বিএনপির নেতা-কর্মীকে জিয়ার আইকনিক রুচির হতে হবে

২৮১ পঠিত ... ১৬:০০, মে ৩১, ২০২৫

18 (21)

বগুড়ার ছেলে  জিয়াউর রহমান কলকাতার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়েছিলেন। এরপর পড়েছেন করাচিতে, সেও ইংলিশ মিডিয়ামে। এরপর সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে মেধাবী ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে তার সাহসিকতা সম্মানসূচক পুরস্কার এনে দেয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বিদ্রোহ করে তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। ঐ মুহূর্তে একজন বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তার কণ্ঠস্বর মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণকে আস্থা জুগিয়েছিল। তিনি ঐ বেতারকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর হামলার মুখে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মীদের ও ট্রান্সমিশন যন্ত্র রামগড় হয়ে আগরতলা পৌঁছে দেন। নিজে ফিরে যান রণাঙ্গণে।

সেক্টর কমান্ডার হিসেবে তার বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বিশেষত ভারতীয় সেনা কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন ও আত্মজৈবনিকে খুঁজে পাওয়া যায়।

সিনিয়রিটি ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বাধীন বাংলাদেশে তারই সেনাপ্রধান হবার কথা। কিন্তু আওয়ামীলীগ মানেই যোগ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে কানকথা; অযোগ্য ব্যক্তিকে দলীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে নিয়োগ।

বঙ্গবন্ধু জিয়াকে ক্যাডেট কলেজগুলোর শিক্ষা সংস্কারের দায়িত্ব দেন। নতুন প্রজন্মের সামরিক কর্মকর্তা ও পেশাদার নাগরিক সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে ক্যাডেট কলেজ গুরুত্বপূর্ণ। জিয়া যোগ্যতা অনুযায়ী সেনাপ্রধানের দায়িত্ব না পেলেও  ডেপুটি পদে থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ তার যোগ্যতাকে ভয় পেয়ে কান কথার ভিত্তিতে তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে জার্মানিতে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করে। সেটা সফল হয়নি। জিয়া পেশাদার সৈনিক, শিক্ষা ও সংস্কৃতি অনুরাগী হিসেবে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের মাঝে জনপ্রিয় ছিলেন। ফলে  বাংলাদেশের এক সংকটজনক মুহূর্তে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন।

২০২৪-এর ৫ অগাস্টের জনবিপ্লবের পর অধ্যাপক ইউনুস ছাত্র-জনতার অনুরোধে যেমন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়া তেমনি সিপাহি-জনতার অনুরোধে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিতে বাধ্য হন। এই কাকতালীয় ঘটনা দেখে মনে হয়েছে, আওয়ামীলীগ যাকে যোগ্যতার কারণে ভয় পেয়ে তার সঙ্গে অন্যায় করে; নিয়তি তাকে পুরস্কার দেয়।

জিয়াউর রহমানের মা একজন সংগীত শিল্পী ছিলেন, করাচি বেতারে  গানের লাইভ শোতে জিয়া তার মা'র সঙ্গে যেতেন। বইপড়া আর চলচ্চিত্র দেখা তার প্রিয় শখ ছিল। থাকতেন খ্রিস্টান ও পারসি বসতির এক শান্ত এলাকায়। চার্চের উল্টোদিকেই ছিলো তাদের বাসা। জিয়া দিলীপ কুমারের চলচ্চিত্রের ভক্ত ছিলেন। সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার আগে তার শখ ছিলো চলচ্চিত্র অভিনেতা হবার। আয়নার সামনে বসে অভিব্যক্তি অনুশীলনের কিছু মজার স্মৃতিকথা খুঁজে পাওয়া যায় তার আত্মীয়দের বর্ণনায়।

সেনা কর্মকর্তা ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে টেলিভিশনে তার যে উপস্থিতি সেখানে সহজাত স্মার্টনেস ও স্টাইল চোখে পড়ে। তিনি বাংলাদেশের শিশুদের মাঝে সংস্কৃতি চর্চা ছড়িয়ে দিতে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা ও টিভিতে নতুন কুঁড়ি প্রচলন করেন। বাংলাদেশে যে ঢাকা কেন্দ্রিক সংস্কৃতি চর্চা আর তারার অহংকারের ফাঁপা প্রদর্শনবাদিতা; সেই মনোপলি ভেঙ্গে দিতে জিয়ার এই সাংস্কৃতিক উদ্যোগ বেশ কাজে দেয়। একজন শিশু বিতার্কিক হিসেবে উনার কাছ থেকে তিনবার জাতীয় পুরস্কার নেয়া ও বঙ্গভবনে বেশ কিছুটা সময় কাটানোতে উনার স্নেহ ও সান্নিধ্য পেয়েছিলাম। দ্বিতীয়বার পুরস্কার নেবার সময় রাজশাহীর মন্ত্রী এমরান আলী সরকার উনাকে আমাদের আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা বলেন। জিয়া তখন বলেন, আপনার নাতি প্রত্যেকবার বিতর্ক আর বক্তৃতার পুরস্কারগুলো সব নিয়ে যায়। এ থেকে বোঝা যায় শিশুদের ব্যাপারে বেশ মনোযোগী ছিলেন। কারা দ্বিতীয়বার জাতীয় পুরস্কার পাচ্ছে, সেটা খেয়াল রাখতেন।

বিএনপির মন্ত্রীর সঙ্গে ঐ আত্মীয়তার সম্পর্ক নিয়ে সিভিল সার্ভিসে থাকার সময় আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, শেখ হাসিনার জনগণের প্রশ্ন: প্রধানমন্ত্রীর উত্তর অনুষ্ঠান উপস্থাপনার আগে। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, জাতীয় নেতা কামরুজ্জামানের সঙ্গেও আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে আমার। ফলে বেশ কৌতুকপ্রদ পরিস্থিতি তৈরি হয়। বাংলাদেশ আয়তনে ক্ষুদ্র দেশ, এখানে আত্মীয়ের সম্পর্ক খুব স্বাভাবিক। তার ভিত্তিতে কাউকে কোন দলীয় তকমা দেয়া অবাস্তব।

বঙ্গবন্ধু ও জিয়া রাজনীতিতে এমন মানুষদের আমন্ত্রণ জানাতেন, যারা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ান। রাষ্ট্রীয় সম্পদ যে লুণ্ঠন করা যায় এ তাদের কল্পনায়ও ছিলো না।  অবশ্য কামরুজ্জামানের পরের প্রজন্ম এই সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমরান আলী সরকার এইজন্য বুদ্ধি করে নিজের ছেলে-মেয়েকে রাজনীতিতে আসতে দেননি। কামরুজ্জামান জেল হত্যায় নিহত না হলে, তিনিও খুব সম্ভব তাই করতেন।

এই আলোচনাটুকু করা এই জন্য যে জিয়া যাদের রাজনীতিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তারা মাসলোর হায়ারার্কি অফ নিড অর্জন করে দেশসেবার জন্য প্রস্তুত মানুষেরা। এ কারণে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্ব ছিলো অপেক্ষাকৃত সৎ, শিক্ষানুরাগী, দেশের জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যয়ে ঋজু। প্রজন্মের পালাবদলে আত্মকেন্দ্রিক, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জমিদার হতে চাওয়া, কর্কশ আচরণের দাম্ভিক লোকজনের আনাগোণা দেখলাম আমরা ২০০১-০৬ বিএনপি আমলে। ২০০৯-২৪ সময়কালে আওয়ামী লীগে আমরা ভুঁইফোড়, অশালীন, নতুন বড় লোক, নৃশংস সব লোকের দেখা পেয়েছি।

২০০৮ পর্যন্ত যারা আওয়ামী লীগের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, ২০০৯ সালে দলটি ক্ষমতায় আসার পর তাদের ক্ষমতা কাঠামোতে খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোত্থেকে কোলাবরেটর ডিএনএ-র লোকেরা লীগের নৌকায় উঠে জনগণকে ধমকা ধমকি করতে শুরু করেছিলো। একইভাবে ২০২৪ এর ৫ অগাস্টের আগে বিএনপির জন্য যারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, তদেরকে পিছে ফেলে কোত্থেকে যেন কাঁকন দাসী ডিএনএ-র লোকজন এসে কাজল রেখার কৃতিত্ব নিতে চেষ্টা করছে।

আওয়ামী লীগ ঐ কোলাবরেটরদের কারণে স্বদেশের মানুষের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যাওয়া খুনে হিসেবে দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। বিএনপিকে তাই প্রথম থেকেই সাবধান থাকতে হবে। আওয়ামী লীগের সিপি গ্যাং, আরাফাত, অপু উকিল, শিয়াল-ঝুম ঝুম-ভটভটিদের মতো নিম্নরুচি  ও ভাষারীতির টু পয়েন্ট ও'রা বিএনপির পক্ষে গলাবাজি করতে গালাগালের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছে।

বিএনপিকে তার নেতা কর্মী নির্বাচনের ক্ষেত্রে জিয়ার মতো সৎ, কথা বার্তায় অত্যন্ত পরিশীলিত শিক্ষা-সংস্কৃতি অনুরাগী আধুনিক মানুষকে সামনে রাখতে হবে। জিয়ার মতো জনদরদী অভিজাত মানুষ না হলে সে  বিএনপিতে বেমানান।

 

২৮১ পঠিত ... ১৬:০০, মে ৩১, ২০২৫

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top