বোস্টন টি পার্টি থেকে যেভাবে এলো আমেরিকার স্বাধীনতা

৯৩০ পঠিত ... ১৬:০৫, মে ১১, ২০২১

বোস্টন টি পার্টি। এ ঘটনা সম্পর্কে যাদের জানা নেই তাদের মনে হতে পারে এ বুঝি ইতিহাসের কোনো উল্লেখযোগ্য অভিজাত অনুষ্ঠানের নাম। পুরোনো দিনে তো চা ছিল অভিজাত পানীয়- তাই টি পার্টি যে সত্যিই কোনো পার্টি হতে পারে তা ভাবাটা অমূলক নয়। তবে এ পার্টি সে পার্টি নয়, এটি হল টি পার্টি আন্দোলন। 

boston

সেকালে ব্রিটিশ রাজ সরকার নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে এবং সকলকে নিজেদের অধীনে রাখতে কথায় কথায় ছোটখাটো, দুর্বল দেশগুলোর সাথে যুদ্ধ লাগিয়ে দিত। কিন্তু যুদ্ধ তো আর এমনি এমনি হয় না, তার জন্য দরকার হয় অর্থের। আর যুদ্ধের সে খরচ যোগাতে তারা পৃথিবীর সর্বত্র থেকে ঋণ করে বসে ছিল। যুদ্ধশেষে যখন দেখল ঋণের বোঝায় দেশ বেঁকে যাওয়ার অবস্থা, তখন তারা ১৭৬৭ সালে উপনিবেশগুলো থেকে আসা বিভিন্ন দ্রব্য যেমন- চা, কাচ, রঙ, শিশার ওপর কর আরোপ করে দেয়। 

অন্যদিকে ১৭৭০ সালের ৫ মার্চ বোস্টনের রাজস্ব বিভাগের সামনে কর আদায়ের এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমেরিকানদের সাথে ব্রিটিশ সৈনিকদের কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। এসময় ব্রিটিশ সৈনিকদের গুলিতে প্রায় ৫ জন আমেরিকান ব্যবসায়ী নিহত হয়, আহত হয় ৬ জন। এই ঘটনাকে বোস্টন গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করা হয়। এর ফলে দ্রুত ব্যবসায়ীদের মাঝে ব্রিটিশবিরোধী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

boston tea party (3)

এ ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকার চা ছাড়া অন্য দ্রব্যের ওপর থেকে কর উঠিয়ে দেয়। তখন আমেরিকাতে বার্ষিক প্রায় ১২ লক্ষেরও বেশি মানুষ চা পান করতো। ব্রিটিশরা এই বিশাল অংকের বাজার এবং কর হাতছাড়া করতে চায়নি। অন্যদিকে চা ব্যবসায়ীরা কর দেয়ার সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ ছিল। ১৭৭৩ সালের ১০ মে ব্রিটিশ সরকার চা-আইন নামে একটি আইন পাশ করে যা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বিশ্বব্যাপী শুল্কমুক্ত চা বাণিজ্য করার অধিকার দেয়। কিন্তু তাদের থেকে চা কেনার সময় আমেরিকানসহ নানা উপনিবেশের ব্যবসায়ীদের ঠিকই কর দিতে হত। মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ঋণ কমাতেই এ ব্যবস্থা করে সরকার। ফলে প্রতিবাদস্বরূপ আমেরিকান চা ব্যবসায়ীরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বর্জন করে এবং ডাচ কোম্পানি থেকে অবৈধভাবে চা পাচার শুরু করে। 

কিন্তু বর্জন করার পরেও কর আদায় করতে চা বোঝাই করা ব্রিটিশ জাহাজ নিয়মিত বোস্টন, নিউইয়র্ক ও ফিলাডেলফিয়া বন্দরে ভিড়তে থাকে। পুরো ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ হয় আমেরিকার চা ব্যবসায়ীরা ১৭৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর 'সন্স অফ লিবার্টি' দলের কিছু সদস্য বোস্টন বন্দরে নোঙর ফেলা চা বোঝাই করা ৩টি ব্রিটিশ জাহাজে উঠে প্রায় ৯২,০০০ পাউন্ড ওজনের চায়ের বস্তা নদীতে ফেলে দেয়। পুরো বোস্টন বন্দরের জল ছেয়ে যায় চা-পাতার গন্ধে। যেন বোস্টন বন্দরের পানিকে আগুনে উৎরে নিলেই তা চা হিসেবে পরিবেশন করা যাবে। 

boston tea party (2)

পৃথিবীর ইতিহাসে এই ঘটনাকেই বলা হয় বোস্টন টি পার্টি। ব্রিটিশদের অন্যায্য আইনের প্রতিবাদে আমেরিকানরা এই টি পার্টি আন্দোলন করে। এই আন্দোলনের পর আমেরিকানদের দমিয়ে রাখতে রাজা তৃতীয় চায়ের ক্ষতিপূরণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত জর্জ বোস্টন বন্দর বন্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু তারা ১৭৭৪ সালে আবার প্রতিবাদ শুরু করে এবং দ্বিতীয়বার টি পার্টি আন্দোলন শুরু করে। বোস্টন বন্দরের আন্দোলনের জোয়ার নিউইয়র্কেও পৌঁছায়। 

ব্রিটিশরা আমেরিকানদের এ বিপ্লবের তোয়াক্কা করেনি। বরং তাদের দাবি না মেনে বারবার দমন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমেরিকানরা ব্রিটিশদের এ নিষ্ঠুরতা আর নির্লিপ্ততায় বুঝতে পারে, ব্রিটিশদের অধীনে থাকা আর সম্ভব নয়। 

বোস্টনের এই সাধারণ 'টি পার্টি আন্দোলন' থেকে তা পরিণত হত স্বাধীনতার যুদ্ধে। সে আন্দোলনের অনুধাবন চায়ের লিকারের মত ছড়িয়েছিল সকল আমেরিকানদের মধ্যে। আর এভাবেই জন্ম নেয় স্বাধীন দেশ 'যুক্তরাষ্ট্র'। 

৯৩০ পঠিত ... ১৬:০৫, মে ১১, ২০২১

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top