দু'টি পাতা একটি কুড়ি, শুনতে কি পাও আহাজারি?

৭০৫ পঠিত ... ১৫:০৯, আগস্ট ১৪, ২০২২

Duti-pata-ekti-kuri

চা শ্রমিকরা চা পাতার একটা ভর্তা খায়। কচি পাতাগুলো খুব কুচিকুচি করে তাতে পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, সেদ্ধ আলু আর চানাচুরকে সরিষার তেল দিয়ে মাখানো হয়। গরম ভাত অথবা রুটির সাথে খায় তারা। আমি খেয়েছি, খুব একটা সুস্বাদু কিছু না। অথচ তারা বলতে গেলে প্রতিবেলায় খায়। তবে প্রতিবেলায় মাখানোর জন্য সরিষার তেল আর চানাচুর পাওয়া যায় না। তবুও তারা খায় কারণ দুইশো টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগীর এই বেহেশতে তাদের একদিনের বেতন ১২০ টাকা। এক আঁটি শাক কিংবা এক কেজি সবজি কেনার চেয়ে চা পাতার ভর্তা দিয়ে দু'মুঠো ভাত খেয়ে ফেলাই তাদের জন্য সহজ।

ব্যাপারটা একদিনে ১২০ এরকমও না। মানে একজন চা শ্রমিক যদি দিনে ২৪ কেজি চা পাতা তুলতে পারে তাহলে সে পাবে ১২০ টাকা। বেশিরভাগ শ্রমিক ২৪ কেজি তুলতে পারেন না,  ১৪-১৫ কেজি তোলেন সর্বোচ্চ। আর একটু বয়স্ক যারা তাদের চা পাতা তোলার পরিমাণ আরও কম। ফলে তারা পুরো টাকাটা পান না।

এই অঞ্চলে চায়ের চেয়ে রোমাঞ্চকর জিনিস আর কী আছে? আমাদের প্রেম, আড্ডা, গল্প, গান, বিপ্লব, বিদ্রোহ কোনো কিছুই চা ছাড়া হয় না। বিজ্ঞাপন মারফত আমরা জানতে পারি কাপ শেষ হলেও রেশ রয়ে যায়, এক কাপ চায়ে তাজা হয়ে যাওয়া যায় নিমেষেই, এমনকি চায়ে চুমুক দিয়ে আমরা বদলে দিতে পারি পরিস্থিতি, প্রতিবাদ করতে পারি যে কোনো অন্যায়ের, পেয়ে যেতে পারি যুগান্তকারী আইডিয়া। কিন্তু বিজ্ঞাপনে চা শ্রমিকরা সারাজীবন ব্যাকগ্রাউন্ড প্রপস। দু’টি পাতা একটি কুড়ি তোলার সুন্দর দৃশ্যটি আমাদের কাছে আরও সুন্দর হয়ে ওঠে দারুণ সিনেমাটোগ্রাফিতে। আর আজকাল তো নগরীর অভিজাত চায়ের দোকানে এক কাপ চা বিক্রি হয় ১২০টাকায়। সে চায়েরও হয় ফুড রিভিউ। অথচ শ্রমিকদের ১২০ টাকার অসুন্দর জীবনের দৃশ্য সিনেমাটোগ্রাফিতেও আসে না, খবরেও খুব একটা পাওয়া যায় না। কারণ তারা চা পাতা ভর্তা খেয়েই কাটিয়ে দিচ্ছে বেহেশতি এই জীবন!

চা শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা পারিশ্রমিকের জন্য আন্দোলন করছে। তাদের আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন রইলো।

দুটি পাতা একটি কুড়ি

শুনতে কি পাও আহাজারি?

৭০৫ পঠিত ... ১৫:০৯, আগস্ট ১৪, ২০২২

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top