ফেসবুকারদের প্রতিক্রিয়ার টাইমলাইন অনুসারে নেপাল ট্র্যাজেডির একটি পোস্ট মর্টেম

১০১৩ পঠিত ... ২২:১৮, মার্চ ১৫, ২০১৮

নেপাল দুর্ঘটনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ফেসবুকে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশের গণমানুষের প্রতিক্রিয়া ও আলোচ্য বিষয়গুলো চলুন একটু খেয়াল করা যাক-

১# প্রথমেই আমরা খবর পেলাম দুর্ঘটনার। আমরা উড়ো নিউজ গুলো শেয়ার দিতে থাকলাম। কেউ বেঁচে আছেন, কেউ বেঁচে নেই, কেউ সুস্থ আছেন তা ডিক্লেয়ার করতে লাগলাম খোদ বাংলাদেশে বসে

২# তারপর আমরা বিমান কেন দুর্ঘটনায় পড়লো তা নিয়ে বসলাম। আমি লজ্জিত, আমি নিজেও একজনের একটা পোষ্ট বিশ্বাস করে শেয়ার করেছিলাম।

৩# আমরা আমাদের ন্যাশনাল জিওগ্রাফি এবং ডিসকাভারি চ্যানেলে দেখা ডকুমেন্টারি দিয়ে পুরো ব্যাপারটার কারণ খুজতে বসলাম।

৪# চিরাচরিত নিয়ম, আমাদের একজনের বিশ্লেষণ আরেক জনের সাথে মিললো না, আমরা তর্ক, যুক্তি এবং অবশেষে গালাগালি শুরু করলাম।

৫#  বিমানের পাইলট, বিমানবালা নারীর ছবি ফেসবুকে আসলো। আসলো বিভিন্ন ভিক্টিমদের ছবি। আমরা শুরু করলাম, মেয়ে মানুষ, প্লেন চালাইতে গিয়ে ক্রাশ করছে কথাটা দিয়ে। তারপর শুরু করলাম তাদের চরিত্র হরণ। তারা ভালো মেয়ে না, নিহতরা কেন যাবে হানিমুনে, তারা মরছে ভালো হইছে ইত্যাদি। আর সেক্স রিলেটেড পারভারটেড কথা আর নাই তুললাম, আর নাই বা অপমান করলাম মৃত ব্যক্তিদের।

৬# ঐ দিকে ধ্বংসাবশেষ এর ছবি গুলা আসল না ফটোশপড তা নিয়ে বিশ্লেষণে বসলাম একদল। তর্ক, যুক্তি, অবশেষে গালাগালি।

৭# কেউ পাইলটকে দোষ দিলাম। কেঊ নেপাল এয়ার ট্রাফিকারকে। ০২ আর ২০ এর মর্ম বুঝার ট্রাই করতে থাকলো অনেকেই। কেউ পারলো, কেউ পারলো না।

৮# কেউ কেউ তাদের জন্য শোক, তাদের জন্য কালো প্রোফাইল পিকচারকে বাড়াবাড়ি বলে ঘোষণা দিলেন। অমুক সময়ে অমুক দুর্ঘটনায় আমি বা আপনি সঠিক ভাবে শোক প্রকাশ করিনি, তাই এই শোক আমাদের সহীহ না। তাদের পন্থায় শোক প্রকাশ না করায় তারা বেজার হলেন।

৯# এর মাঝে মিরপুরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড হলো। অনেক ফেসবুকার কেন জানি বলা শুরু করলো, মিরপুরের সবাই গরিব, তাই তাদের নিয়ে আমরা পোষ্ট দেই না। নেপালের সবাই কোটিপতি, তাই তাদের নিয়ে পোস্ট দেই।

১০#  এয়ার হোস্টেস, পাইলট, ক্রু, নবদম্পতি যাত্রী সবাইকে এক চোট গালাগাল করে সবাই প্রচন্ড শোক প্রকাশ করলাম। ভাগ্য ভালো তাদের ভেতর কোন ভিন্ন ধর্মের নেই। তাহলে এটা নির্ঘাত ভারতের চাল বলে চালানো যেত।

নেপালের সরকার পৃথিলাকে বলেছে, বীর বাংলাদেশী কন্যা, ডটার অফ বাংলাদেশ, যে নিজের আগে বাঁচিয়েছে ১০ জনের জীবন। কি স্বীকৃতি দিলাম তাকে? প্রচণ্ড নোংরামির মধ্যে তাকে জড়ালাম।
পোষ্ট মরটেম শেষ। ভারডিক্ট, আমাদের শোকার্ত হবার সময় আসেনি এখনো। কারন নিম্ন শ্রেণীর পশুরা তেমন শোকার্ত হয় না। আমাদের আগে মানুষ হতে হবে। তারপর আমাদের মনে প্রকৃত দুঃখ জাগবে। নেপাল দুর্ঘটনা শুধু আমাদের মুখোশ খসে পড়ার একটা উদাহরণ।

১০১৩ পঠিত ... ২২:১৮, মার্চ ১৫, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top