এয়ারপোর্টের ভিআইপি লাউঞ্জ কোটা চাই

১৪৮ পঠিত ... ০১:৩৪, আগস্ট ০৪, ২০২৪

WhatsApp Image 2024-08-03 at 15.19.08_9927e961

বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে ভ্যাকসিন চৌধুরীর মনটা আঁকুপাঁকু করে। ছোট্ট একটা টিনের আটচালা ঘরের জায়গায় গত পনের বছরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছে এই  প্রাসাদ; কত বাহারি টাইলস, ভারী কাঠের নকশী দরজা; কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার বাড়ি দেখে দেখে বানিয়েছিলো। আজ এসব ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে।

ভ্যাকসিন চৌধুরীর মেয়ে সিনথিয়া এসে জিজ্ঞেস করে, ড্যাডি তুমি না সবসময় কইতা খেলা হবে! অহন খেলার মাঠ ছাইড়া দিবা! আমারও তো শখ আছিলো সংরক্ষিত আসন নিমু সংসদে।

: সবই আল্লাহর পরীক্ষারে মা!

ভ্যাকসিন চৌধুরী বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে ফোন করে, হ্যালো মুকুল, আইজকা সইন্ধ্যার ফ্লাইটে হার্নিয়া অপারেশন করাইতে থাইল্যান্ডে যাইতেছি সপরিবারে। সবাই সঙ্গে থাকলে মনে সাহস পাই আর কি!

: স্যার কি আর ফিরবেন নাকি ঐখান থিকা তুরস্কের সেকেন্ড হোমে যাইবেন?

: দূরো পাগল, মেডিক্যাল এমার্জেন্সি; তাই একটু যাইতে হইতেছে।

:  ভিআইপি লাউঞ্জে অনেক ভিড় স্যার। কয়দিন ধইরা ভিআইপি গো হার্নিয়া অপারেশনের এমার্জেন্সি বাড়ছে। সিঙ্গাপুর, দুবাই যে যেইদিকে পারে হার্নিয়া অপারেশন করাইতে যাইতেছে।

: আমার জন্যে একটু জায়গা রাইখো মুকুল। আসতেছি।

মিসেস আম্বিয়া চৌধুরী অশ্রু সজল চোখে স্যুটকেস গোছাচ্ছে। চারিদিকে পান্নালালের বাঁশির করুণ সুর। রাস্তায় মানুষের ঢল। শ্লোগানে প্রকম্পিত চারপাশ, বিচার চাই বিচার চাই; আমার ভাই মরল কেন, খুনি স্বৈরাচার বিচার চাই।

ভ্যাকসিন চৌধুরীর পিএ শিবব্রত এসে কাঁচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, ভাবি আপনি যে চেক পাঠাইছিলেন অত্র এলাকার শহীদ সন্তানের মায়ের কাছে; উনি চেকটা ছুঁইড়া মারছে আমার মুখে। শার্টের কলার ধইরা অনেকক্ষণ ঝাঁকাইছে আমারে! ভাবী আপনার সঙ্গে আর কি দেখা হইবো! অনেক ভুল ত্রুটি করছি; মাফ কইরা দিয়েন গো!

: শিবু, তোমার স্যারের অপারেশন হলেই আমরা চলে আসব। তুমি একটু বাড়ি-ঘর দেখে রেখো। গেটে সবসময় তালা দিয়া রাখবা।

শিবু চোখ মুছতে মুছতে গিয়ে ভ্যাকসিন চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করে, স্যার ও স্যার, খেলা কি শেষ হইয়া গেলো; প্রতিবেশী কি কোন সাহায্য পাঠাবে না! আর কি খেলা হবে!

: এখন এইসব আলোচনার সময় না। আমি আগেরবার কলকাতার যেইখানে থাকতাম, সেইখানে ফোন কইরা দিছি; খুব বিপদ হইলে তুমি সেইখানে চইলা যাইও। আরে ঘাবড়াইও না; আমি যদি নাও ফিরতে পারি, তোমার ভাতিজি আইসা ইলেকশন লড়বে। বিনা যুদ্ধে নাহি দিবো সূচাগ্র মেদিনী! তুমি আবার চইলা আইসো তখন।

: জমিদারের মাইয়া জমিদার হইব ভগবান ঐভাবেই তো নির্ধারণ করেছেন মানুষের ভবিতব্য। আমার খুব ডর লাগে স্যার। ঘুমাইতে পারি না; খালি মিছিলের শব্দ শুনি মাথার মইধ্যে।

বিদায়ের ক্ষণে শিবু পাথর চোখে তাকিয়ে থাকে প্রাডোর দিকে। গুন গুন করে গাইতে থাকে, একদিন ঘুম ভেঙ্গে দেখি, সুখের সমুদ্র শুকিয়ে গেছে।

ভিআইপি লাউঞ্জ লোকে লোকারণ্য। ভ্যাকসিন চৌধুরী বিরক্ত হয়। মুকুলকে জিজ্ঞেস করে, ভিআইপি লাউঞ্জের কি প্রটোকল নাই কোনো! এত ভিআইপি আইলো কোত্থিকা!

: স্যার পনের বছরে ভিআইপির সংখ্যা চক্র বৃদ্ধি হারে বাড়ছে। সবাই আইসা ভিআইপি লাউঞ্জ কোটা চাইতেছে। করি কী?

পরিচিত অনেক নতুন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা হয়। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তারা বলে, ছোট্ট একটা অপারেশন করাতে যাচ্ছি; আবার ফিরে আসব ভাই!

: কী অপারেশন?

: ঐ যে হার্নিয়া!

এসব আলাপ শুনে মুকুল বিড় বিড় করে, ভিআইপিগো দেখতেছি একলগে চিবি কান্ধে উইঠা গেছে।

১৪৮ পঠিত ... ০১:৩৪, আগস্ট ০৪, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top