে; সেদিন কী আছে রাতের তারার মাঝে!

প্রত্যেকদিন একচল্লিশ বার কুলহু সুরা পড়ে তারপর ঘুমাবে টগু। ছাঁইপাশ স্পর্শ কোরো না। দস্যু নিজাম যদি আউলিয়া হতে পারে তুমি কেন পারবে না!

তুমি চেষ্টা করো প্ল্যান বি ঠিক করে রাখতে। তুরস্কে একটা থার্ড হোম কেনা যায় কিনা! আমি টাকা এখান থেকে পাঠাবো।

আল্লাহ যদি মুখ ফিরে চান; যদি ক্ষমতাটা টিকে যায়; তাহলে তো হাজার শোকর। আর যদি দেখো; ক্ষমতার লঞ্চ তোমায় ছেড়ে যাচ্ছে; পঞ্চটা পরে অন্ততঃ তুরস্কে চলে যেও। ওখানে নাহয় টুপি সেলাই করে বেচবে; আমি রুটি বেলে নিয়ে গিয়ে গরম গরম রুটি বেচবো ইস্তাম্বুলের পথে পথে।

আমি রুখসানা; হারতে জানি না টগু। আব্বা আমার দারোগা ছিলেন। আমি শক্ত ধাতুতে গড়া। ভাঙ্গবো কিন্তু মচকাবো না।

মাঝে মাঝে ভিডিও কল দিও। অভিলাষী মন চন্দ্রে না পাক; জ্যোতস্নায় পাক সামান্য ঠাঁই।

ইতি

তোমার ভালোবাসার রুখ রুখ রুখসানা

লাইলাতুল ইলেকশনের বেগম

৩২১ পঠিত ... ১২:৩৩, মে ২৯, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top