বাবুর যে জবাব শুনে আমাদের চোয়াল ঝুলে গেল

১২৬৬৫ পঠিত ... ১৩:১৫, এপ্রিল ২৩, ২০১৭

আমাদের বন্ধু বাবু, ভালবাসতো আমাদেরই আরেক বন্ধু মিতুকে। কিন্তু বাবু কোনভাবেই ওর পছন্দের কথাটি প্রকাশ করতে পারছিল না। কি জানি মিতু কীভাবে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে, নাকি বাতিলই করে দেয়?

মিতু ধনী পরিবারের আদরের কন্যা। সেসময়, মানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমাদের হাতে যদি ১০ টাকা থাকতো, মিতুর হাতে থাকতো ১০০ টাকা। গাড়িতে করে ইউনিভার্সিটিতে আসতো ও। ওদের পরিবারের সবার কথাবার্তা, কাজকর্ম, আদর-আপ্যায়ন দেখে মনে হতো, বুঝি কোন হিন্দি ছবির চরিত্র ওরা। 


শুধু কী তাই? মিতু ছিল খুবই সুশীল টাইপের। ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতো। আচার-আচরণ পরিপাটি। মোটামুটি টাইপেরও অশ্লীল কথা শুনতো না, বুঝতো না, আর বলতোতো নাই-ই। জোকস বলেও ওকে বুঝিয়ে দিতে হতো।

আমাদের এই গ্রুপটির মধ্যে সম্পর্কটা এতই ভাল ও সহজ ছিল যে বাবু ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না, মিতুকে বন্ধুত্বের এই গন্ডি কাটিয়ে কীভাবে, কোন অবস্থায় বা কোন সুযোগে ওর ভালবাসার কথাটি বলবে। এইসব নানা চিন্তায় আমাদের বন্ধুর ছাত্রজীবনের ২/৩ বছর পার হয়ে যেতে বসলো।

অগত্যা আমরাই উদ্যোগী হয়ে উঠলাম। নাহ, একটা পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে বাবুকে, যাতে ও ঝোপ বুঝে কোপ মারতে পারে, মানে পট করে মিতুকে 'ভালবাসি' কথাটি বলে দিতে পারে। তাই আমরা ঠিক করলাম মিতুকে রাজি করিয়ে কয়েকজন মিলে ক্লাসের পরে সদরঘাট যাবো এবং বুড়িগঙ্গায় নৌভ্রমণ করবো। মিতু সাধারণত আমাদের সাথে পাড়া বেড়ায় না। চট করে এখানে-ওখানে বেড়াতেও যায় না। ওর বাসায় বলে-কয়ে বেশ পদ্ধতিগতভাবেই ওকে নিতে হবে। যেহেতু ওর বাসায় আমার একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল, তাই আমাকেই ওর পরিবারের অনুমতি নিতে হল।

আনলাম অনুমতি। বন্ধুর জন্য এটাতো করতেই হবে। বাবুকে আমরা বারবার করে বলে দিলাম, 'তুই কিন্তু এবারেই বলে ফেলবি। ইতস্তত করবি না । বহু কষ্টে এভাবে মিতুকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছি।' এও বললাম, 'তোকে আর মিতুকে এক রিকশায় চড়িয়ে দিবো। ও যদি তোর সাথে রিকশায় উঠতে আপত্তি করে, তাহলে বুঝে নিতে হবে ব্যাপারটা হবে না। আর যদি চড়ে, তাহলে কিন্তু আশা আছে। অনেকটা পথ। যেতে যেতে ওকে বলে দিস প্লিজ। আমাদের মনে হচ্ছে ও তোকে বেশ পছন্দ করে। কাজেই ভয় কী?

যাই হোক, মিতু আর বাবুকে এক রিকশায় চড়িয়ে দিলাম। আমরাও সাথে সাথে গেলাম। সদরঘাটে পৌঁছে দেথলাম মিতু এক পাশে বেশ বিপর্যস্ত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও রাগে গণগণ করছে। আমি গিয়ে ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলাম, কি হইছে? এত রাগ হইছো কেন? বাবু কি কিছু বলছে?

ও রাগী রাগী স্বরে বলল, 'বাবু একটা অসভ্য, ইডিয়েট। ওর সাথে রিকশায় চড়লাম কেন? ওকেই জিজ্ঞাসা কর, ও কী করেছে, আমি বলতে পারবো না।' আমরা আসলেই চিন্তিত হয়ে পড়লাম। বাবু করলোটা কী মিতুর সাথে, যাতে মিতু এতটা ক্ষেপে গেছে? কিন্তু বাবুতো দুষ্টু ছেলে না। তেমন কিছু করা ওর পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে?

বাবুকে একপাশে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, 'কিরে, কী করছিস মিতুর সাথে? জড়ায়-টড়ায় ধরছিলি নাকি, নাকি অন্যকিছু করছিস?' ও বলল না সেসব কিছু না। তাহলে ও এত ক্ষেপে গেছে কেন তোর ওপর?’

'সেসব কিছু না' বলে বাবু আমতা আমতা করে আমাদের যা উত্তর দিলো, তা শুনে আমরাও হতভম্ব ! হাসবো না কাঁদবো ঠিক বুঝতে পাছিলাম না। বাবু বলল, ও নাকি পথে রিকশা থামিয়ে, মিতুকে বসিয়ে রেখে মূত্রত্যাগ করতে নেমেছিল। ওকে কাজটা করতে দেখে উত্সাহী হয়ে রিকশাওয়ালাও এই কাজটি করেছিল।

আমাদের কথা বন্ধ হয়ে গেল, চোখ গোলগোল হয়ে গেল, চোয়ালটাও ঈষৎ ঝুলে গেল। আমরা ভাবতেই পারছিলাম না কোন মেয়েকে, তাও আবার এমন সুশীল একটি মেয়েকে প্রপোজ করার উদ্দেশ্য রিকশা ভ্রমণ করতে করতে, একজন যুবক রিকশা থামিয়ে রাস্তার পাশে মূত্র ত্যাগ করতে পারে। আবার নাকি রিকশাওয়ালাও ওর সঙ্গী হয়েছিল। ব্যাপারটা ভাবা যায়? মিতু যে রাগে গরগর করছিল, সেটাই স্বাভাবিক।

স্বভাবতই আমাদের এই উদ্যোগ সেবার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল। মানে ওদের প্রেমটাও হয়নি, আর আমাদের নৌভ্রমণটিও হয়নি। পরে বহুবার ভেবেছি বাবুর একটা কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত ছিল আমাদের এই উদ্যোগ পন্ড করার দায়ে। কিন্তু কেন জানি ওকে শাস্তিটা আর দেয়া হয়নি।

পুনশ্চ: (বাবু ও মিতু দু’টি ছদ্মনাম। ওরা এখনও আমাদের বন্ধু এবং দু’জনেই পাকা সংসারী। বিধায় নাম পাল্টাতে হল।)

১২৬৬৫ পঠিত ... ১৩:১৫, এপ্রিল ২৩, ২০১৭

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top