বীন্দ্রনাথ কেন লিখিলে

১০৩ পঠিত ... ১৭:৩২, মে ০৮, ২০২৫

সমকালের সম্পাদককে শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে ডেকে পাঠান কবিগুরু। সম্পাদক একটু বুদ্ধি করে লুচি-বুন্দিয়া আর দই নিয়ে দেখা করতে যান। সেটা পেয়ে কবি একটু মুচকি হেসে বলেন, চলো গরম গরম লুচি খেয়ে নেয়া যাক।

খেতে খেতে কবিগুরু বলেন, কী ব্যাপার বীন্দ্রনাথ কেন লিখিলে?

: কবিগুরু দেশের পরিস্থিতি তো সবই জানেন আপনি; ফ্যাসিজমের পনেরো বছর দেশটাতে 'র' এসে কিভাবে চষে খেয়েছে তা তো আপনি জানেন। হাসিনার পতনে তারা পাততাড়ি গুটিয়ে পালানোর পরেও ফেসবুকে পলাতক হাসিনা দোসরেরা 'র'-এর এসেট হিসেবে একশো একটি প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। ফলে আজকাল কম্পিউটারের কি বোর্ডে 'র' অক্ষরে চাপ দিতে ভয় লাগে।

: তোমাদের র অক্ষর লিখতে ভয় লাগে বলে আমি তো এই বয়সে নিজের নাম এফবিআইন্দ্রনাথ রাখতে পারি না।

: সে তো অবশ্যই গুরুদেব।

: ভারতের অভ্যন্তরে 'র' সবসময় আমার বিপক্ষে কাজ করে; আর বাংলাদেশে এসে সেই 'র' আমার ভক্ত হয়ে পড়ে; বড্ড মুশকিলে পড়া গেলো!

: বাংলাদেশে ওরা রবীন্দ্র জাতীয়তাবাদ গড়ে তুলেছে!

: তাই নাকি! তুমি কি জানো, জাতীয়তাবাদ হচ্ছে ফ্রড ও ফ্রয়েডের কারবার। ইতিহাসে যে লোকই উগ্র জাতীয়তাবাদী হয়েছে; সেই-ই ভ্যাগাবণ্ড থেকে জমিদার হয়েছে।

: আমরা ৫৪ বছর ধরে সেটাই দেখলাম গুরু। বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের হুজুগ তুলে যারাই উগ্র শিং ঘষেছে; তারাই ছাপড়ি থেকে রুলিং এলিট হয়েছে।

: ঐ যে ঘরে বাইরে উপন্যাসের সন্দীপের কথা মনে নেই; যে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে চাঁদা তুলিয়ে নিজে স্বাস্থ্যবান হয়েছিলো। এমনকি দেশপ্রেমিকের অভিনয় করে জমিদার বধু বিমলার মন জয় করে; তার গয়নার বাক্সটি ছলে বলে হাতিয়ে নিয়েছিলো। ঐটেই হলো জাতীয়তাবাদীদের চরিত্র।

: বাংলাদেশে সন্দ্বীপ গিজ গিজ করছে কবি।

: সেই তো দেখি; ফেসবুকে চোখ মেলে দেখি রীতমতো সন্দ্বীপপুঞ্জ আর বিমলা রাশি রাশি।

: কী করে চেনেন সন্দ্বীপপুঞ্জকে?

: ঐ যে দেখবে চুল লম্বা মুখমন্ডলে দাড়ি; অথবা ক্লিন শেভড হলেও মাথায় পতাকা বাঁধা; অথবা এমন অভিমানী ভঙ্গিতে প্রোপিক যেন আমরা সবাই পাপিষ্ঠ, কেন ওর মত দেশপ্রেম নেই আমাদের হৃদয়ে।

:  কি করে চেনেন বিমলাকে!

: ওমা একবিংশ শতকে ঊনবিংশ শতকের কাদম্বরী সেজে থাকে যারা; ঘাড়খানা কাত করে ছবি তোলে। সারাক্ষণ রবীন্দ্র সংগীত আর সৃজিতের চলচ্চিত্র কিংবা অঞ্জন দত্তের গান নিয়ে আহাউহু; অথচ এই যে বাংলাদেশে গত বছর বর্ষা বিপ্লবে এতো কিশোর-তরুণ জীবন দিলো; তা নিয়ে কোন অনুশোচনা নেই। রোদ ঝড় বৃষ্টিতে ওর হাসিনাকে চাই।

 

কবিগুরু বাগানে হাঁটতে যান। সম্পাদককে বলেন, 'র'-এর রুচি বড্ড স্থূল বুঝলে; নইলে দেখো সৌন্দর্য্য বর্ধনের নামে আমার কুঠিবাড়িটাকে কেমন ধনাঢ্য ঠিকাদারের বাড়ির মতো সাজিয়েছে। শুধু টাকা ঢাললে হয় নাকি, রুচিটিও লাগে।

: আমি ঢাকায় গিয়ে ব্যবস্থা করবো, যাতে একটু রুচিশীল করে আপনার কুঠিবাড়িটাকে সাজানো হয়।

: আর মনে করে আগামীকাল তোমার পত্রিকায় একটা সংশোধনী দিও। বীন্দ্রনাথের স্থলে রবীন্দ্রনাথ হইবে। আর এই 'র' বিজিত দোভালের 'র' নয়কো।

১০৩ পঠিত ... ১৭:৩২, মে ০৮, ২০২৫

আরও

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top