বদি আলম যেভাবে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করিল

১৪৭২ পঠিত ... ১৮:৩৮, নভেম্বর ১২, ২০১৮

বদি আলমের গাল লাল।

না, বদি আলম সিনেমার নায়কের মতন টুকটুকে ফর্সা লোক না। তার গাল লাল জন্মগত প্রাপ্তি না।

গাঢ় বাদামী চামড়ার বদি আলমের বাম গালে ছাকড়া ছাকড়া লালচে দাগটা কিছুক্ষন আগে তৈরি।

শুধু যে গালে লাল লাল দাগ হয়েছে তা না, বদি আলমের বাম কানেও কিছুক্ষন আগে থেকে চিঁইইইইইইই করে একটানা মৃদু শব্দ হচ্ছে। চোখে পানিও আসছে। ৪২ বছরের আধবুড়া ব্যাটার চোখে পানি দেখতে কিছুটা কৌতুকের মত, বিশেষ করে যদি চোখের পানির সাথে মুখে বেদনাদায়ক অভিব্যক্তি না থাকে। বদি আলমের মুখে বেদনার অভিব্যক্তি নাই। তীব্র ঘৃণা আর হতাশার একটা মিশ্রণ পাওয়া যেতে পারে তার চেহারায়। 

ঘটনা ঘটেছে তিন মিনিট ও হয় নাই।

বদি আলম রিকশা ভ্যান নিয়ে কাওরান বাজার থেকে পান্থপথ যাচ্ছিল।

মাসের প্রায় মাঝামাঝির দিকে রিকশা ভ্যানের খ্যাপ কম। তাও সকাল সকাল বদি আলম কাওরান বাজারে এসে বসেছিল। আধঘন্টা আগে বদি আলমের বউ ফোন করেছিল। বাড়িতে ফিরে যাবার জন্য বললো, বদি আলমের মায়ের শ্বাসের টান উঠেছে। ভ্যান নিয়ে মোহাম্মদপুরের দিকে বদি আলম রওনা দিয়েই টের পেল, আজকে রাস্তায় বিশাল ভিড়। গাড়ি ঘোড়া নড়ছে কম। একেক সিগনালে অনেক্ষন করে দাঁড়ায়ে দাঁড়ায়ে বদি আলমের ধৈর্য্যের বাঁধ ছুটে যাচ্ছিল। কিন্তু এই শহরে পথের দেরি নিয়ে অনুযোগ করার ক্ষমতা সবার মতো বদি আলমেরও কমে গেছে। তাই মাথার উপর ধাই ধাই করে চড়তে থাকা রোদের নিচে বদি আলম সিগনালে অপেক্ষা করে আর কিছুক্ষন পর পর বউ সুফিয়াকে ফোন করে,

- অহন কেমন রে!

- আগের মতুন, দম নিতারেনা, পিঠ বেকা অইয়া উঁচা কইরা লায়।

- পানি দিছসনি মুহে?

- পানি লইতারে না তো, চামিচে কইরা দিছিলাম কদ্দুর গাল বাইয়া ফইড়া যায়।

- মাঝে মাঝে এট্টু এট্টু ফানি দে, আর আল্লাহ আল্লাহ কর, আমি আইতাসি।

- জলদি আহো না চাই, আমারতো ভালা ঠেকে না।

- আরে *নকি মাতারী, আমি কি উইড়া আইয়াম? রাস্তাত জাম আছেনা?

- আমার লগে না চিল্লাইয়া ফ্যাডেল মাইরা তাড়াতাড়ি আহো।

ফোন কেটে বদি আলম নিচের ঠোট কামড়ে ধরে, মাথা চুলকাচ্ছিল কিছুক্ষন।

প্রতিটা সেকেন্ড তার বুকে বাড়ি মারতেসে।

মা'র চিকিৎসা খুব যে করতে পারতেসে বদি আলম এমন না। বসিলা ব্রিজের ওইপাড়ে, সুখি জীবন ক্লিনিকের ডাক্তার এর দেয়া ওষুধপত্রই যতটা পারে এনে মা'কে খাওয়ায় সে।

এমন শ্বাসকষ্টে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়, বদি আলম এর তাই তর সয় না।

প্রায় ১৭ মিনিট আটকে থাকা সিগনাল যখন ছাড়ে, বদি আলম প্রাণপণ শক্তিতে প্যাডেল মেরে উড়ে বের হতে চায়। চিরাচরিত গাড়ির ভিড় ছাড়াও আজকে রাস্তায় মৌসুমী গাড়ি, মটর সাইকেল আর মাইক্রোবাসের ভিড়। চলমান এই পরিবহনের মিছিলে সব কেমন জানি অতি উল্লাসিত সুখি সুখি চেহারা। যেন সবাই মিলে খুব মজা করতে পিকনিকে যাচ্ছে।রাস্তার বাম পাশ চাপায়ে বদি আলম তার ভ্যান নিয়ে দ্রুত আগানোর চেষ্টা করে। অন্যসময় হলে এই বাম পাশের চিপা অংশটুকু দিয়েই সে অনেক খানি আগায়ে যেতে পারতো। আজকে গাড়ির বেদম চাপ, মাইক্রোবাসগুলাও কেমন জানি বামে চেপে চলতেসে। পাশ দিয়ে কেটে কেটে বের হতে যাওয়া মটর সাইকেলগুলাকে ২-৩ জন করে আরোহী। তারা বেশ হল্লাফাল্লা করে আগাচ্ছে আর ধমকে ধমকে বামে চাপতে বলছে অথবা থামতে বলছে। বদি আলম ধৈর্য্য আটকে রাখতে না পেরে এক পর্যায়ে বলে বসে--

- খালি আমনেরাই যাইতেন, আমরা চলতাম না? রাস্তা কিন্নালছেন?

- কি কইলি *নকির পোলা?

পাশ থেকে আগানো একটা মটর সাইকেলের মাঝখানে বসা ষন্ডামার্কা যুবক চোখ গরম করে বলে।

বদি প্রথমে বুঝতে পারে নাই, আশেপাশের সব মটর সাইকেল আর গাড়ি মিলে একটাই বহর, তাই একজনকে বলা কথার জবাব অন্য একজন দিচ্ছে।

না বুঝেই বদি বলে,

- আমনে মুক লাড়েন ক্যা? আমনেরে কইসি?

মটর বাইক থেকে টপকে নেমে সেই যুবক এক থাবড়া দেয় বদির গালে, ভ্যান কাত হয়ে হুড়মুড়ায়ে বদি পড়ে যায় রাস্তায়।

 

তিন মিনিট আগে খাওয়া সেই চড়ের পরে, বদি আলমের গাল লাল। চোখে পানি আর কানে চিঁইইইইইই হচ্ছে।

কাত হয়ে পড়ায়, ভ্যানের বাম পাশের চাক্কা টাল হয়ে গেছে। মাকে নিয়ে আর হাসপাতালে ছোটা হবে না হয়ত।

বদি আলম কাঁধের গামছা দিয়ে গলা ডলে।

পাশ দিয়ে যাওয়া মাইক্রোবাসের খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে বসা নাদুস নুদুস কেতাদুরস্ত নেতা বদি আলমের দিকে তাকায়ে হাত নাড়ে। রাস্তার শব্দের ভেতর দিয়েও বদি আলমের কানে আসে,

- দোয়া করবেন ভ্যানোয়ালা ভাই ।

বদি তাকায়ে দেখে, মোটাসোটা নেতার ফর্সা টকটকে লাল গাল।

গালের লালে কত ফারাক।

বদি পিচ করে থুথু ফেলে, কালো রাস্তায় তার রক্ত মাখা লাল থুথু আর লাল গালই হচ্ছে তার ভোটাধিকার।

১৪৭২ পঠিত ... ১৮:৩৮, নভেম্বর ১২, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top