হিমুর হাতে মনোনয়ন

২৩৪৮ পঠিত ... ১৫:৩৭, নভেম্বর ১৩, ২০১৮

হিমুকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে হাজার তিরিশেক টাকা দিলেন মাজেদা খালা।

হিমু খালার দিকে তাকিয়ে বলল, ঘরে তো কেউ নেই। আবার আড়ালে যেতে হবে কেনো?

মাজেদা খালা বললেন, সতর্কতা বলে একটা বিষয় আছে। তুই বুঝবি না। এখন যা বলি শোন, যা একটা মনোনয়ন পত্র কিনে ফেল। তোর মতো ভবঘুরেকে তো কেউ ভোট দিবেনা জানি, তবুও একটা শখ পূরণ কর।

 

হিমু খালার দিকে নিস্প্রাণভাবে তাকিয়ে জানতে চাইলো, আমি কী তোমাকে বলেছি আমার এমন শখ আছে?

মাজেদা খালা রেগে গেলো, তোর শখের কথা কে বললো? আমার শখ পূরণের জন্য দিয়েছি। আমি তোর মাকে কথা দিয়েছিলাম, তোর জন্য বড় কিছু করবো।

হিমু টাকা হাতে নিয়ে গুনলো। মাজেদা খালার দিকে তাকিয়ে বলল, পাঁচশ কম আছে। মনোনয়ন পত্র দিবেনা। সেখানেতো ডিসকাউন্ট সিস্টেম নাই।

 

মাজেদা খালা দৌড়ে ভেতরে গেলো। যে গতিতে গেলো, সেই গতিতে ফিরে এসে

আরও পাঁচশ টাকা হাতে গুজে দিয়ে বলল, নে। যা দ্রুত। তোর খালুর টাকা। এসে দেখলে বিপদে পড়ে যাবো।

 

হিমু নড়লো না।

খালা বলল, যা।

আমার কাছে যাওয়ার ভাড়া নাই।

ওরে ফকির রে। এমন মানুষ দেখি নাই।

মাজেদা খালা আবারও আগের মতো দৌড়ে ভেতরে গেলো, এবং একই গতিতে ফিরে এলো, নে আরও দেড় হাজার। যা ভাগ। তোর খালু টাকা গুণে রাখে। এতো ‍গুলো টাকা সরিয়েছি, ধরা না পড়লেই হয়।

হিমু জানতে চাইলো, কোন আসনে কিনবো?

আরে গ্রামের বাড়ীর আসনেই কিনবি। আবার কোন আসন। খালা বিরক্ত হয়ে গেলো।

 

হিমু টাকা নিয়ে বের হয়ে গেলো।

রুপার বাসায় যাবার জন্য রিকশা নিলো। রুপাকে নিয়ে এইচটুও রেস্টুরেন্টে খেতে যাবে। রুপা নাকি টিভিতে খুব নাম শুনেছে।

রিকশাওয়ালা বলল, এতো দূর, বাসে চলে যান পনেরো টাকা লাগবে।

হিমু বলল, দেড়শ টাকা দিবো যাবি?

রিকশাওয়ালা বলল, তাহলে আর বিশ টাকা বাড়াইয়া দিয়েন।

হিমু বলল, দুশো দেবো। টাকা ভাঙানোর সময় নেই। যা।

 

রিকশাওয়ালা কিছু দূর আসতেই পুলিশ আটকালো।

পকেট চেক করে অনেকগুলো টাকা পেয়ে তাদের সন্দেহ আরও বাড়লো। মুখের কাছে নাক নিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো, মদ্যপায়ী নাকি?

সেরকম কিছু না পেয়ে জানতে চাইলো, এতো টাকা কোথায় পেয়েছেন?

পেয়েছি কোথাও। আমাদেরই।

চাপা মারেন মিয়া। পায়ে স্যান্ডেল নাই। পকেটে টাকার বান্ডেল নিয়ে ঘোরেন? পুলিশের একজন রেগে গেলো।

হিমু কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় পকেটে ফোন বেজে উঠলো।

পুলিশ ইশারা করলো ধরেন, লাউড স্পিকার দেন।

 

ফোন রিসিভ করে লাউড স্পিকার দিতেই ওপাশে মাজেদা খালা চিৎকার করে ওঠলো, বাবা হিমু, তুই গ্রামের বাড়ীর এলাকার মনোনয়ন পত্র কিনিস না। তোর খালুও ওই এলাকার মনোনয়ন পত্র কিনে এনেছে। পত্রিকাতে নাম দেখলে বুঝে ফেলবে আমি টাকা দিয়েছি।

হিমু কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো।

 

পুলিশ দুজন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।

তাদের একজন হাত দিয়ে ইশারা করলো, চলে যান।

হিমু রিকশায় আর উঠলো না, রিকশাওয়ালাকে ৫শ টাকার একটা নোট দিয়ে হাঁটতে শুরু করলো 

পুলিশ দুজনের ঘোর এখনও কাটেনি।

হিমু একটু দূরে যেতেই একজন পুলিশ আরেকজনকে বলল, কী মাটির মানুষ দেখেছেন? রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে অথচ পায়ে স্যান্ডেল নেই। চলাফেরা করছে রিকশায়। এমন মানুষইতো আমরা সংসদে চাই। আমরা চাই, এমন মানুষেরাই মনোনয়ন পত্র কিনুক বেশি বেশি করে...!

২৩৪৮ পঠিত ... ১৫:৩৭, নভেম্বর ১৩, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top