শুভদের প্লট পাওয়া ও আমাদের বাহাস

৫৬৫ পঠিত ... ১৫:২৪, জানুয়ারি ০৫, ২০২৪

415945708_354041380583420_5909994130539932997_n

আরেফিন শুভর প্লট পাওয়া নিয়ে এত আলোচনা কেন হচ্ছে? এ নিয়ে দুপক্ষেরই বাহাস তিনদিন হয় ফেসবুকে দেখছি। একদল একজন শিল্পী প্লট নিলে সমস্যা কী; এই যুক্তি দিচ্ছেন, আরেক পক্ষ এর সমালোচনা করছেন।  

যারা শুভর প্লট পাওয়াকে সমস্যা হিসেবে দেখছেন না, কেন একজন শিল্পীর প্লট পাওয়া নিয়ে এত হাউকাউ হবে ভাবছেন, তারা মোটাদাগে শুভ বিষয়ে দুটো জিনিস ভুলে যাচ্ছেন।

২০২১ সালের ডিসেম্বরে পুলিশের অর্থায়নে নির্মিত 'মিশন এক্সট্রিম'-এর প্রিমিয়ারে আরেফিন শুভ কিছু অদ্ভুত কথা বলেছিলেন। বাণিজ্যিক ছবির প্রচারে তিনি আমাদের জাতীয়তাবাদের গিল্ট ট্র্যাপে ফেলতে চান। কোন ছবি দর্শক দেখবে, কোনটা দেখবে না সেটা দর্শকের বিষয়। ছবির প্রচারণাও ছবির পক্ষের লোকজন করতে পারেন কিন্তু তারা কোনো সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে দর্শকদের কোনো মোরাল অবলিগেশনে ফেলতে পারেন না। শুভ দেশমাতৃকা, একাত্তর টেনে সেই কাজটি করতে চেয়েছিলেন। একটা ইউটিউব ভিডিও মারফত আমরা দেখতে পাই তিনি বলছেন:   

‘যদি আপনি বাংলাদেশি হন, আপনার যদি সেভেন্টি ওয়ানের প্রতি কোনো ধরনের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং সেই ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা থাকে, আপনি যদি বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকেন, আপনার যদি ফিফটি টুর প্রতি কোনো রকমের অনুরাগ থাকে, সেই স্যাক্রিফাইসের জন্য আপনার বুকের ভেতরে কষ্ট থাকে এবং আপনি যদি একজন বাংলাদেশি হন এবং গর্ববোধ করেন তাহলে আপনি মিশন এক্সট্রিম দেখবেন।’

এই বক্তব্যের আগ পর্যন্ত শুভ নেটিজেনদের ট্রল রাডারে খুব একটা ছিলেন না। তিনি একজন নির্বিবাদী অভিনেতা হিসেবেই মিম টেমপ্লেটের বাইরে ছিলেন।  

পুরোপুরি আসেন বঙ্গবন্ধুর বায়োপিকের প্রচারণা-কৌশলের কারণে। এই সিনেমায় হয়তোবা বাকি সবাই-ই নিজেদের প্রাপ্য বুঝে নিয়েছেন একমাত্র শুভ ছাড়া। তিনি নিজের বা সিনেমার প্রচারণার কৌশল হিসেবে ১ টাকার একটা একটা চেক নিয়েছিলেন। শুধু তা-ই না, সেই চেকের ছবি তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারও করেছিলেন। সেলেব্রিটিদের প্রসঙ্গে আমরা আরেকেটি বিষয় প্রায়শ ভুলে যাই যে, সেলেব্রিটিদের সেলেবল অ্যাসেট কিন্তু পাবলিকের মনোযোগই। সেলেব্রিটির প্রতি, তার লাইফস্টাইলের প্রতি মানুষের গভীর আগ্রহ থাকে বলে, বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদেরকে অ্যাম্বাসেডর করে, বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে বিবেচনা করে। যখন আপনি স্বেচ্ছায় পাবলিকের মনোযোগ চাইবেন তখন পজিটিভের পাশাপাশি নেভেটিভ মনোযোগের জন্যও আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। 

১ টাকার চেক ধরনের স্ট্যান্ট দেখে দেখে বাংলাদেশের মানুষ এখন বেশ সন্দেহপ্রবণ হয়ে গেছে। তারা অনুমান করতে পেরেছিল, নিশ্চয়ই তার এই অর্থছাড় তার ভবিষ্যত অর্থলাভের জন্যই, এটা শুধুই বঙ্গবন্ধুর প্রতি নিখাদ ভালোবাসা নয়। কারণ এমনটাই এই দেশে হয়ে আসছে।

সেটা যখন মিলে গেল তখন সাধারণ মানুষকে আর ঠেকাবেন কীভাবে? লাখ লাখ টাকা পাচার হচ্ছে, ব্যাংক লুট করছে যে যেভাবে পারে, সেখানে শুভ একটা ভেন্ট হিসেবে আবির্ভূত হলো।  

দুর্নীতির এই দমবন্ধ পরিবেশে এমন দৃশ্যত নন-পলিটিক্যাল লোককে নিয়ে এতটুকু ক্ষোভ প্রকাশের সঙ্গে পুরো শিল্পীসমাজ বা ব্যক্তি শুভকে জড়িয়ে ফেলবেন না। সে এখানে একটা সিম্বল। এসব গুরুতর বিষয় নিয়ে মানুষকে এতটুকু অন্তত হাসিঠাট্টা করতে দেন। এতটুকুই তো সাধারণ মানুষের সম্বল আপাতত।

৫৬৫ পঠিত ... ১৫:২৪, জানুয়ারি ০৫, ২০২৪

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top