ফ্যামিলি মানলেও আপনার টেইলার মামা যেসব বিষয় মানবে না

১৩ পঠিত ... ৫ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে

ঈদ, পূজা বা বিয়ের মৌসুম—যেকোনো উৎসবের আগেই আমাদের নতুন জামা বানানোর ধুম পড়ে যায়। ইন্টারনেট ঘেঁটে, ইনস্টাগ্রাম-পিন্টারেস্ট দেখে চোখ ধাঁধানো সব ডিজাইন পছন্দ করাও শেষ। ফ্যামিলিকেও হয়তো অনেক কষ্টে-সৃষ্টে একটা 'রিস্কি' ডিজাইনের জন্য রাজি করিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু আসল যুদ্ধটা তো এখনও বাকি! 

জি, ঠিকই ধরেছেন। সেই আসল বাধা হলেন আপনার পাড়ার 'টেইলার মামা'। তিনি শুধু আপনার জামাই সেলাই করেন না, সাথে তিনি যেন সমাজের 'শালীনতা' রক্ষার স্বঘোষিত দায়িত্বও নিয়ে বসে আছেন। আপনার ফ্যামিলি আপনার ১২ ইঞ্চি গলার ব্লাউজে রাজি হলেও, মামার কাছে সেটা ৬ ইঞ্চিতে এসে ঠেকবেই।

চলুন দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু চিরচেনা বিষয়, যেগুলো আপনার পরিবার বা বন্ধুরা মেনে নিলেও, আপনার টেইলার মামা কিছুতেই মানতে চাইবেন না।

১. ব্লাউজ বা জামার গলা কোনোভাবেই ৮ ইঞ্চির বেশি মানবে না টেইলার মামা। ফ্যামিলিকে হয়তো মানিয়ে ফেলতে পারবেন। কিন্তু টেইলার মামাকে মানানো! উহু, বলতে গেলে অসম্ভব! আপনি ১২ ইঞ্চি বা ১০ ইঞ্চি বানাতে বলতেই পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত মামাই নিবে। এবং আপনার জামার গলা হয়ে যাবে ৬-৮ ইঞ্চি।

২. স্লীভলেস পরতে হলে তাকে কনভিন্স করাটা হবে আপনার একটা বিশেষ স্কিল। আপনি হয়তো ভাবছেন একটা স্লীভলেস কুর্তি বা গাউন বানাবেন। ফ্যামিলিও হয়তো রাজি। কিন্তু মামার কাছে কাপড় নিয়ে যেতেই ওনার ভুরু কুঁচকে যাবে। প্রথম প্রশ্নটাই হবে মামা, হাতা ছাড়া? এরপর শুরু হবে পরামর্শের বৃষ্টি। ‘একটা কাজ করি, ছোট হাতা লাগিয়ে দেই, ভালো লাগবে।’ অথবা, ‘সিকুইনের একটা ফুল হাতা দেন, আজকাল খুব চলছে।’ আপনি যতই 'না' বলুন, তিনি বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে এটা ভালো দেখায় না বা বড়রা দেখলে কী বলবে! শেষ পর্যন্ত যদি তিনি বানাতে রাজিও হন, তবে সেটা হবে আপনার জীবনের অন্যতম সেরা কূটনৈতিক সাফল্য। 

৩. ব্যাকলেস ড্রেস বানাতে হলে রীতিমতো মূলামুলি করতে হবে মামার সাথে। ব্লাউজের পিঠটা একটু বেশি কাটা পড়লে ফ্যামিলির বড়রা হয়তো কিছু বলবেন না। কিন্তু টেইলার মামা? তিনি তো এটাকে সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে দেখবেন। আপনি বলবেন ‘ডিপ ইউ’ হবে, আর তিনি বানিয়ে রাখবেন ‘বোট নেক’। ব্যাকলেস বানানোর আবদার শুনলে তিনি এমনভাবে তাকাবেন যেন আপনি কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন। এরপর শুরু হবে দর কষাকষি। মামা, আর একটু কাটেন। না আপা, এর বেশি কাটা ঠিক না, খারাপ দেখাবে। এই 'খারাপ দেখাবে' ঠেলে আপনি যদি আপনার পছন্দের ডিজাইনটা বের করে আনতে পারেন, তবে আপনিই আসল বিজয়ী।

৪. শর্ট কামিজ বানাতে গেলেও লেস দিয়ে একটু বড় করে দেই বললে আপনাকেই মাপটা ঠিক রাখতে হবে। আজ-কালকার ট্রেন্ড মেনে আপনি হয়তো একটা শর্ট কুর্তি বা কামিজ বানাতে চাইলেন, যা হাঁটু বা তার ওপরে থাকবে। মামার কাছে মাপ দিলেন। তিনি ফিতা ধরেই বলবেন, আপা, বড্ড ছোট হয়ে যায়। আরেকটু লম্বা করি? আপনি 'না' বললেও তার মন মানবে না। ডেলিভারির সময় দেখবেন, হয় তিনি নিজের ইচ্ছেনুযায়ী ২ ইঞ্চি বাড়িয়ে দিয়েছেন, অথবা নিচে একটা অপ্রয়োজনীয় লেস বা পাইপিং বসিয়ে দিয়েছেন—শুধুমাত্র জামাটা একটু লম্বা করার জন্য। তাই মাপ দেওয়ার সময় এবং কাটার সময় কড়া নজরে রাখা জরুরি, নইলে আপনার শর্ট কামিজ হয়ে যাবে 'মিডিয়াম' কামিজ। 

৫. ড্রেস কোনোভাবেই ট্রান্সপারেন্ট পরবেন না, নিচে ইনার পরবেন সেটাও তাকে প্রমিজ করতে হবে। আপনি হয়তো জর্জেট, শিফন বা নেটের কোনো সুন্দর কাপড় কিনলেন। কিন্তু টেইলার মামার কাছে গেলেই প্রথম প্রশ্ন, এটার ইনার (লাইনিং) কই? আপনি যদি বলেন যে ইনার ছাড়াই বানাতে চান বা স্লিভসে ইনার দেবেন না, মামার চোখ কপালে উঠবে। বলেন কী আপা! এই কাপড় ইনার ছাড়া পরা যায় নাকি! সব দেখা যাবে তো! তিনি কিছুতেই এই 'অসামাজিক' কাজ করতে রাজি হবেন না। হয় আপনাকে তৎক্ষণাৎ ইনার কিনে আনতে হবে, অথবা তার কাছে কসম কাটতে হবে যে আপনি এই ড্রেসের নিচে অবশ্যই কিছু একটা পরবেন। নইলে তিনি এই রিস্কি জামা সেলাই-ই করবেন না।

৬. মামার সেলাই করা জামা সবসময় ঢোলা হবে আপনি যেই মাপ দেন না কেন, আপনাকে একটু ঢিলেঢালা জামাই গায়ে চড়াতে হবে। আপনি হয়তো ফিটিং ড্রেস পছন্দ করেন। একদম পারফেক্ট 'বডি ফিটিং' মাপটাও মামাকে দিলেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ডেলিভারির দিন আপনি একটা সারপ্রাইজ পাবেন। জামাটা গায়ে দিয়ে দেখবেন, কোথাও না কোথাও 'একটু লুজ' রয়ে গেছে। মামাকে কমপ্লেইন করলে তিনি বলবেন, ‘একদম গায়ের সাথে লাগিয়ে দিলে তো বসতে পারবেন না আপা!’ অথবা, ‘একটু ঢিলা না হলে কি আরাম হয়?’ আসলে মামার কাছে 'বেশি ফিটিং' মানেই হলো 'অশালীন'। তাই তিনি সামাজিকতার খাতিরে সবসময় মূল মাপের চেয়ে আধা ইঞ্চি বা এক ইঞ্চি কাপড় বাড়তি রেখেই সেলাই করেন। ফিটিং জামা চাইলে আপনাকে অল্টারেশনের জন্য দ্বিতীয়বার (বা তৃতীয়বার) যেতেই হবে।

১৩ পঠিত ... ৫ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে

আরও

 

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top