শহীদ আসাদ সম্পর্কে আপনি যা নাও জানতে পারেন

২২২৫ পঠিত ... ১৮:৪৫, জানুয়ারি ২০, ২০২১

কবি শামসুর রাহমানের অমর কবিতা “আসাদের শার্ট” এবং কবি হেলাল হাফিজ রচিত “নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়”, দু’টি কবিতারই মূল ব্যক্তিত্ব ছিলেন বাংলার ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানের মহানায়ক শহীদ আসাদকে। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি মেডিকেল কলেজের পাশে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদ। আর সেখানেই এক পুলিশ কর্মকর্তা খুব কাছে থেকে গুলি ছুঁড়ে আসাদকে হত্যা করে। আসাদের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়ায় সেদিন বিকালেই ঢাকার বুকে ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ জনগণের দুই মাইল লম্বা মিছিল বের হয়। 

আসাদের মৃত্যু ঊনসত্তরের গণআন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রুপদান করে দিয়েছিল। তাঁর মৃত্যুতে তিন দিনের শোক পালন শেষে ২৪ তারিখে মিছিল বের হয়। কিন্তু সে মিছিলে আবার গুলি ছোঁড়ার সাথে সাথে আইয়ুব খানও তার ক্ষমতার কফিনের শেষ পেরেকটা ঠুকে ফেলেন। জনগণ আইয়ুব এভিনিউ ও আইয়ুব গেইটের নাম থেকে আইয়ুবের নাম উৎকীর্ণ করে নামান্তরিত করেন ‘আসাদ এভিনিউ’ ও ‘আসাদ গেইট’ এ। পতন ঘটে আইয়ুব খানের। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন শুরু হয়। অন্যদিকে স্বৈরাচার শাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করে আশ্বাস দেন সত্তরের নির্বাচনের। 

প্রতিবছর ২০ জানুয়ারি সারাদেশে পালিত হয় শহীদ আসাদ দিবস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসাদ ছিলেন ইতিহাস বিভাগের ছাত্র। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যক হুমায়ুন আহমেদ-ও সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে অধ্যায়নরত ছিলেন। তিনি ‘৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রচনা করেন ‘মাতাল হাওয়া’ উপন্যাসটি। মাওলানা ভাসানী, শহীদ আসাদ সহ নানা ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লেখক নিজের কথা তুলে ধরেন। উপন্যাসটি উৎসর্গ করা হয়েছিল ‘৬৯ এর গণ অভ্যুত্থানের নায়ক আমানুল্লা মোহম্মদ আসাদুজ্জামান তথা শহীদ আসাদকেই। ‘মাতাল হাওয়া’ উপন্যাসে শহীদ আসাদকে নিয়ে হুমায়ুন আহমেদের কিছু টুকরো কথার অংশবিশেষ দেওয়া হল পাঠকদের জন্য। 



  • ‘...আসাদুজ্জামানকে প্রায়ই রসায়ন বিভাগের আশেপাশে শুকনা মুখে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যেত। রসায়ন বিভাগের একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে বেচারা অতি বিব্রত অবস্থায় ছিল। এই আসাদুজ্জামানের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে কবি শামসুর রাহমান তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘আসাদের শার্ট’ লেখেন। আইয়ুব গেটের নাম পাল্টে রাখা হয় আসাদ গেট। ’
  • ‘রায় পড়া হলো দুপুর একটায়। ঠিক একই সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ ইমার্জেন্সি গেটের সামনে আসাদুজ্জামানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পিস্তল দিয়ে খুব কাছ থেকে গুলি করে পুলিশের এক ডিএসপি, নাম বাহাউদ্দিন। ঊনসত্তরের উত্তাল গণ-আন্দোলন সেইদিনই শুরু। ঢাকা শহরের মানুষ তীব্র রোষে ফেটে পড়ে। শহর হয়ে যায় সমুদ্র, যে সমুদ্রে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ সুনামি।’
  • ‘কোন মৃত মানুষ মহান কোন আন্দোলন চালিয়ে নিতে পারেন না। একজন পেরেছিলেন। আমানুল্লা মোহম্মদ আসাদুজ্জামান। তার রক্তমাখা শার্ট ছিল ঊনসত্তরের গণ আন্দোলনের চালিকাশক্তি।’
  • ‘শহীদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে লাখো মানুষের মিছিল হলো রাজপথে। স্বত:স্ফূর্ত গণজাগরণ। পরের দিন দৈনিক আজাদ পত্রিকার হেডলাইনে লেখা হলো-‘মৃত্যুর জানাজা মোরা কিছুতেই করিব না পাঠ। জীবনের দাবি আজ এতই বিরাট। ’ রক্তমাখা শার্ট নিয়ে কবি শামসুর রাহমান তার বিখ্যাত কবিতা লিখলেন-আসাদের শার্ট। ‘গুচ্ছ গুচ্ছ রক্তকরবীর মতো কিংবা সূর্যাস্তের/জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট/ উড়ছে হাওয়ায় নীলিমায়।’
২২২৫ পঠিত ... ১৮:৪৫, জানুয়ারি ২০, ২০২১

আরও eআরকি

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

কৌতুক

রম্য

সঙবাদ

স্যাটায়ার


Top