সফল মিডিয়া হতে যা করতে হবে

৪২ পঠিত ... ১১ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে

মিডিয়া ও মিডিয়া কর্মী হিসেবে সফল হতে গেলে প্রথমেই আপনার ইতিহাস জ্ঞান পরিষ্কার হতে হবে। ১৯৪৭ সালে বৃটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতাকে ‘দেশ বিভাগের যন্ত্রণা’ হিসেবে বুঝতে শিখতে হবে আপনাকে। এরপর ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এই লক্ষ্মণরেখার মাঝে আটকে ফেলতে হবে ইতিহাস চর্চা। কেউ যদি জোর করে ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গের আলোচনাটা তোলে; অমনি বাঙ্গালির হৃদয় বিদীর্ণ করা বঙ্গভঙ্গ বলে ডুকরে কেঁদে উঠতে হবে। ৫২ থেকে ৭১-এর বাইরে বাংলাদেশের জমিদারি আমল নিয়ে কেউ আলোচনা করলে তার দিকে বাঁকা চোখে তাকাবেন। অস্ফুট স্বরে বলবেন ও আমাদের লোক নয়।

মিডিয়া হাউজের সংস্কৃতি নির্ধারণের জন্য নব্বই-এর দশকে সানন্দা পত্রিকার কেমন সাজবেন, কেন সাজবেন, ফ্যাশন নির্দেশনা দেখে সাজতে শেখা অমুকদিকে ও তমুকদিকে ফিচার শাখার দায়িত্ব দেবেন। তারা টাইম মেশিনে করে আপনাকে নিয়ে যাবেন ঊনবিংশ শতকের জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে। এইভাবে প্রগতিশীল মিডিয়ার পোস্টার বয় ও পোস্টার গার্ল তৈরির ফ্যাক্টরি তৈরি হবে। অন্য মিডিয়া হাউজ থেকে আপনার হাউজটি অভিজাত হয়ে পড়বে রাতারাতি।

যেহেতু এককালে জমিদারের ছেলেরা সাম্যবাদী হয়ে পড়েছিল; তারা ধুলোপথে মিছিল করে পার্টি অফিসে এলেও তাদের ক্ষীণ স্বাস্থ্য অথচ ঝাঁ চকচকে দেখাত; কাজেই একালে দেখতে ওরকম সামান্যে পরিপাটি সাম্যবাদী ভদ্রলোকদের দিয়ে সাজাতে হবে উপসম্পাদকীয় বিভাগ। তারা প্রগতিশীলতা ও বিশুদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতির চারুপাঠ দিয়ে আপনার পত্রিকাকে বেঙ্গল রেনেসাঁর জ্বলন্ত মশাল করে তুলবেন।

মিডিয়া হাউজেই সাংস্কৃতিক কলাকৈবল্য আটকে রাখলে চলবে না। অমুকদি ও তমুকদি'র বাসায় অষ্টপদের শাকপাতার দাওয়াতে নকশী সানকিতে পান্তা খেতে হবে। এরপর শুরু হবে সাংস্কৃতিক বিকেল। আবৃত্তি ও গান। প্রজন্ম ব্যবধান ঘোঁচাতে কিছু তরুণ-তরুণী সেখানে গিটার বাজিয়ে লালন ও শাহ আব্দুল করিমের গান গাইবে। মনে রাখতে হবে এসব দাওয়াত আনন্দের জন্য নয়; দুঃখ জাগানিয়া। এই যে চোখের সামনে সমাজটা দেশটা উচ্ছন্নে গেল; বিশুদ্ধ সংস্কৃতির চর্চা হারিয়ে গেল তা নিয়ে পাটের সোনালী আঁশের মতো লম্বা সাদা চুলওয়ালা বুদ্ধিজীবীর উপস্থিতি থাকতে হবে সেখানে; যেখানে উনি টিপে টিপে মন্দের ভালো আওয়ামী লীগ বাক্যটাকে বিভিন্নরকম এলেগরির আড়ালে বলবেন। আমাদের লোক ও আমাদের লোক নয়; সমাজের এই কাস্ট বিভাজনটাকে নন্দনতত্ত্ব দিয়ে বোঝাবেন।

মনে রাখতে হবে, বেঙ্গল রেনেসাঁ চর্চায় আনন্দবাজার পত্রিকাকে পেছনে ফেলতে হবে আপনাকে। কারণ কলকাতার নতুন প্রজন্ম এসব ভড়ং পিছে ফেলে ওয়েস্টার্ন আউটফিটে জীবনমুখী গান গেয়ে বেড়াচ্ছে। তাই বেঙ্গল রেনেসাঁর মরণমুখী গানগুলো; আর পরচুলোগুলো পরে বিশুদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব কেবল আপনার মিডিয়া হাউজের।

আপনার মিডিয়ার সাহিত্য পাতাটা ব্যবহৃত হতে হবে সচিবালয়ের মতো; সেখানে কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ ছাপতে গেলে লেখককে ফিচার শাখার অমুক দিদি ও তমুক দিদির কাছ থেকে বিশুদ্ধ বাঙালির সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে। লেখকের জীবন চর্যায়, ফেসবুক ভাষণে প্রমাণ করতে হবে, আপনি আমাদের লোক।

আপনার মিডিয়াকে এনজিও-র মতো নানান ছুঁতো ধরে স্কুল-কলেজে যেতে হবে; সেখানে ডিরোজিও-র আলো বিতরণ করে; আমাদের লোক তৈরি করতে হবে। এইভাবে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকোগুলোকে মাছ ধরার ট্রলারের সঙ্গে বেঁধে বুবুর নৌকা মিছিলের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।

শুধু নিজের মিডিয়া তৈরি করলেই চলে না; বেঙ্গল রেনেসাঁ কোহর্টের ইনফরমেশন হিট ম্যান ও ওম্যান দিয়ে প্রতিশ্রুতিশীল নতুন মিডিয়ার দফার রফা ফিশরোল করে দিতে হবে। ফেসবুকে এই কো-হর্টের কায়দা করে লেখা গোবর চরিতকে লাভ-লাইক দিয়ে ভরিয়ে তুলবে আমাদের লোক সিপি গ্যাং। আলো আসবেই ও আপা আসবেই শিল্পী গোষ্ঠী এই অর্কেস্ট্রার কোরাসে অংশ নেবে।

আগেই ভালো ছিলাম সিরিজে নিয়মিত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসুচি চালু করার ও নির্বাচনে অংশ নেবার পরিবেশ সৃষ্টি করে অবশেষে দু'চারটে মানবাধিকার সংস্থা থেকে এর পক্ষে কয়েকলাইনের গান পাওয়া গেলে; সেটাকেই শিরোনাম করে প্রথম পাতা ভরিয়ে তুলতে হবে।

একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় আপনার মিডিয়াই হবে গৃহপালিত বিরোধী দল। কুসুম কুসুম বকা দিয়ে সরকার বনাম আপনার মিডিয়া রেসলিং করে গণতন্ত্রের ডিমের কুসুম পরিবেশন করতে হবে পাঠককে। আপনার এরকম চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে উৎপাত যারা; তাদের ধরে ধরে শায়েস্তা করতে কালচারাল কো-হর্টকে লাগিয়ে দিতে হবে তাদের দিকে গোবর ছোঁড়ার কাজে।

আসলে সম্পাদক হওয়া আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া একইরকম দায়িত্ব। একই রকম স্বৈরাচারের আংরাখায়  গণভবনের প্রশ্ন নয় প্রশংসা করতে এসেছির আসর বসাতে হবে আপনার মিডিয়ার বোর্ড রুমে। 

২০২৪ সালের ৫ অগাস্টে জেন জিরা এই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তকে ওলট পালট করে দিয়েছে। আপনার এতো সাধের কালচারাল কো-হর্ট সবই  প্রায় চল্লিশোর্ধ।  অল্প কিছু নেপো বেবি ছাড়া আর কেউই ফিরে চায় না আপনার ও আপনার সোনাবুবুর জমিদারি ব্যবস্থা। ফলে কালচারাল কো-হর্ট জুড়ে ফুরিয়ে যাবার বেদনা। জায়গা হারানোর কষ্ট। বইমেলায়, চারুকলা টু দোয়েল চত্বর বেঙ্গল রেনেসাঁ প্যারেডে তারুণ্য আর নেই। আছে ডেড পোয়েটস সোসাইটি আর বুবুর পুরাতন ভৃত্য। সুতরাং পথের বাধা সরিয়ে দাও; ঘন হইয়া আইসো; বদলে দাও উলটে দাও; ফিরিয়ে দাও ঘাতক কাঁটা।

৪২ পঠিত ... ১১ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top